আপনি কী রাতে জেগে দিনে ঘুমান?
একালের বেশিরভাগের কাছেই রাতে জেগে থাকতে এবং দিনের অনেকটা সময় ঘুমিয়ে কাটাতে আনন্দ লাগে। কিছু মানুষ দাবি করেন, এটা তাদের ‘ক্রিয়েটিভিটি’ বৃদ্ধি করে। কথাটা হয়তো কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা মহান বিজ্ঞানী, দার্শনিক কিংবা কোনও সৃষ্টিশীল পেশার প্রতিভাবান মানুষ, তাদের কারও কারও জন্য হয়ত রাতের নীরবতা কাজের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী। কিন্তু অধিকাংশ রাতজাগা মানুষ আমাদের মতো সাধারণ এবং তাদের রাতজাগা মানবকল্যাণে কোনও উপকার তো করেই না, বরং তাদের নিজেদেরই মহা ক্ষতি করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের তরুণ সমাজের বড় অংশই এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
ঘড়ি অনুযায়ী মানুষ সহ বেশ কিছু প্রাণীর রাতে ঘুমিয়ে পড়ার কথা। আবার বাঘ, সিংহ, শেয়াল, বাদুড়ের মতো প্রাণীদের জীবন ঘড়ির কাঁটা চলে আমাদের বিপরীতে। এরা রাতে জাগে, দিনে ঘুমোয়। এককোষী প্রাণী থেকে শুরু করে এই সবুজ গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব হোমো সেপিয়েন্স, বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম চলে এক নির্দিষ্ট ছন্দে। এরই নাম ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ অর্থাৎ ‘জীবন ঘড়ি’, বিজ্ঞানীরা বলেন ‘সার্কাডিয়ান রিদম’।
সারকাডিয়ান রিদম’ (circadian rhythm) ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ (biological clock) বা বাংলায় ‘দেহ ঘড়ি” ব্যাপারটির কথা অনেকেরই জানা। বিশেষ করে ২০১৭ সালে জেফ্রি হল, মাইকেল রসব্যাশ এবং মাইকেল ইয়ং নামের তিনজন বিজ্ঞানী এই বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ‘ফিজিওলজি ও মেডিসিন’ এই নোবেল পুরস্কার লাভের পরে বিষয়টি জীববিজ্ঞানের বাইরেও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। এই ‘দেহঘড়ি’ একটি শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার যা মানুষের জেগে থাকা এবং ঘুমানোর বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ধকারে ঘুম পায়, আবার আলোতে জেগে ওঠে। অনেকটা সুইচ অন-অফ সিস্টেম। এই সুইচ অন-অফ আবার অন্যান্য শরীরবৃত্তীয় বিষয়গুলোর উপর প্রভাব ফেলে। তাই স্বভাবতই দেহ ঘড়িতে কোনও গোলমাল হলে তা আমাদের শরীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাবেই।
২০০৫ সালে হওয়ার বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিকের অন্দরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই হাজারো চাপের মাঝেও মনকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ঘুমের সঙ্গে আপোস করবেন না যেন!
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি মানুষেরই পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। কেউ যদি টিভি দেখে বা কম্পিউটারে কাজ করে ঘুমাতে যায়, তার মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে। ফলে ভালো ঘুম হয় না। এতে করে সে ক্ষুধামান্দ্য, বিষণ্নতা, স্নায়ুবৈকল্য ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে পারে। অনেকে রাতে জাগার জন্য ঘন ঘন চা-কফি খান, এটিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বেশি রাত জাগার বদঅভ্যাস এর ফলে বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে পাশাপাশি, শরীরে দীর্ঘমেয়াদী অনেক শারীরিক রোগ বাসা বাধে। সেসব রোগের ভয়াবহতায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বাড়ে,
ব্রেনের পাওয়ার কমেআয়ু কমে,মানসিক অবসাদসিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে, ত্বকের সৌন্দর্য কমে, হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়:
তাছাড়া খিটখিটে স্বভাব, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়ার মতো অসুবিধের পাশাপাশি গুরুতর শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি তো রয়েছেই।
অকারণ রাতজাগার ‘বদ অভ্যাস’ পরিহার করতে সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। কারও যদি পাঁচটায় ঘুমানোর অভ্যাস থাকে, চাইলেই সে পরদিন ১২টায় ঘুমাতে পারবে না। ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। প্রথম দিন চারটা, তারপর রাত তিনটা, কিছু দিন পর দুইটা…এভাবে আস্তে আস্তে সময়মতো ঘুমানোর অভ্যাস রপ্ত করতে হবে।
বেশি রাত জাগার বদঅভ্যাস এর ফলে বিভিন্ন মানসিক রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে পাশাপাশি, শরীরে দীর্ঘমেয়াদী অনেক শারীরিক রোগ বাসা বাধে। সেসব রোগের ভয়াবহতায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বাড়ে,
ব্রেনের পাওয়ার কমেআয়ু কমে,মানসিক অবসাদসিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে, ত্বকের সৌন্দর্য কমে, হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়:
তাছাড়া খিটখিটে স্বভাব, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়ার মতো অসুবিধের পাশাপাশি গুরুতর শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি তো রয়েছেই।
লেখকঃ Tamanna Rashid
Leave a Reply