স্বাধীনতার লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা বাংলার সূর্য সন্তানদের একজন তিনি।নাম তার প্রীতিলতা।পুরো নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। মা-বাবা আদর করে ডাকতেন ‘রাণী’। প্রীতিলতা চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। আই.এ. পড়ার জন্য তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩০ সালে আই.এ. পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন। এই ফলাফলের জন্য তিনি মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান এবং কলকাতার বেথুন কলেজ়ে বি.এ পড়তে যান। ১৯৩২ সালে ডিসটিংশান নিয়ে তিনি বি.এ. পাশ করেন।
পুরো ভারতবর্ষে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ইংরেজদের একটি ক্লাব ছিলো চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে। গেইটের বোর্ডে লিখা ছিলো ‘ডগস এন্ড ইন্ডিয়ানস আর নট এ্যালাউড’। আমাদের নিজেদের মাটিতে আমাদেরকেই কুকুরের সাথে তুলনা! প্রীতিলতা মানতে পারলেননা। তিনি তুখোর ছাত্রী ছিলেন, আই.এ পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিলেন, বি.এ পরীক্ষা শেষ। নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের খুব কাছে তখন তিনি। কিন্তু ইংরেজের অপমানের বদলা নিতে হবেনা? দেশ স্বাধীন করতে হবেনা?
চট্টগ্রামেরই আরেক কিংবদন্তী মহান বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেনের দলে যোগ দিলেন তিনি। তাকে ছদ্মনাম দেওয়া হলো ‘ফুলতার’। ১৫ জনের একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়া হলো ফুলতারকে। বেশ ক’টি সফল অপারেশন করলো এই দলটি। একসময় নিজের দল নিয়ে ফুলতার আক্রমন করলেন ঐ ইউরোপীয়ান ক্লাব। উদ্দেশ্য- বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া। সব বিপ্লবী ক্লাবের ভেতরে চলে গেলেন। একটু পরই হবে বিস্ফোরণ। কিন্তু শেষ সময়ে ইংরেজ সৈন্যরা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো তাদের। অনেকে পালিয়ে গেলেও উঁচু দেওয়াল টপকে পালাতে পারলেননা সদ্য একুশে পা রাখা প্রীতিলতা। নিজের সাথে থাকা সায়ানাইড ক্যাপসুল খেয়ে আত্মহত্যা করলেন ইংরেজদের হাতে আটক হবার মূহুর্ত আগে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মদিন আজ। ১৯১১ সালের ৫ মে জন্মেছিলেন তিনি। ১৯৩২ এ মারা যান। আমরা সবাই যাবো, মৃত্যুকে কেউ পাশ কাটাতে পারবোনা। আমাদেরকে কয়জন মনে রাখবে? তবে প্রীতিলতাকে ভুলতে পারিনা আমরা। প্রীতিলতার নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল আছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও আবাসিক হল আছে। কতো নাটক-সিনেমায় তাকে সম্মান জানানো হয়েছে! আমি আমার দুই মেয়েকে প্রীতিলতার গল্প বলি। ভাবি, আমার মেয়েরা কি বড় হয়ে দেশটাকে ভালোবাসবে? দেশের কাজে লাগবে? চোখ বেয়ে পানি পড়ে আমার, মেয়েদেরও চোখ ছলছল করে। তারাও হয়তো প্রীতিলতার মতো সাহসী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর বাবা শোকে-দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা আমৃত্যু গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে’। দেশের জন্য মরণের চাইতে গৌরবের আর কিই বা আছে?
(তথ্য সূত্র:সংগ্রহীত)
Leave a Reply