বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন

হাসনাইন সাজ্জাদী’র কবিতা

হাসনাইন সাজ্জাদী’র কবিতা

ফিরতে না পারার বেদনা

হাসনাইন সাজ্জাদী

কারো কারে ফিরে যাওয়া আসা বেশ স্বতঃস্ফূর্ত হয় সফল হয়
কারো ফিরতে না পারার দুঃখ থাকে
ফিরে যাওয়া আসার মধ্যে যে শান্তি তা
সেই ভাল করে জানে যে ফিরতে পারে অনায়াসে
আর যার ফিরে আসা যাওয়া বিড়ম্বনায় কবলে
পড়ে যায় সে জানে দুঃখটুকু শুধুই তার
আটকে পড়াদের কষ্ট কত গভীরে কিংবা
একেবারেই ফিরতে না পারায় মনের ভেতরে
জ্বলে থাকা আগুন কি ভয়ানক তা জানে
ভুক্তভোগী জন ভুক্তভোগীদের হৃদয়ে
জ্বালিয়ে রাখা কষ্ট
গ্যাসের চিমনিতে ধোঁয়া হয়ে
ছড়িয়ে যায় হয়তো অনায়াসে অথবা
ছড়ায়ন না চারদিকে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় যারা ছাড়ে ভিটেমাটি
তাদের কষ্ট থাকে কিন্তু ফেরার পথ থাকে না।
হিন্দু কী মুসলিম কী রোহিঙ্গা কী ফিলিস্তিনি
তাদের বাস বাংলাদেশ ভারত মায়ানমার কী ফিলিস্তিন?
সবারই অবস্থা এক বিতাড়িত তারা আশ্রিত
যারা ছেড়ে যায় মাতৃভূমি বা ছেড়ে আসে
এপার ওপার দাঙ্গায় পড়ে
তাদের মনের কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই পূর্বভারতের ত্রিপুরা শিলচর মেঘালয় কিংবা
পশ্চিম বাংলার পথে পথে।
তারা স্মৃতিচারণ করে কত সুন্দর করে দুঃখ ভরা হৃদয়ে
ঐযে দীঘিটার পূর্বপাড়ের বড়ো বটবৃক্ষ তার আড়ালে যে দেব কুটির সেটি আমার ঠাকুরদার ছিল
দুর্বৃত্তদের হামলায় সর্বস্ব হারিয়ে তিনি এসেছেন
এ ভূমে,
কিংবা লোহার পুলের পরেই যে দেবালয় তার লাগোয়াই আমাদের পূর্বপুরুষদের ভিটে মাটি ছিল আমার পিসি মশাইর বাড়ি ছিল আরো দু’বাড়ি পরে
তিনি পাড়ায় ছিলেন জনপ্রিয় চিকিৎসক
যাদেরকে অসুখ বিসুখ থেকে বাঁচাতেন চিকিৎসা দিয়ে
মুখোশ পরে তারাই এক রাতে এসে চোরা হাতে
হুমকি দিয়ে বললে
বেরিয়ে পড়বেন খালি হাতে একদম এখনই
ভোর হবার আগেই বোর্ডার পার হবেন
না হবে পৈত্রিক প্রাণটা যাবে
উপায় ছিল না বলে আমরাও সঙ্গী হলাম তার
গায়ে কাপড় জড়িয়ে শুন্য হাতে।
এভাবে কত দীর্ঘশ্বাস আর কত চোখ ছলছল জল
দেখে আসা আমি
আমার মত অনেকেই এ তথ্য জানে যারা
ভ্রমণে যাওয়া আসা করে এ বাংলা ও বাংলা
তাদের না ফিরতে পারার যন্ত্রণা আমি আমরা
অনুভব করি সচক্ষে
অনূভুতিতে উপলব্ধিতে আরো কত শত।
কিংবা নির্বাসনে পাঠানো দাউদ হায়দার তসলিমা নাসরিন
ফিরতে পারবে না যারা হয়তো আর কোনদিন মাতৃভূমে
দেশহীন লুৎফর রহমান রিটন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
দ্বৈত নাগরিক শাহাদাৎ হোসেন খোন্দকার
ফকির ইলিয়াস কাজী জহিরুল ইসলাম
তাদের অনেকেরই ফিরার আগ্রহ নেই
তবে তারা কি দুঃখী নয় দেশছাড়া জীবনে।
সিলেট থেকে পারাবত ট্রেন ছেড়ে এসে আমাকে
রেখে পাশ কেটে কুলাউড়া হয়ে চলে গেলে ঢাকায়
আমি যে যন্ত্রণা ভোগ করি
পঁয়ত্রিশ বছরের প্রিয় ঢাকায় না যেতে পারার যে যন্ত্রণাকে আমি জানি
তাদের দুঃখ কত যারা পৈত্রিক জন্মভিটায়
না ফিরতে পারায় কষ্ট ধারণ করে আছে বুকে
কত সুনসান অন্ধকার কষ্ট এসব নিরেট কষ্ট
আমি তার কমবেশি জানি মরমে মরমে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD