মনে পড়ে মাকে
—–আলমগীর খোরশেদ
গ্রামেই জন্ম, বেড়ে উঠা, তাই
গৃহস্থ বাড়ির হাজার কাজ,
সময় দেবার ফুরসত ছিলোনা মায়ের
খাওয়ানো, গোছল কিংবা সাজ।
পিঁড়ি বেঁধে দড়িতে লিচুগাছে
দোলনা বানিয়ে খেতাম দোল,
পুকুরে মাছ ধুইতে এসে মা
কাছে এসে বলতেন, আদরবোল।
গোলা ঘরে বাঁক দিতো মোরগ
উঠতেন মা ভোরে,
বলতেন ডেকে, ” পড়তে বস, যাই
নামাজটা আসি পড়ে।”
মটকিলা গাছের ডাল চিবিয়ে
মাজতাম ভোরে দাঁত,
কাছারি ঘরে লজিং মাষ্টার
পড়াশুনা তাঁরি সাথ।
কামলা থাকতো কাজের
বছরী মুনি মাঠে,
নাস্তা নিতে জগ,কাদি
পড়তো আমার ভাঁটে।
শতোভুলেও সুরক্ষা দিয়ে
দোষ কাটানোর যুক্তি,
কোনদিন বকেননি, করেননি রাগ
দিয়েছেন শুধু মুক্তি।
হাইস্কুলে প্রিটেষ্ট দেবার আগে
পড়ি টাইফয়েড জ্বরে,
আঠারো দিন বিছানায়
রইযে কষ্ট করে।
কবিরাজি চিকিৎসা
কলসি ফুটো, সলতে বেয়ে,
কপালে পড়তো টপটপ পানি
বমি, অরুচি, সাবু দানা খেয়ে।
রাতে শিয়রের কাছে
মায়ের সুর করে কোরআন পড়া,
শুনে যেতাম চুপটি করে
চোখে জলের ধারা।
কেমন আছে বন্ধুরা সব
দেখিনা কতোদিন হলো,
কষ্টজীবন, উচাটন মন
দুঃখই শুধু পেলো।
লেখাপড়ায় পিছনে পড়া
ডিঙিয়ে সবাই যাবে,
ন্যারেশান, ভয়েস, টেন্স, ভাওয়ায়েল
গণিত কেমনে হবে?
শহরে পড়তে গিয়ে
প্রথম মাকে ছাড়া,
শুক্রবার হলেই বাড়ি আসা
মন যে পাগলপারা।
” ঠিকমতো খাসনা, শুকায়া গেচোস
কি খাইবি বল বাবা,
শুটকি বেগুন, মুরগী কসানো
পিঠা রেখেছি “ডুবা”।”
ছিলোনা রোজগার, বাবার বকুনি
” তোমার ছেলে, অকর্মার ঢেঁকি,
আমার প্রপার্টি দেখাশুনা করুক
চাকরি গুড়েবালি, মেকি।”
মা বলতেন, ” শুনিসনা বাবার কথা
টাউনো গিয়া চেষ্টা কর,
নিজের পায়ো দাঁড়া বাবা
একটু ধৈর্য ধর।”
চাউল বিক্রির সামান্য টাকা
দশ বারো যা হবে,
আঁচলের গুঁট খুলে বলতেন মা
” নে, পথো কিছু কিনে খাবে।”
কেমন বলি দশ বারো টাকায়
কিছুই যায়না কেনা,
টাকার চেয়ে ভালোবাসা বড়
স্নেহ, রক্তের দেনা।
বিশ বছর পেরিয়ে গেলো
মা আকাশের তারা,
সবার ছোট, অবহেলার আমি
হলাম আশ্রয় হারা।
ডাকেনা কেউ আদর করে
মায়ের আঁচল নেই,
ঈদ পাবনে কতো ছুটি যায়
হারাই সুখের খেই।
আকাশ জুড়ে মায়ের চাহনী
মন খারাপের সাথী,
একলা চেয়ে মাকে খুঁজি
ভোর হয়ে যায় রাতি।
নিরব রাতে তাকিয়ে থাকে
দূর আকাশের তারা,
কেউ ফিরেনা কোনদিন
হারিয়ে যায় যারা।…………..
Leave a Reply