বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

বাফার আয়োজন আমেরিকায় – বেনজির শিকদার

বাফার আয়োজন আমেরিকায় – বেনজির শিকদার

বাফার

বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস— বাফার দশবছরপূর্তি উপলক্ষ্যে গত রবিবার ১০-২৬-২০২১, নিজস্ব কার্যালয়ে ছিল এক বিশেষ আয়োজন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, বাফার প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমার খুব ভালোলাগছে! এই দশবছরে অনেক কষ্ট, ত্যাগ, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাফা আজ এখানে। এই অর্জনে দশবছরের পথচলায় যারা বাফার সাথে ছিলেন, তাদের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই উপভোগ করেন মার্জিয়া স্মৃতির উপস্থাপনায়, দীর্ঘ দশবছরের পথপরিক্রমায় মঞ্চায়িত চিত্রাঙ্গদা, মায়ার খেলা, নকশিকাঁথার মাঠসহ বাফার আয়োজনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খণ্ডচিত্র।

সকলের উপস্থিতিতে প্রাপ্তির তৃপ্তিটুকু ভাগাভাগি করে নিতে এর পরপরই ছিল কেক কাটার আয়োজন।

এসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক বেলাল বেগ বলেন, টেলিভিশনের একজন প্রযোজক হিসেবে আমি সাধারণ মানুষের মতো করে কোনো অনুষ্ঠান দেখি না। আমি অনুষ্ঠান দেখি একজন এক্সপার্ট হিসেবে। কাজেই যখন দেখলাম, মার্জিয়া স্মৃতি সাউন্ডের কাজ করেছে, লাইটের কাজ করেছে, আমার বুকটা ফুলে এত বড়ো হয়ে গেল। কেননা এগুলো জানা মানে একটি দৃশ্যের গভীর থেকে গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা। তার মতে, একদিন বাঙালি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। সবশেষে তিনি বলেন, বাফার কর্মপ্রেরণায় আমি অত্যন্ত অভিভূত ও আপ্লুত!

দশবছরপূর্তিতে বাফাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘সাপ্তাহিক বাঙালী’ পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ বলেন, মার্জিয়া স্মৃতির প্রেজেন্টেশন দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছি! এদেশে একেবারে শৈশবে এসে এত চমৎকার বাংলা বলার পাশাপাশি মার্জিয়া স্মৃতি যে শুধু অসাধারণ নাচ করে তাই নয়, অসাধারণ নৃত্যশিক্ষক এবং তার অন্যান্য গুণাবলী সত্যিই মুগ্ধ হবার মতো! তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে যখন আমি প্রথম স্মৃতির নাচ দেখি, তখন কুইন্সে অনেককেই বলেছিলাম, যদি এই নিউইয়র্ক সিটিতে সবচেয়ে ভালো কোনো নাচের গ্ৰুপ থেকে থাকে; তা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস বাফা।’ বাফার শিল্পীদের নৃত্যের এত চমৎকার পারফেকশন বাংলাদেশের শিল্পীদের সাথে অনায়াসেই তুলনা করা যায়। তিনি মনে করেন, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বাফা কাজ করে যাচ্ছে। বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় এই কঠোর পরিশ্রম এবং ছেলে-মেয়েদের অনুপ্রাণিত করতে অভিবাদন জানান অভিভাবকদের প্রতি। তিনি উল্লেখ করেন, বাফার সবচেয়ে বড়ো অ্যাচিভমেন্ট মার্জিয়া স্মৃতি! ভবিষ্যৎ এ বাফা এগিয়ে যাবে, সীমা-পরিসীমাহীন; এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

বাফাকে অভিনন্দন জানিয়ে ‘সাহিত্য একাডেমি’র পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, নিঃসন্দেহে আজকে বিশাল একটি দিন, আনন্দের দিন! শুরুর দিকে বাফা এমন ছিল না; তবে এই সংগঠনটির ভেতরে আমি একটি শক্তি দেখেছিলাম, একটি প্রচণ্ডরকম ইচ্ছা দেখেছিলাম এবং এটিই ছিল সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার মাধ্যম। তিনি মনে করেন, মার্জিয়া স্মৃতি এখানকার সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি দুটোকেই ধারণ করছে; কাজেই এই প্রজন্ম এবং এর পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও বাফা টিকে থাকবে স্বমহিমায়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শুধু মার্জিয়া স্মৃতিই নয়, স্পন্দন, ফাইজা কিংবা অর্পিতার মতো আরও অনেকেই এখান হতে বেরিয়ে আসবে; বাফাকে এগিয়ে নিতে তৈরী হবে শক্তিশালী নেতৃত্ব। সবশেষে তিনি বাফা এবং বাফার সাথে জড়িত সকল অভিভাবকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।

ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার উইলিয়াম রিভারা বলেন, আমি জানতাম না বাফা কী? শুধু জানতাম এই সংগঠনটি বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করে। আজ এখানে এসে আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বাফা একটি ইউনিক প্রতিষ্ঠান। আমি বিশ্বাস করি, একদিন ‘বাফা’ ২৫তম, ৫০তম বার্ষিকী পালন করবে।

এ্যাসম্বলি উইম্যান কারিনা রেইস বলেন, ফরিদা ইয়াসমিনকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। বাফার চমৎকার কাজের জন্য পেন্ডামিকের সময় আমি অফিসিয়ালি আমার সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। শুভেচ্ছা জানাবার পাশাপাশি দৃঢ়ভাবে তিনি বলেন, বাফা অনেকদূর এগিয়ে যাবে এ আমার বিশ্বাস।

ব্রঙ্কস বোরো(Bronx Borough)প্রেসিডেন্ট ভেনেসা গিবসন বলেন, বাফার এই দশবছর পূর্তিতে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। দশবছর অনেক দীর্ঘসময়। নিউইয়র্ক সিটিতে কোনো ননপ্রফিট অর্গানাইজেশন চালিয়ে নেওয়া সহজ কাজ নয়। এবছরের শুরুরদিকে বাফার সাথে সাক্ষাতের পর বুঝতে পারি বাচ্চাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কী চমৎকারভাবে কাজ করে যাচ্ছে! তিনি মনে করেন, আমরা যে যে অবস্থানেই থাকি না কেন, দিনশেষে আমরা সবাই ব্রঙ্কসের অধিবাসী। এসময় তিনি জোরালোভাবে উল্লেখ করেন, নেতৃত্বে আসার জন্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের সফলভাবে নেতৃত্বে নিয়ে আসতে পারলেই কমিউনিটির জন্য, তথা জাতির জন্য মঙ্গল আনয়ন সম্ভব। সবশেষে তিনি বলেন, বাফার সফলতা মানেই আমাদের সফলতা, আমাদের সফলতা মানেই বাফার সফলতা। দশবছরের এ অর্জনে তিনি মার্জিয়া স্মৃতিকে আমন্ত্রণ জানান, তার অফিস হতে স্মারকলিপি সংগ্রহ করতে।

রঙ্গালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সোবহান চৌধুরী বলেন, ফরিদা ইয়াসমিন ব্রঙ্কসের এই বৈরী পরিবেশে যেভাবে কাজ করছেন; তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি বাফার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।

সুর-ছন্দের কর্ণধার এমদাদুল হক বলেন, একটা সংগঠনকে পরিচালনা করা যে কতটা কঠিন, তা আমি বুঝি। দীর্ঘ দশটি বছর ধরে সেই কঠিন কাজটি যত্নের সাথে করে যাবার জন্য তিনি বাফা এবং বাফার অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।

অভিনেত্রী শিরীন বকুল বলেন, পৃথিবীতে ভালো কাজ করার জন্য দলবলের দরকার নেই, একজন মানুষই যথেষ্ট; যদি তার একটা গোল থাকে, সদিচ্ছা থাকে এবং সততায় পথ চলে, তবে সে জয়ী হবেই। বাফার ফরিদা ইয়াসমিনও ঠিক তেমনই। বাফাকে এগিয়ে নিতে এবং সঠিক উত্তরসূরি হিসেবে মুগ্ধতায় তিনি মার্জিয়া স্মৃতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট সিরাজ উদ্দিন সোহাগ বলেন, যে কৃষক অনুর্বর জমিতে ফসল ফলাতে সক্ষম হয় আমি তাকেই ক্রেডিট দিই। প্রতিনিয়ত বাফা আমাদের জন্য এমনই কিছু করে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত পাঁচবছর যাবৎ নিউইয়র্কে একমাত্র বাফাই এতবড়ো পরিসরে প্রভাতফেরির আয়োজন করে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা অনেক বড়ো অর্জন।

বাংলাবাজার ব্যাবসায়িক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর আলম লিংকন বলেন, আমি মনেকরি, বাফা মানেই বাংলাদেশ! বাঙালিয়ানাকে ধরে রাখতে আজ উত্তর আমেরিকার প্রায় সব জায়গাতেই বাফার বিচরণ।

এছাড়াও বাফাকে শুভেচ্ছা জানাতে কথা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, নাট্যব্যক্তিত্ব শরীফ হোসেন, সেতার বাদক মোর্শেদ খান, তবলিয়া তপন মোদক, লেখক সোনিয়া কাদের, বাংলাদেশ স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুর রহিম বাদশা, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট সারওয়ার চৌধুরী, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মাকসুদা আহমেদ প্রমুখ। এসময় দশবছর উপলক্ষে বাফাকে শুভেচ্ছা জানাতে আরও উপস্থিত ছিলেন আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী জাকিসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে অভিভাবকদের মধ্য থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করতে আরও কথা বলেন, সালমা সুমি, অর্চনা পাল এবং নাসির শিকদার।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাপ্তাহিক পরিচয়ের সম্পাদক, নাজমুল আহসান, শামসুন্নাহার নিম্মি, নবযুগের সাহাব উদ্দিন সাগর, চ্যানেল টি টি’র স্বত্বাধিকারী শিবলী চৌধুরী কায়েস, বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সারওয়ার চৌধুরী, মিতা চৌধুরী, ইয়াকুব আলী মিঠু, মাসুম আহমেদ, শুক্লা রায়, আলী হাসান, লুসি হাসান, জামাল হোসাইন, নুরুল ইসলাম, শম্পা রহমান, কানিজ ফাতিমা, নজরুল কবির, নুসরাত এলিন, ফারজানা ইয়াসমিন, মুনিরা নূর, আবুল বাশার, ছহুল আহমেদ, শান্তানুর রহমান, জান্নাতুল আরা, বেনজির শিকদার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পরিবেশনায় ছিল, সংগীতশিল্পী এবং শিক্ষক এমদাদুল হক -এর কণ্ঠে গান। এসময় তবলায় সঙ্গত করেন তপন মোদক।

পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন গোলাম মোস্তফা ও শামীম আরা বেগম। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং আগামীমাসে বাফার নিয়মিত আয়োজন মাসান্তের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে, আয়োজনের পরিসমাপ্তি টানা হয়।

বেনজির শিকদার
নিউইয়র্ক

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD