শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:৫১ অপরাহ্ন

বাবার স্মৃতি – হোসনে আরা হেনা

বাবার স্মৃতি – হোসনে আরা হেনা

বাবা— আমার বাবা। কতো কিছু কল্পনায় সাজাই। যে জিনিসটি বাবা খেতে পছন্দ করতেন বিশেষ করে যে তরকারীটি বাবা পছন্দ করতেন সেই রান্নাটি যখন রান্না করি প্রথমেই মনে মনে বাটি ভরে বাবার জন্য নিই। আমার চোখে তখন ভেসে ওঠে সিলেট যাওয়ার দু’দিন আগ থেকেই আমি তাঁর পছন্দমতো পদ রান্না করে নিয়ে যেতাম। নিয়েই বাবার টেবিলের ওপর রাখতাম। শুধুমাত্র বাবার মুখের স্মিত একটুকরো অনাবিল হাসি দেখার জন্য। মেয়ের এই ভালোবাসা তিনি খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন আমি তা বুঝতে পারতাম। কী-যে আহ্লাদী হতাম আমি। আমাদের সাতভাইবোনের মাঝে আমার অনেক কাজিনরাও তখন আমাদের বাসায় থেকে পড়াশুনা করতেন। বহিরাগতের সংখ্যাও কম ছিল না। বেশ বড় পরিবার। কিন্তু বাবা মাছ মাংস যাই হোক, বাটি ভরে দিলেও একটুকরারও বেশী কোনদিন পাতে নিতেন না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।যতোদিন তিনি সজ্ঞানে ছিলেন। তাঁর সবকিছু ছিলো পরিমিত। খাওয়া পরা চলা। পোশাক পরিচ্ছেদে তাঁর লুঙি, পাঞ্জাবী, পায়জামার সংখ্যা ছিল তিনটি করে।
আমাদের সাত ভাইবোনের মধ্যে প্রথম চারজন বাবাকে ‘ আপনি’ সম্বোধণ করতেন। একটু দুরত্ব ছিল তাঁদের মাঝে। কিন্তু আমরা বাকী তিনবোন- জেবু, হেনা, হীরা— এই দুরত্বকে অতিক্রম করেছিলাম। আমরা তিনবোন বাবাকে ‘তুমি’ বলতাম। বাবার পিছু পিছু থাকতাম। একসাথে বাগান করতাম, মেলায় যেতাম, ঘুরতে বের হতাম। ছোটবেলায় রমজান মাসে বাবা আমাদেরকে রোজা রাখলে বাসার পাশেই নিউমার্কেট নিয়ে যেতেন। আমরা তিনবোন বাবার হাত ধরে হেঁটে যেতাম। দেখতাম বাবাকে পথের পাশে মানুষের হাঁটার যাতে অসুবিধা না হয় কিছু পড়ে থাকলে তা উবু হয়ে কুড়িয়ে তা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে ফেলতে। মানুষ কেউ কেউ তাকিয়ে থাকতো, আমরা তখন ছোট। লজ্জা পেতাম। বলতাম, ও বাবা ঐ দেখো মানুষ হাসছে।
বাবা নিঃশব্দে কলা, আমের খোসা হাতে তুলে রাস্তার পাশে যেখানে ফেলার কথা সেখানে নিয়ে ফেলতেন।
আজ ভাবি, আমার বাবা মানুষটি কতোইনা ভালো মানুষ ছিলেন।
আমার বাবা ছবি তুলতে খুব পছন্দ করতেন, যদি বলতাম,আব্বা চলো ছবি তুলবে, চট জলদি বাবা টেবিল থেকে ছোট্ট আয়নাটি বের করে মাথা আঁচড়াতেন,দাড়ি পরিপাটি করতেন, তারপর খুব যত্ন করে টুপিটি হাতে নিয়ে মাথায় পরতেন। তারপর ছোট্ট বাচ্চাদের মতো আমরা যেভাবে বলতাম সেভাবে পোজ দিতেন। বাবার ছবি তোলার এই গুণটি বোধহয় আমি পেয়েছি 🙂
বাবা হাঁটাকে খুব গুরুত্ব দিতেন, যার একটুকও অভ্যাস আমি রপ্ত করতে পারিনি। তিনি নিজে বাজার করতেন। সিলেট মীরাবাজারে তিনি হেঁটে বাজার করতে যেতেন। দুই হাতে দুই ব্যাগ ভরে বাজার করে আনতেন। আম্মা ব্যাগ ঢেলে দেখতেন পাঁচটা ছয়টা লাউ। এরমধ্যে দু’টো ভালো আর বাকীগুলো কিছু নষ্ট। আম্মা অনুযোগ করলে বলতেন, গরীব মানুষটির এই পচা লাউটি কেউ নেবে না তাই আমি নিয়ে এলাম। সেওতো বাঁচতো!
এই আমার বাবা !
কতো চমৎকার চমৎকার গল্প লেখা যায় আমার বাবাকে নিয়ে !
কিন্তু আমরা কোন ভাইবোনই যেনো বাবার উদাহরণ হয়ে উঠতে পারলাম না !
দু’হাজার চার সালে আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বাবা,তুমি কেমন আছো?
ও– বাবা তুমি….
তুমি খুব ভালো থেকো।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD