দর্শনের দিন শেষ , বিজ্ঞানের বাংলাদেশ – হাসনাইন সাজ্জাদী

রিপোর্টারের নাম / ১৯৪৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩০ মে, ২০২১
দর্শনের দিন শেষ

দর্শনের দিন শেষ, বিজ্ঞানের বাংলাদেশ
হাসনাইন সাজ্জাদী

আগেকার দিনে বিজ্ঞান ছিল সুপ্ত।আর দর্শন ছিল জ্যান্ত । সভ্যতার অগ্রযাত্রায় কোন নির্দেশনা ছিল না যতদিন না দর্শন এসেছে । মনীষীরা দর্শন দিয়ে সভ্যতাকে রাখতেন প্রাণবন্ত ও প্রদর্শন করতেন আলোকরশ্মি।


দর্শন ছিল বুদ্ধি ও যৌক্তিক আলোচনা,পথ নির্দেশনা এবং সমাধান । কেউ মানুক না মানুক দর্শন এক সময় পুরো জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।এমনকি ধর্মের উপরও দর্শন দখল নেয় এবংআরব ইরানে দার্শনিক তৈরি হয়।লেখা হয় ‘মিজান মান্তিক’ (দর্শনের মানদণ্ড) সহ অনেক গ্রন্থ । শেখ সাদী তখন ছোটো।ইরানের মাদ্রাসায় মোল্লারা হামলা করে দার্শনিক মৌলভীদের নির্বিচারে হত্যা করে।

তার আগে কোরআনের কিছু বাণীকে মুসলিম দার্শনিকরা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন এভাবে;


কোরআনে আছে ‘অয়া মা খালাক্বতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লি ইয়া’বুদুন।অর্থ হলো জিন ও মানুষকে তৈরি করা হয়নি,হয়েছে ইবাদত করার জন্য।’অর্থাৎ মানুষ ও জিনকে আল্লাহর এবাদতির জন্য তৈরি করা হয়েছে।(আল কোরআন)।

দার্শনিক প্রশ্ন উত্থাপিত হল-কেউ যদি তার স্বার্থে কোনো কিছু তৈরি করে এবং সে বস্তু যদি কাঙ্ক্ষিত সেবা তাকে না দেয় তবে তিনি তার উপর প্রতিশোধ নিতে পারবেন? পারবেন না।দার্শনিক মতবাদ অনুযায়ী মানুষ আল্লাহর এবাদতি করতে বাধ্য নয়।


মুসলিম দার্শনিকগন তখন পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিলেন,বল্লেন-এর অর্থ করতে হবে ‘জিন ও মানুষকে আল্লাহ তৈরি করেছেন,যদি তারা ভাল মনে করে তবে তার এবাদতি করবে।’


এখন মানুষ ভালো মনে না করলে এবাদতি করবে না এবং তিনি এ জন্য শাস্তি দেবেন।হাদিসে আছে-‘ মানুষ যত ভাল কাজই করুক তাকে তার কর্ম কোন সাহায্য করবে না।আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তাই হবে।মৃত্যুকালে সে আল্লাহর লেখা অনুযায়ী কর্ম করবে।’


তবে আর এবাদতি কেন? ভোগবাদী জীবনই ভালো।দার্শনিক প্রশ্ন। তার দার্শনিক উত্তর; আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন বাধা নেই।নির্দেশ দিয়েছেন তাই আমরা তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবো।

হতে পারে তার নির্দেশ মানাতেই আমাদের জন্য তিনি ফলাফল লিখে রেখেছেন।দর্শনে আছে-‘ আল ইনসানু হায়ওয়ানুন।মানুষ পশুর মতই জন্তু । তবে তারা হায়ওয়ানে নাতিক।মানে বুদ্ধিমান জন্তু।অন্যান্য পশুরা হলো ‘গয়ের নাতিক’বা বুদ্ধিহীন প্রাণী।এটাই পার্থক্য।


দার্শনিক এরিস্টটল,সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও কান্টের কথা আমরা কে না জানি?তাদের দর্শন সারা পৃথিবী জুড়ে খ্যাত।কিন্তু আজ বিজ্ঞান এসে তাদের দর্শনকে ভুল প্রমাণ করেছে।

[  মহাবিশ্ব পদার্থ বিদ্যার সূত্র মেনে চলেছে – এনামুল হক  ]


বিজ্ঞান কিছু নির্ধারিত সুত্র দিয়ে গবেষণা করে।ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভুল হয়।বিজ্ঞানের আবিস্কারকে মানুষ মানব কল্যাণ অকল্যাণ দুভাবেই ব্যবহার করে।কিন্তু বিজ্ঞান ছাড়া মানুষ অচল।দার্শনিক বাক্য মানুষের আজকাল খুব একটা কাজে আসে না।আমি দর্শনের গোড়ায় চর্চা করে দেখেছি এবং আমার দার্শনিক বন্ধু আবু মহি মুসার কিছু বই ও কিছু বক্তৃতা শুনেছি।


আমার ‘বিজ্ঞান কবিতার রূপরেখা’ও তাকে পড়তে দিয়েছি।তার কথা শুনে ও বই পড়ে মনে হয়েছে এত কথার কোনো আবশ্যিকতা এ বিজ্ঞান যুগে নেই।কিন্তু চর্চা করা তার অধিকার এবং এ দর্শন দর্শন করে তিনি সি আই ডি থেকে চাকরি ইস্তফা দিয়েছেন।তাই তার আবেগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি এ বিষয়ে কথা বলি না।


কিন্তু সম্প্রতি এক লেখায় তিনি বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংকে আক্রমণ করার পর মনে হয়েছে তার ভুল ভাঙানো দরকার।তাই আমি কিছু কথা বলার প্রয়োজন থেকে তাকে দর্শন এবং বিজ্ঞানের সংজ্ঞা জানিয়ে বলেছি এখন দর্শনের দিন শেষ।তার কিছু ফেসবুক ধারাবাহিক পড়ে মনে হয়েছে বিজ্ঞান যুগে আসলেও এত প্যাঁচ করতে নেই।এখন অর্থভিত্তিক সমাজ।তাকে বিজ্ঞানভিত্তিক করতে হবে।

জ্ঞানভিত্তিক করতে হবে । দর্শনের প্যাঁচাল এখন অপ্রয়োজন । তাই আমি তাকে দর্শনের পরিবর্তে বিজ্ঞানের চর্চা করতে আহ্বান জানিয়েছি । জানি এতদিনের অভ্যাস তিনি ছাড়তে পারবেন না।অনবরত প্যাঁচালই পাড়বেন।

কিন্তু একটি কথা তার বুঝতে বাকি নেই যে তিনি ভুলের মধ্যে রয়েছেন এবং বিজ্ঞানকাব্যতত্ত্ব,বিজ্ঞানবাদ রাষ্ট্রদর্শন,বিজ্ঞানশিল্পতত্ত্ব ইত্যাদি এখন খুবই দরকারি যা আমি উপস্থাপন করেছি।

লক্ষ্য বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাই এ লেখার শিরোনাম যথার্থ-‘দর্শনের দিন শেষ,বিজ্ঞানের বাংলাদেশ’।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD