মহাবিশ্ব পদার্থ বিদ্যার সূত্র মেনে চলেছে – এনামুল হক

রিপোর্টারের নাম / ১৭৭১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১
মহাবিশ্ব

 

মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য নিয়ে আলোচনা। মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য নিয়ে নানা মত রয়েছে।প্রাচীন ধারণায় এক এবং লোকসাহিত্যে আরেক।ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে ভিন্ন ভিন্ন মত।তবে সাম্প্রতিক বিজ্ঞান বলছে অন্যভাবে।এবং তাকে গবেষণাগারে তৈরি করে দেখিয়েও দিয়েছে।এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং….

একবার নাকি স্টিফেন হকিংকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন,

  • আপনি কী মনে করেন, ঈশ্বর নেই ?

জবাবে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন,

  • থাকতে পারেন ; তবে এই মহাজগতের কোন কিছুতেই তিনি হস্তক্ষেপ করেন না ।

অর্থাৎ, হকিং বলতে চাইছেন- এই মহাবিশ্ব পদার্থ বিদ্যার সূত্র মেনে চলছে ; ঈশ্বরের ইশারায় কিছুই চলছে না । অথচ মানুষ নিজের বিশ্বাসের কারণেই আকাশ থেকে একটু বৃষ্টি পড়লেই, জোরে একটু বাতাস হলেই ধরে নেয় এই সবই ঈশ্বরের হুকুমেই হচ্ছে ।

এদের বেশিরভাগই ভাগই জানেন না- বৃষ্টি, বজ্রপাত, জোয়ার-ভাটা, ঝড়-তুফান, পাহাড়-ভূমিধ্বস, সুনামী-অগ্ন্যুৎপাত-ভুমিকম্প এগুলো কেন হয় ? কি কারণে হয় ? তারা দেখছে, এগুলো হচ্ছে আর তা ঈশ্বরের নির্দেশেই হচ্ছে এতটুকুই জানে ।

এরা যদি মহাবিশ্বে এসবের কারণ অনুসন্ধান করে, আসলে ওসবের পিছনে কোন অদৃশ্য সত্তা কাজ করছে কিনা তাহলে তার কোন উপযুক্ত প্রমাণই ওরা দেখাতে পারবে না ।

আমি উপরে সেসব প্রাকৃতিক বিষয়ের কথাগুলো উল্লেখ করেছি, এই বিষয়গুলো যে কেউ জেনে নিতে পারেন । জানার পর আমাকে এসে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে বলতেও পারেন- না, আপনি ভুল বলেছেন ।


আমি আমার ভুল অকপটে স্বীকার করে নেব । তবে এমন প্রমাণ কখনই গ্রহণ যোগ্য নয় । আপনি যদি বলেন- মানলাম, পানি জলীয় বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে গিয়ে ঘনীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেখান থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়লেই আমরা তাকে বৃষ্টি বলি ; তো এই বৃষ্টির পানিটা এলো কোথা থেকে ? তা কে সৃষ্টি করল ? তারপর আমি তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয়ত দেব ।

এরপর আপনি আমাকে হয়ত প্রশ্ন করবেন, সেই প্রথম পানি সৃষ্টি হওয়ার কিংবা প্রথম বৃষ্টি হওয়ার কারণ কী ? তারপর হয়ত আমাকে পৃথিবীর সৃষ্টির শুরুর দিকে যেতে হবে! এর পরের প্রশ্নে হয়ত আমাকে সৌরজগত ছেড়ে সোজা ‘বিগব্যাং’- এর কথাই বলতে হবে ।

আপনি হয়ত বলবেন– ‘বিগব্যাং’ ঘটাল কে ? হ্যাঁ, কীভাবে ‘বিগব্যাং’ ঘটল ? আমি যখন তারও ব্যাখ্যা দেব তখন হয়ত আপনি এবার বলবেন, ‘বিগব্যাং’ হওয়ার জন্য পরমশূণ্য কে সৃষ্টি করল ? মোট কথা, আমি যেখানে গেলে উত্তর দিতে পারব না যেখানে গেলে বিজ্ঞানও ব্যাখ্যা দিতে পারবে না সেখানেই আপনি ঠেক ধরবেন ।

বলবেন, এটাই আমাদের অদৃশ্য সত্তা করিয়েছে । অথচ আমি যখন প্রশ্ন করব, কীভাবে বুঝলেন এখানে অদৃশ্য সত্তার হাত আছে ? তখন আপনি নীরব । আবার আপনার ঐ প্রশ্নের উত্তর যখন একদিন বিজ্ঞানীরা ঠিকঠাক দেবেন তখন আপনার আবার প্রশ্ন দাঁড়াবে, তা কে ঘটিয়েছে ?কীভাবে হয়েছে ?যদিও তার উত্তর আপনি নিজেও জানেন না ।

শুধু নিজের অজ্ঞতার কারণেই ঐ ঘটনার পিছনে একটা অদৃশ্য শক্তি দাঁড় করাচ্ছেন । আপনি প্রথমেই বিশ্বাস করেছিলেন, সামান্য বৃষ্টির পিছনেও ঐ অদৃশ্য শক্তির হাত আছে । সেই হাত খুঁজতে খুঁজতে আপনি অনন্ত মহাবিশ্ব এর কাছে এসেও দেখাতে পারলেন না !


এবার আসল কথায় আসি; আপনি যে বিশ্বাস করেন- মানুষের যেখানে অজ্ঞতা ; বিজ্ঞানের যেখানে শেষ, সেখান থেকেই ঐ অসীম সত্তার শুরু ।আসলে আপনার কথা মোটেও ফেলে দেবার নয়, আমি আপনার কথা অবশ্যই স্বীকার করি । একটা অদৃশ্য সত্তা থাকতেও পারে !আসলে এত কথা বলে আপনাকে অনন্ত মহাবিশ্বের কাছে আনার কারণ কি জানেন ? বলছি তবে, আমাদের পৃথিবীটা তো অনেক বড় তাই না ? আমাদের পৃথিবীর চেয়ে সূর্য কিন্তু তের লক্ষ গুন বড় !

তাহলে ভাবুন,মহাবিশ্ব এর  সূর্য কত বড় ! এই সূর্য আবার মহাকাশের মাঝারি ধরণের একটা নক্ষত্র মাত্র । সূর্যের মত ছোট-বড় কোটি কোটি নক্ষত্র মিলে গঠিত আমাদের এই ছায়াপথ–মিল্কিওয়ে ।

অবাককান্ড যে, এই মিল্কিওয়ের মত কোটি কোটি গ্যালাক্সি আছে আমাদের এই মহাবিশ্বে । তাহলে চিন্তা করুন, আমাদের মহাবিশ্ব কত বড় ! এখানেই শুধু শেষ নয় ভাইজান, ‘বিগব্যাং’য়ের মাধ্যমে যদি আমাদের এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে তাহলে এই ‘বিগব্যাং’ শুধুমাত্র আমাদের মহাবিশ্বের জন্য ঐ একবারই ঘটেছে, তা ভাবারও কোন কারণ নেই ।

এরকম অসংখ্য বার ঘটতে পারে । হয়ত এখনো এই মুহুর্তও ঘটে চলেছে ‘বিগব্যাং’য়ের মাধ্যমে আরো মহাবিশ্বের সৃষ্টি, যে-সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না । শুধু বিবেক, বুদ্ধি, যুক্তি দিয়ে তা অনুধাবন করতে পারি ।


এবার শেষে আসি- আমাদের পৃথিবী আমাদের মহাবিশ্বের তুলনায় একটা বালুকার সমানও নয় । তাহলে অনন্ত মহাবিশ্বের তুলনায় তা কতটুকু আবার একটু চিন্তা করুন । এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল, আপনার কথা যদি সত্যি হয়- এই সবই যদি একজন অদৃশ্য সত্তাই সৃষ্টি করেন তাহলে সেই মহান স্রষ্টা কী তার এত সুবিশাল সৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আমাদের বালুকাক্ষুদ্র পৃথিবীকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন ?

আবার পৃথিবীর ভিতর মানবজাতিকে নিয়েই কি তার যত চিন্তা ?আর মানবজাতির মধ্যে শুধু আপনার ধর্মের লোকের প্রতি-ই কী তিনি অনুরক্ত, সন্তুষ্ট ? মানুষের বিশ্বাস, আপনার অরাধনাই কি তার পরম চাওয়া ?যৌক্তিক জবাব দিতে পারবেন ? না পারলে এবার আমি বলি, আপনি শুনুন ।

আগে আপনি নিজেই নিজের ঈশ্বরকে ভালো করে জানুন । তার ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো করে বুঝুন আর আপনার স্রষ্টার সৃষ্টির বিশালতা সম্পর্কে আপনাকে জানতে হলে, বুঝতে হলে আপনার বিজ্ঞান জানার কোন বিকল্প নেই । আমি নিশ্চিত, আপনি যদি বিজ্ঞান না জানেন তাহলে আপনি আপনার স্রষ্টা সম্পর্কেও জানবেন না ।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD