শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন

হেমন্ত নিয়ে ভাবনা -রুপা খানম

হেমন্ত নিয়ে ভাবনা -রুপা খানম

হেমন্ত নিয়ে ভাবনা রুপা খানম ।

হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাসের সমন্বয়ে গঠিত।শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন।এ সময় বাংলার প্রকৃতি কিছুটা ধূসর আর বিবর্ন থাকে।গাছের পাতা ঝরতে শুরু করে । ভরের আবছা কুয়াশায় ঢাকা থাকে বাংলার চারপাশ।তেমনি ভাবে অটামে বিদেশেও গাছের পাতা পরতে শুরু করে।রাস্তা ঘাটে শীতল ইমেজ ।সবাই যেন শীতের গরম কাপড় বের করে পরিধান করে ।তীব্র গরমের পর এই নাতিশীতষ্ণ আবহাওয়া দেশ বিদেশে সবাই যেন প্রান ভরে উপভোগ করে ।ফলে প্রকৃতির এক ভিন্ন রুপ প্রকাশ পায় ।এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য লালিমায় বাংলার ঋতুর রানী হেমন্ত।

আমেরিকায় হেমন্ত কে অটাম বলা হয় । রূপের ঋতু হেমন্ত নিয়ে আসে গাছে গাছে পাতার রং এর বিশালতা । শীত প্রধান দেশে হেমন্ত মানে অটামের সময় গাছের পাতার রং এর সৌন্দর্য চোখ ধাঁধানো সৌরভ যেন প্রকৃতিকে মায়ার জালে আবদ্ধ করে।সত্যি কি অপরুপ এই হেমন্তের প্রাকৃতিক চিত্র । কোথাও সবুজ কোথাও লাল , কমলা , হলুদ, বাদামী রং এর সমারোহ ।বহু পর্যটক এক দেশ থেকে অন্য দেশে এই সময় বেড়াতে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ।

এই দেশে হেমন্ত (অটম) এলে হ্যালোইন করতে বাচ্চারা নানান রকম ভীতিকর ভূতের সাজে উৎসব পালন করে ।সন্ধ্যা নামতে ঘরের বাহির হয়ে আশে পাশের ঘরে ঘরে দরজা কড়া নেড়ে ক্যান্ডি নিয়ে ঘরে ফিরে ।শীত প্রধান দেশে অটামের আগে আগে বাচ্চাদের জন্য এ যেন এক বড় ধরনের আনন্দ ।বাচ্চাদের জন্য নানান রং এর আলোক বাতি আর চকলেট দিয়ে হ্যালোইন আনন্দ সাজানো হয়ে থাকে ।হ্যালোইনের জন্য কমলা রংএর মিষ্টি কুমড়া দিয়ে জ্যাক ও’লান্টার্ন তৈরী করে দরজার বাহিরে রেখে দেয় ।তার মধ্যে আলো দিয়ে ভূতের ভীতি তৈরী করা হয় ।

আবার এই অটমে খৃষ্টানদের ধর্মীয় ছুটির দিন থ্যাংকস গিভিং এলে মিষ্টি কুমড়া , মিষ্টি আলু সকল রঙিন ফল ব্যবহার করে সাজানো হয় ফিষ্ট ।এ ঋতুতে সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রকৃতিতে বেজে ওঠে শীতের আগমনী বার্তা।হেমন্তে বাংলাদেশে মাঠের পাকা সোনালি ধান কাটা ও ঘরে তোলার দৃশ্য সবই যেন রূপের অনুষঙ্গ।হেমন্তের ছোয়ায় প্রকৃতি পায় এক নতুন প্রান ।ভোড়ের সূর্যের সাথে সাথে গাছের পাতা ঝলমল করে উঠে ।পাতার ফাকে সূর্যের আলো উঁকি মেরে খেলা করে ।

জীর্ন প্রকৃতিতে অন্য সময়ের থেকে হেমন্ত তে গাছে গাছে ফুল হয় কম । তারপরও হেমন্তজুড়েই শোভা পায় দেবকাঞ্চন ,স্থলপদ্ম, দৈগোটা ,কচুরি পানার ফুল ,শিউলি ফুল , কামিনী ,গাঁদা ফুল , ডালিয়া , গোলাপ,আরো অনেক ধরনের বসন্তের ফুল ।এই সময় ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির কিট পতঙ্গ তাই প্রকৃতি কিছুটা মহনীয় হয়ে উঠে ।হেমন্তের আকাশ জুড়ে থাকে সাদা সাদা মেঘের ভেলা ।এই সময় কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি তোলার সময় ।ঘরে ঘরে চলছে ধান মাড়াই।নবান্নে মাঠজুড়ে সোনালি ধানের কৃষকের হাসি ।নবান্ন মানে নতুন চাল ।

রাখাল বাজায় মধুর বাঁশি।বিল ঝিলে দেখা যায় শাপলা শালুক ।হীমশীতে ছুটে যায় জেলেরা ঝিলে মাছ ধরার জন্য।বিভিন্ন ধরনের পাখিদের দেখা যায় শীত প্রধান দেশ থেকে উড়ে আসে হেমন্তের সময় ।এই সময় গাছে গাছে কিছু ফল দেখা যায় ।পেপে , নারিকেল , কামরাঙ্গা,।প্রকৃতি দেখে কবি লিখেন কবিতা ।ছড়াকার লিখেন শ্বাশত ছড়া ।বাউল মনে জাগে নতুন সুর ।গাতক বান্দে নতুন গান।বাউল তার বাঁশের সুর আর একতারা বাজিয়ে বসন্তের নতুন সুরে গ্রামের মেঠো পথে হেটে যায় বহুদূর ।

হেমন্তের আকাশে সারারাত মিটি মিটি তারার মেলা থাকে। পাশা পাশি চন্দ্রালোকের বিচ্ছুরণে ঝলমলিয়ে উঠে বাংলার প্রকৃতি।আধার গড়িয়ে ভোর হয় ঝিরি বাতাস আর মৃদু আলোতে হেমন্তের সকাল এক মোহনীয় শোভা পায়। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন ,আউশ কর্তিকে পরিপক্ক হয়।সোনালী ধানের মৌ মৌ গন্ধে ফসলের মাঠ ভরে উঠে ।কৃষকের ঘরে ফসল তোলার প্রস্তুতি শুরু হয় ।কাস্তে হাতে কৃষকরা মাঠে মাঠে ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পরে ।নতুন ফসলে কৃষকের প্রান জুড়ায় ।বাংলার মা বেনেরা ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকায়ে তাকে ঢেকি এবং মেশিনে চালে রুপান্তরিত করে ।শীতের পিঠা , পায়েস ,রুটি এই সময় যেন আলাদা বৈচিত্র আর আনন্দ আনে ঘরে ঘরে ।গৃহস্ত থাকে ব্যস্ত নতুন ধান নিয়ে। উৎসব মুখরিত হেমন্ত যেন মুগ্ধতাই আচ্ছন্ন থাকে ।এই হেমন্তে শীত আসার আগে খেজুরের রসের জন্য গাছ কাটার প্রস্তুতি।নবান্ন আর পিঠা পুলির আনন্দে মাতোহারা থাকে ঋতুরাজ হেমন্ত ।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD