শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ন

কবি ও সাংবাদিক লোকমান হোসেন পলার ‘আমার এই পথচলাতে আনন্দ’ প্রসঙ্গে-

কবি ও সাংবাদিক লোকমান হোসেন পলার ‘আমার এই পথচলাতে আনন্দ’ প্রসঙ্গে-

লোকমান হোসেন পলা’র ‘আমার এই পথ চলাতে আনন্দ’ হোক পরমানন্দের – এস এম শাহনূর

একজন লেখকের দেখা দেশ- বিদেশের বেশ কিছু ধর্মপীঠ নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ “আমার এই পথ চলাতে আনন্দ” তিনি লোকমান হোসেন পলা। সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠক লোকমান হোসেন পলা ১৯৭৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাধীন খাড়েরা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।

তিনি ছাত্র অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হন। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন বিকাশ এর সম্পাদনা করে আসছেন, বতর্মানে মাসিক পূর্বাপর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক বহুমত এর মফস্বল সম্পাদক, পাক্ষিক সকালের সূর্য় এর ঢাকা ব্যুরো প্রধান, সভাপতি, বিশ্ববাঙালি সংসদ -বাংলাদেশ, কসবা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক, অনলাইন বিটিসি নিউজ ডট কম ডট বিডি, বিডি ভয়েজ ডট কম, এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, মানবাধিকার ও পরিবেশ সাংবাদিক সোসাইটির যুগ্ম মহাসচিব। কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রি সম্মাননা ২০১৮, দৈনিক নব অভিযান সম্মননা পদক ২০০৯( সফল সংগঠক)মাপসাস মহাত্নাগান্ধী শান্তি পদক ২০১০( ইভটিজিং ও মাদক বিরোধী প্রচারে বিশেষ অবদানের জন্য) তিনি সৌদি আরব, সিগাংপুর, ভারত, নেপাল, ভুটান ভ্রমণ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধে খাড়েরা ইউনিয়ন, এক জনমে, প্রিয় কবিতা, ডিজিটাল সংসার, শান্তির পথে। তিনি প্রতিভা সাহিত্য সংগঠণ ও পাঠাগার এর প্রতিষ্ঠাতা। গীতিকার কসবা উপজেলা থিম সংগীত।

বইটি লেখার শুরুতেই তিনি লিখেছেন, “সকল ধর্মই মানব জীবনের অখণ্ড সত্তায় বিশ্বাসী”। একটি মাত্র লাইনের মাধ্যমে তিনি আদ্যোপান্ত নিয়ে এসেছেন। তবু লেখক আর পাঠক এক নয়। একজন গুণী লেখকের চিন্তা শক্তি ও জ্ঞানের গভীরতা উপলব্ধি করতে হলে তার সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে জানতে হবে।অধ্যায়ন করতে হবে তার রচনাবলী। বইটির মূল বিষয় সম্পর্কে লেখকের নিজের ভাষ্য, “আমি এশিয়ার পাঁচ দেশ ভ্রমণ করেছি। বিশেষ করে ইসলামী, সনাতনী, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ ও বাহাই ধর্মের ধর্মপীঠ গুলোকে দেখা এবং লেখার জন্য। মানুষের বক্তিগত জীবনে ধর্মাচার বা তীর্থভক্তি বিষয় গুলো আমার নজরে এসেছে অন্যভাবে। এখানে চেষ্টা করেছি আমার দেখা বিষয় গুলো পাঠককে বর্ণমালার বর্ননায় ধরে তুলতে।” পুরো বইটি অধ্যায়ন শেষে আমার মনে হয়েছে তিনি ভ্রমণের মাধ্যমে যতটুকু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন পাঠক কুলকে তারচেয়ে অনেক বেশি কিছু দেবার চেষ্টা করেছেন। ইসলামী, সনাতনী, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ ও বাহাই ধর্মের ধর্মপীঠ চর্ম চোঁখে দেখেছেন আর লিখেছেন মনের চোঁখ দিয়ে।

তাঁর বর্ননায় পবিত্র কোরআন, হাদিস, বেদ, গীতা, বাইবেল,ত্রিপিটক এসকল পবিত্র গ্রন্থ সমূহের কথাও বিধৃত হয়েছে। গ্রন্থগত ধর্মীয় রীতিনীতি ও তীর্থভূমি গুলোতে লালিত রীতিনীতির একটি তুলনামূলক চিত্রের পাশাপাশি তিনি সকল ধর্মের মূল বিষয়টিকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।

ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থান মসজিদে হারাম শরীফ, বেহেস্তি পবিত্র কালো পাথর, হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহিমের বর্ণনা যেমন রয়েছে, রয়েছে জাবালে সাওর ও মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিলের স্থান হেরা গুহার চমৎকার বর্ণনা।

আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও আদি মাতা বিবি হাওয়া (আ.) এর মিলনস্থল এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর স্মৃতিবিজড়িত বিদায় হজ্বের ভাষণের স্থান আরাফা ময়দান, অলৌকিক ঝর্ণাধারা (আবে জমজম)র উৎপত্তিস্থল বা কূপের বর্ণনা পড়ে পাঠক মাত্রই আবেগাপ্লুত ও পুলকিত হবে।

আজমির শরীফের ধর্মীয় অনুপ্রেরণাদায়ক ইতিহাস, সূফি মতবাদের প্রচারক নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কথকতা, বাংলাদেশের বিখ্যাত কিছু স্থাপনা, মসজিদ, মাজারের ইতিহাসও ফুটে উঠেছে লেখকের লেখায়।

মুর্শিদাবাদের ইমামবাড়ায় নবাবী আমলে মহরমের মতম, শিয়া মুসলমানদের পবিত্র স্থান হোসেনী দালানের কথকতা। গুজরাট রাজ্যের সোমনাথ মন্দিরের কথা,পৌরাণিক কাহিনির কামরূপ কামাখ্যা, দেবী ত্রিপুরা সুন্দরী, ভবতারিণী কালিমন্দির সহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া শহরে সর্ব ধর্মের ঐক্যের বেলুড় মঠের ইতিহাস বিবরণ পড়তে পড়তে আপনি হয়ে উঠবেন একজন সত্যিকার মানুষ।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বরিশালে ধর্মীয় সংস্কৃতির অনন্য দৃষ্টান্ত অক্সফোর্ড মিশন লাল গীর্জা, ভারতের নয়া দিল্লিতে অবস্থিত বাহাই সম্প্রদায়ের অন্যতম পূজা অর্চনার স্থান কমল মন্দিরের বর্ননা ও তাদের জীবনাচার আপনাকে নতুন কিছু ভাবতে শেখাবে।

ধর্ম সমাজ কাঠামোর একটি মৌলিক উপাদান।
“সকল ধর্মই সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ববোধের কথা বলে। ধনী- গরীবের ব্যবধান; সাদা-কালো, বংশ গৌরবের অহমিকা ধর্মে নেই। এসবের বাস কেবল মানুষের মাঝে। ধর্মে সাম্প্রদায়িকতার তিল পরিমাণ স্থান নেই। এতদ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে জোরজবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথকে সঠিক মত ও পথ থেকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। ’ -সূরা বাকারা :২৫৬
সুতরাং ‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য। ’ -সূরা কাফিরুন : ৫।

আমার দীর্ঘ বিশ্বাস, লোকমান হোসেন পলা’র লেখা “আমার এই পথ চলাতে আনন্দ” লেখককে খ্যাতির চরম শিখরে পৌঁছে দিবে। বইটির পাঠক, প্রচলিত সকল ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের ইতিহাস পড়ে নিজেকে ধর্মীয় বিষয়ে সমৃদ্ধ করতে পারবে। পাশাপাশি একাধিক ধর্মের ভীড়ে সেরা ধর্মটিও খুঁজে পাবে।

লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD