আমাকে কেউ চিনে না
-হাসনাইন সাজ্জাদী
।।
কখনো কেউ দাঁড়ায় আবার কেউ মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে
না চেনার ভান করা এরা আমার শৈশব কৈশোরের সঙ্গী সাথী
যাদের ভাবনা ছিল আমাকে নিয়ে অনেক উচুমানের
তাদের ধারণা ছিল আমির সাধুর নাতি ইউরোপ আমেরিকা ছাড়া
আর কোথায়ও হবে না থিতু।
যখন দেখে ঢাকায় পয়ত্রিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছি
বাপ দাদার নামের উপর,কোনোভাবেই আমি
অতিক্রম করতে পারিনি তাদেরকে।
এখনো তাদের সম্পদে খাই ঘুমাই
আর গ্রামের আনপড় মানুষগুলো দেশ-বিদেশে থরথর করে
বেড়ে উঠেছে আভিজাত্যে নব্য ধনী হিসাবে নিয়েছে খ্যাতি
তখন তারা আমার উচ্চতা নিয়ে হতাশই হয়।
আমির মঞ্জিলে সবচেয়ে দামী গাড়িটা আমার হবে
কিংবা বিদেশ থেকে এ কাদামাটির গ্রামদেশে আমি আর ফিরবো না-
এমন উচ্চতায় ছিল আমাকে নিয়ে যাদের মন
তারা আমার ঢাকায় জীবন কাটিয়ে ঘন ঘন গ্রামমুখিতাকে
ভাল চোখে দেখছে না জানি।
অথবা আমার বাগ্মিতাকে যারা ভেবেছিল
বিশ্বাসের এক বড়ো তরবারি হবে
এখন দেখছে ঊনষাট বছর বয়সেও দাড়ি গোঁফ কাটিয়ে আমি
এক অনিশ্চিত অহংকার নিয়ে চুপচাপ
তাকে ব্যর্থতারই নামান্তর ভাবছে এখন কেউ কেউ।
হারিছ আলী তাই আমাকে বলেছে একদিন
‘তুমি ভুল করেছ ভাই।তোমার আসলে বিদেশ চলে যাওয়া দরকার ছিল।আমার মামাতো সম্বন্ধীরা বিদেশ যাওয়াতে
কুলাউড়ায় আলিশান বাড়ি তৈরি করেছে।’
হারিছ আলীর এ আবেগের জবাবে আমি
সত্যি বেগ হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন।
আমির মঞ্জিলের মরচে পড়া গেট লতাগুল্ম জড়ানো বৃক্ষ
যা দেখে দেখে এতদিন আমি ছিলাম অহংকারী
পুকুর পাড়ের ধুলোবালুকে পবিত্র জ্ঞান করে এত দিনের আমার লেপ্টে বসা
লুঙ্গি পরে হাটাহাটির প্রশান্তি,কোনোকিছুই আর আমাকে সম্বিত দেয়নি সেদিন তৎক্ষনাৎ,
তবুও আমি আজ বৃক্ষ জুড়ে তরুলতার বিদ্যুৎ ঝলকানি
আর মরচে পড়া গেটের বিদ্যুৎ আলোকে
নতুন করে আমার ইতিহাস বলে জেনেছি।
Leave a Reply