“গোলাম হুসনের গান”
হাসনাইন সাজ্জাদী
।।
এক ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম “গোলাম হুসনের গান”। এটি হারিয়ে যেতে যেতে নব আবিস্কৃত এক প্রাচীন পাণ্ডুলিপি।তারপর গ্রন্থে রূপলাভ।
গ্রন্থের সংগ্রহ ভূমিকা ও সম্পাদনার কাজটি করেছেন বাংলা লোকসাহিত্যের কিংবদন্তীতুল্য সেবক গবেষক মোস্তফা সেলিম।গ্রন্থখানি আমি গতকাল পেয়েছি।তবে বন্ধু মোস্তফা সেলিম’র হাত থেকে নয়,তার নির্দেশে অফিস কর্মচারী কৃষ্ণ বাবুর মাধ্যমে। তিনি তখন অফিসের বাইরে ছিলেন।আজিজ মার্কেটে আগের মত বইয়ের দোকান নেই।তা চলে গেছে আমাদের নিত্য অবসর যাপনের কনর্কড এম্পোরিয়াম কমপ্লেক্সে।তারপরও এ আজিজ মার্কেট দিয়ে সকাল দুপুর শুরু করি।আজিজ মার্কেট ভবনটিতে বেশ ক’টি খাবার হোটেল থাকাতে দুপুরের খাবারের জন্য যেমন তা আকর্ষণীয় তেমনি জ্ঞান চর্চার মাধ্যম হিসেবেও অনেকের সান্নিধ্য পেতে চক্কর মারি উক্ত ভবনে।চলমানের জ্ঞানের আলোচনা ছাড়াও অতীত সাহিত্যের চর্চাকেন্দ্র উৎস প্রকাশন আজিজেই।তাই আমি বলি “যে যায় আজিজে /সে নয় পাজি যে”।বাংলা সাহিত্যের সূতিকাগার সিলেট।এখানে শুরু হয়েছিল চর্যাপদ রচনা।বৈষ্ণব সাহিত্য সিলেট সন্তান শ্রী চৈতন্যদেব’র হাতে অঙ্কুর উদগম ঘটে।নাত সাহিত্যও সিলেটে রচিত।আমি বাঙালি,আমি বাংলাকে ভালোবাসি,আমি বাংলার সেবা করবো-এই স্লোগান নিয়ে গুরুসদয় দত্ত সিলেট থেকেই ষোল আনা বাঙালি তৈরির আন্দোলন শুরু করেন।নাম ছিল তার ব্রতচারী আন্দোলন।ভারতে এখনো তা চলমান আছে।ব্রতচারী গান এখনো বিষ্ণুপুর এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।ভারতবর্ষের বিষ্ণুপুরেই আমার বিজ্ঞান কবিতার চর্চাও লক্ষনীয়ভাবে এগিয়ে চলেছে।কবিতার বিবর্তনে আমার তৈরি বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলন এখন বিজ্ঞানবাদরাষ্ট্রতত্ত্ব,বিজ্ঞানকাব্যতত্ত্ব,বিজ্ঞানশিল্পতত্ত্ব ও সাবলীল ছন্দের জন্ম দিয়েছে।আগামী দিনের সাহিত্যের ইতিহাসে যার অগ্রাধিকার লক্ষনীয়।এভাবেই সিলেট মানে বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস।
সিলেটে এক সময় নিজস্ব বর্ণমালা তৈরি ও এ বর্ণমালায় বই পুস্তক রচিত হয়ে তা হারিয়ে যায়।যার পুনর্জীবন দান করেন বন্ধু মোস্তফা সেলিম।”সিলেটি নাগরিলিপি এখন উজালা / মোস্তফা সেলিমর আতো(হাতে)পুনর্জীবন পাইলা” এখন সিলেটি প্রবাদ।তারপর চলছে অতীত ঐতিহ্য নিয়ে অনুসন্ধান।এখানেও বন্ধু মোস্তফা সেলিম এগিয়ে গেলেন।১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি পাণ্ডুলিপির আবিস্কার করে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে আরেক ধাপ নাড়িয়ে দিলেন।
সিলেটের মধ্যে আবার মৌলভীবাজার জেলা এগিয়ে।আর সিলেটি নাগরি লিপিতে এগিয়ে কুলাউড়া ও জুড়ী বা লংলা পরগনা।আমি লংলা পরগনার মানুষ।আর বন্ধু মোস্তফা সেলিম পার্শ্ববর্তী পাথারিয়া পরগনার সন্তান।যে অঞ্চলে আমরা মানুষ সেখানে চর্যাপদেরও সূতিকাগার।
সংগত কারণে আমি গ্রন্থখানি বন্ধু মোস্তফা সেলিমের হাত থেকে নিতে আগ্রহী ছিলাম।গ্রন্থের প্রাচীন আরবি-ফারসি মিশ্রিত সিলেটি শব্দের প্রতিশব্দ বা প্রমিত বাংলা শব্দ আমরা যে ক’জন অনুসন্ধানে যুক্ত ছিলাম তাদের অন্যতম তরুণ লোকগবেষক ও প্রথম আলোর সিলেট ব্যুরো প্রধান সুমনকুমার দাশ,লেখক হাসান রউফুন ও আমার নাম এসেছে ভূমিকায়। এটাকে আমি উপভোগ করতে চাই যেমন উপভোগ করছেন বন্ধু মোস্তফা সেলিম সিলেটের এবং বাংলা ভাষার প্রথম পাণ্ডুলিপির আবিস্কারক হিসেবে।বইটির বহুল প্রচার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করবে।সমৃদ্ধ হব আমরা যুগে যুগে এভাবেই।
Leave a Reply