জেনারেল আতাউল গনী ওসমানী’র
জন্মদিনে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা…
একটি পরাধীন দেশকে স্বাধীন দেশে পরিণত করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও জাগরিত করার জন্য উঁচুমানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে দখলদার আগ্রাসী বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামরিক বাহিনী ও এর নেতৃত্ব প্রদানের জন্য অভিজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান ও দুর্ধর্ষ সামরিক নেতার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কিংবদন্তি ক্ষণজন্মা পুরুষ জেনারেল আতাউল গনী ওসমানী, যিনি অসাধারণ মেধা, যোগ্যতা, নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শী সমরকৌশল প্রয়োগ করে বহুগুণে শক্তিশালী শত্রুবাহিনীকে পরাস্ত করে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ফলাফলকে অনুকলে নিয়ে আসেন, যা কল্পনাকেও হার মানায়।পাকিস্তানিরা তাকে ডাকতো ‘পাপা টাইগার’! তার নাম শুনলে ত্রাস সৃষ্টি হতো পাকিস্তানি ক্যান্টনমেন্টে। তিনি ছিলেন তিনটি দেশের সেনাবাহিনীর অফিসার। ১৯৪২ সালে তৎকালীন বৃটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মেজর ছিলেন তিনি। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি হয়েছিলেন একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থাকাকালে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সেনানিবাসের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন কর্নেল হিসেবে।বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে এমএনএ নির্বাচিত হন ওসমানী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।একটি দেশের স্বাধীনতার পথে মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, একটি দেশকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার রণাঙ্গনের অন্যতম মহারথী। তিনি মহম্মদ আতাউল গনী ওসমানী।
ইতিহাস সৃষ্টিকারী দূরদর্শী চিন্তা-চেতনার অধিকারী অসাধারণ প্রতিভাবান কালজয়ী পুরুষ ওসমানীদের বারবার জন্ম হয় না। দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে ধূমকেতুর মতো তাদের আবির্ভাব হয়। জাতির কৃতজ্ঞতাবোধ থাকলে তারা এ বীরপুরুষকে সম্মান করে। আর তা না হলে কালচক্রে তারা হারিয়ে যান। চিরকুমার জেনারেল ওসমানী সারাটা জীবন কাটিয়েছেন এদেশের মাটি ও মানুষের মুক্তির, উন্নতির ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। উৎসর্গ করেছেন তার জীবনযৌবন, সহায়সম্পত্তি ও সবকিছু। অবহেলিত বাঙালি মুসলমানদের ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রবেশের জন্য তিনি সব প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন এবং এর সফলতাও অর্জন করেছেন।
তিনি ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক এবং নির্লোভ রাজনীতিবিদ। শিক্ষাজীবন, সৈনিকজীবন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক জীবনেও তিনি নীতি-আদর্শের ব্যাপারে ছিলেন অটল। তার সম্পূর্ণ জীবনটাই ঘটনাবহুল এবং অনুসরণযোগ্য। আপাদমস্তক ছিলেন দুর্জয় সাহসের অধিকারী। ওসমানী ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, সৎ, মেধা ও প্রজ্ঞায় উজ্জ্বল এক দুর্দমনীয় সমর ব্যক্তিত্ব। নির্ভীক, নির্লোভ, সহজ-সরল, নিখাদ দেশপ্রেমিক ওসমানীর মতো নেতা একেবারেই বিরল।
বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতির গৌরব,মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর প্রধান,দেশপ্রেমিক, জাতীয় নেতা, পুণ্যভূমি সিলেটের কৃতি সন্তান, মহম্মদ আতাউল গনী ওসমানীর আজ (১সেপ্টেম্বর-২০২৩ শুক্রবার)১০৫তম জন্মদিনে আমরা তাকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।
————————-
বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল
লেখক প্রকাশক ও সংগঠক
Leave a Reply