১ এপ্রিল : জন্মদিনে আমি
ফেরদৌস সালাম
০১ এপ্রিল,১৯৫৬। বাবা মার প্রথম সন্তান হিসেবে আমার জন্ম মাতুলালয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বিয়ারার ছ’আনির তালুকদার বাড়িতে। দাদার বাড়ি একই উপজেলাধীন বারইপাড়া।দুগ্রামের দূরত্ব ছয় কিলোমিটার হলেও তখন এটি ছিল অনেক দূরের পথ।
নানাজান তালেব আলী তালুকদারের কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় তিনি যারপর নাই খুশি হয়েছিলেন।আমার জন্মসময় ছিল সম্ভবত শেষ রাত।
নানার চাচা মুন্সী ফয়েজ তালুকদার সংবাদ পেয়েই
আজান দিয়ে আমার সগৌরব আগমনের কথা সোল্লাসে জানিয়ে দিয়েছিলেন।ফজরের আগে হঠাৎ আজান শুনে শরিক ও প্রতিবেশি স্বজনেরা রাতেই
ভিড় করেছিলেন তালুকদারবাড়ির মেঝ তরফের
দাওয়ায়।নানীজি তখনও শঙ্কিত তার সালেহার সদ্যপ্রসূত সন্তানকে নিয়ে।কারণ আমি খুবই কম ওজনের শিশু ছিলাম।এতোটাই ছোট যে নানী বলতেন বিড়াল ছানার চেয়েও ছোটটি।দুধ খাওয়ার সময় পেট পর্যন্ত যাচ্ছে তা দেখা যেতো।নানী আমাকে সেই যে কোলে তুলে নিয়েছিলেন ৫ দিন আর নিচে মার কাছে দেননি।অনেকেই আমার বাঁচার আশা ছেড়ে দিলেও বিয়ারার ঐতিহ্য হাজী মুন্সী রমজান আলী তালুকদারের কন্যা আমার নানী সরাসরি আজরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে বলেছিলেন দেখি কার সাধ্য আমার বুক থেকে সালেহার ছেলেকে কেড়ে নেয়।তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার এক দানশীল রমণী। জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলেননি। তখনকার দিন ছিল খুবই অভাবের।কতো মানুষ না খেয়ে থাকতো।নানীকে দেখতাম তাদের ভাত খেতে দিতে,চাল দিতে। এ নিয়ে নানাজান কখনো রাগ করলে বলতেন আমি নই, আল্লাহ ওদের রিজিকের ব্যবস্থা করছেন।
আমার আব্বা তখন ময়মনসিংহ শহরে ছিলেন।খবর পেয়ে আসেন। বারইপাড়া থেকে দাদাজান সোনাউল্লাহ সরকারও আসেন আনন্দ উচ্ছ্বাস নিয়ে।
সেই আমি আল্লাহর অপার রহমতে ৬৬ পেরিয়ে ৬৭ তে
পা রাখলাম।
বাবা ও মা উভয়ের পরিবারই ছিল শিক্ষিত ও গ্রাম পর্যায়ে ধনী ও সম্ভ্রান্ত। যথেষ্ট কৃষি জমির মালিক ছিলেন। ছোট বেলায় দেখেছি আমাদের গোয়ালে ২০/২৫ টি গরু থাকতো।এর মধ্যে সবসময়ই ৪/ ৫ টি দুধেল গাভি থাকতোই। অর্থাৎ দুধে ভাতে মাছের পরিবারের একটি ছিলাম আমরা।
ছোটবেলা ঘিরে অনেক স্মৃতি।বাবা এম হজরত আলী ছিলেন তৎকালীন ইস্টপাকিস্তান জুট মার্কেটিং কর্পোরেশনের পারচেজিং অফিসার। বাবার সাথে আমরা ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ঈশ্বরগন্ঞ্জ, কটিয়াদি,ময়মনসিংহ থাকার সুবাদে বিভিন্ন স্কুলে পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের বাড়িতে থেকে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা পালন।এস এস সি পাশ করি ১৯৭২ সালে কালিহাতী আর এস বি হাই স্কুল থেকে। এরপর টাঙ্গাইল শহরের প্যাড়াডাইসপাড়ার আমঘাট রোডের বাসায় স্হায়ীভাবে বাস করতে থাকি।ভর্তি হই করটিয়া সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ এম এস এস করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি।ছাত্রজীবনেই সাংবাদিতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ।পরে বি আর সি পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকিং পেশায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সম্মানজনক পদে চাকরির সুবাদে মানুষের জন্য কাজ করতে পেরেছি। ছোটবেলা
থেকেই পাঠ্য বইয়ের ছড়া কবিতা পড়ে কবিতা লেখার প্রতি আকৃষ্ট হই। মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারায় আমি গর্বিত ।
ছাত্রজীবনে জাতীয় ছাত্র দল টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মওশানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা মিছিলে অংশগ্রহণও স্মৃতি হয়ে আছে।পরবর্তিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাই।১৯৮৩ সালে বিআরসির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে প্রবেশনারী অফিসার হিসেবে যোগদান।১৯৮৮ সালে সোনালী ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরে
ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।
রাজনীতি করলেও স্কুল সময় থেকেই কবিতা লিখি।গল্পও।পত্রিকা সম্পাদনার সাথেও জড়িত। এখন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের এনজিও-এমএফআই বুরো বাংলাদেশের কোঅর্ডিনেটর এবং এনজিও সেক্টরের মুখপত্র প্রত্যয় এর সম্পাদক।দেশের শীর্ষ অর্থনৈতিক পত্রিকা অর্থকথার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক (প্রদায়ক)ও মাদারল্যান্ড টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক।একসময় বিটিভির মানিলিঙ্ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও গবেষক। দৈনিক দেশবাংলার স্টাফ রিপোর্টার ছিলাম ১৯৮০ -১৯৮২ সালে।এছাড়াও দৈনিক জাহান, সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ,সাপ্তাহিক স্লোগান,অর্থকন্ঠ, মাসিক ব্যাংকারসহ বিভিন্ন কাগজে কাজ করেছি। নিজস্ব সাহিত্য পত্রিকা শিল্প সাহিত্য। ২৫ বছর ধরে চলছে।
প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১১। টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পদকসহ অসংখ্য স্বীকৃতি লাভ।
কারো কবিতা ভাল লাগলে অকপটে বলি। বিশুদ্ধ কবিতা লেখার চেষ্টা করি।সনেট এর বিষয়ে বেশি আগ্রহী। একসময় নিয়মিত কলাম লিখতাম।
Leave a Reply