পাঠকের সন্ধানে সুদূর চরফ্যাসনে
পাঠকের সন্ধানে সম্প্রতি ছুটে গিয়েছিলাম সুদূর চরফ্যাসনে। সুদূর এ অর্থে যে যোগাযোগবিপ্লবের এ সময়েও সড়কপথে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন বৃহৎ ও সমৃদ্ধ জনপথ এটি। ঝালকাঠি থেকে বরিশাল হয়ে ফেরিপথে আমাদের দীর্ঘ যাত্রাপথটি সহজ ছিল না। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে যাওয়া সেটি এতটাই সফল হয়েছে যে আমাদের পথের সব ক্লান্তি ধুয়েমুছে গেছে।
জ্যাকব নীলিমা কলেজটি বয়সে নবীন। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি নয়। তার মধ্য থেকে দুশ শিক্ষার্থীকে আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়তে দিয়েছিলাম কয়েকমাস আগে। ২০ জুন তার একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন হলো। তাকলাগানো সাফল্য দেখিয়েছে কলেজের তরুণ শিক্ষার্থী-পাঠকরা। সেটি এমন যে প্রথম ৫ জন নির্বাচন করতে গিয়ে পুরস্কার দিতে হয়েছে ১৭ জনকে।
পরদিন ২১ জুন ছিল পুরস্কার প্র্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠান। ঢালতলোয়ার কিছুই নেই, তারপরও শিক্ষার্থীরা আধাঘন্টার যে সাংস্কৃতিক আয়োজনটি উপহার দিয়েছিল তা মনে রাখার মতো। শুনলাম, সাত লক্ষ অধিবাসীর পুরো চরফ্যাসনে সংগীত, নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র শিক্ষা দেওয়ার মতো একটিও প্রতিষ্ঠান নেই। তারপরও ওদের দাবিয়ে রাখা যায়নি। যাবে না।
আমরা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক পরীক্ষামূলক একটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি সারা দেশে। এটি ছিল তার সর্বশেষ কার্যক্রম। আমি এবং কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত আমার সহকর্মী ইনামুল একমত হয়েছি যে প্রত্যন্ত এলাকার সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিভাগীয় পর্যায়ের বিপুল সুবিধাপ্রাপ্ত অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়েও এগিয়ে ছিল সার্বিক বিবেচনায়। প্রশ্ন হলো, ম্যাজিকটি কী? আমার বিবেচনায় ম্যাজিক মূলত দুটি: প্রথমত, এ কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্ব, দ্বিতীয়ত, সভ্যতার মূলসূত্র অনুযায়ী বাধা যেখানে যত বেশি, মানুষের সক্ষমতাও সেখানে তত অপ্রতিরোধ্য।
বিপুলভাবে বইবান্ধব অধ্যক্ষ মনির আহমেদ শুভ্রকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা না জানালে বড় অন্যায় হবে। তিনি আমাকে আবারও শেখালেন যে রাজনীতির মাঠে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সত্যিকারের আদর্শবাদী নেতৃত্ব পাথরেও ফুল ফোটাতে পারে।
ঢাকা: ২৮ জুন ২০২৩
Leave a Reply