ক্ষুদিরামদের মতো সাহসী বিপ্লবীরা হয়তো বলে। কারণ তাঁরা ন্যায়ের যুদ্ধে হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিয়ে দেন। তাঁরা কখনো কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হন না। প্রাণভিক্ষাও চান না। তাঁরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না। ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দেওয়া হয় ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট। তাঁর বয়স হয়েছিল তখন ১৮ বছর ৮ মাস ১১ দিন। তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী বীর।
ক্ষুদিরাম বসু প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছে ভেবে তাঁকে গুপ্তহত্যা করার লক্ষ্যে বোমা ছুঁড়েছিলেন। কিন্তু কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসা ছিলেন। তাই প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। এ ঘটনায় দুজন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়, যারা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের মুহূর্তে আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়।
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানার হাবিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। মায়ের নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তাঁর মায়ের চতুর্থ সন্তান। এর আগে তাঁদের দুইপুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী পুত্রকে তাঁর বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা বলে শিশুটির নাম পরে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তাঁর মাকে হারান। এক বছর পর তাঁর পিতারও মৃত্যু হয়। তখন তাঁর বড়ো দিদি অপরূপা তাঁকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলএ ভর্তি করে দেন।
১৯০২ এবং ১৯০৩ সালে শ্রী অরবিন্দ ও সিস্টার নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। স্বাধীনতার জন্য তাঁরা জনসমক্ষে ধারাবাহিক ভাবে বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন। তখন কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্পষ্টভাবেই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন এবং কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধেও একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন।
ক্ষুদিরাম সম্পর্কে হেমচন্দ্র কানুনগো লিখেছেন যে, ‘ক্ষুদিরামের সহজ প্রবৃত্তি ছিল প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দুঃসাধ্য সাধন করার। তাঁর স্বভাবে নেশার মত অত্যন্ত প্রবল ছিল সৎসাহস। ছিল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র অনুভূতি।’ ক্ষুদিরাম হলো বিপ্লবের প্রতীক। প্রতিবাদের প্রতীক। আজ তাঁর ১১৩তম প্রয়াণ দিবসে জানাই লাল স্যালুট।
© আহমেদ জহুর
কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
Leave a Reply