শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

সজনে চাষ হোক সড়কে মহাসড়কে – পরেশ কান্তি সাহা

সজনে চাষ হোক সড়কে মহাসড়কে – পরেশ কান্তি সাহা

“সজনে চাষ হোক সড়কে-মহাসড়কে”

সজনে চাষ কেন করবো ?
সজনে পাতা,ফুল ও ডাটা পুষ্টি মানে ভরপুর। গবেষকরা সজনের পাতাকে নিউট্রিসন্স সুপার ফুড বলে থাকেন। আর গাছকে বলেন মিরাক্কেল ট্রি।
এতে আছে সমৃদ্ধির এক অফুরন্ত ভান্ডার :
* সজনের পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভিটামিন এ – এর এক বিশাল উৎস। পাতা, ফুল ও ডাটা পুষ্টিমানে ভরপুর বলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট পরিমাণ আছে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন- প্রতি গ্রাম সজনে একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালশিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চারগুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিনগুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফলে এটি অন্ধত্ব,রক্ত স্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
* এতে প্রচুর পরিমাণে জিংক থাকে এবং পালন শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রণ বিদ্যমান, যা এনিমিয়া দূরীকরনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
* সজনে শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।
* মানুষের শরীরে প্রায় ২০% প্রোটিন যার গাঠনিক একক হলো এমাইনো এসিড। শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ম্যাটাবোলিজম এবং অন্যান্য শরীরবৃত্তীয় কার্যাবলী পরিপূর্ণ ভাবে সম্পাদনে এমাইনো এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরের যে নয়টি এমাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করে,তার সবগুলাই এর মধ্যে বিদ্যমান।
* নিয়মিত দৈনিক সেবনে শরীরের ডিফেন্স ম্যাকানিজম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এবং ইমিউনিটি স্টিমুলেন্ট হওয়ার দরুন এটি বসন্ত ও এইডস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্রতিশেধক-এ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
* শরীরের ওজন কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা করে।
* মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। পাতা গুড়ো করে এক টেবিল চামচ পাউডারে ১৪% প্রোটিন ৪০% ক্যালশিয়াম ২০% আয়রন বিদ্যমান, – যা ১ – ৩ বছরের শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্তায় এবং বুকের দুধ খাওয়াকালীন ৬ টেবিল চামচ পাউডার প্রতিদিনের আয়রন এবং ক্যালশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।
* এটিতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যে কারনে যকৃত ও কিডনী সুস্থ রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে কাজ করে।
* সজনেতে প্রায় ৯০টির বেশি এবং ৪৬ রকমের এন্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান।
* এতে ৩৬ টির মতো এন্টি ইনফ্লামেটোরি বৈশিষ্ট্য আছে যা বাথবা্যাথাও কাজ করে। এছাড়াও অকাল বার্ধক্য জনিত সমস্যা দূর করাসহ এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ডা: লয়েন ফিউগিলের মতে-দৈনিক এই পাতা গ্রহনে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নেই।
জাবর কাটা প্রাণী অর্থাৎ গবাদিপশু, হাঁস ,মুরগী ও মাছের এর পাতা খাদ্য গ্রহনে প্রোটিন এবং ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে।
সতর্কতা : সজনের মূল অনেক সময় বিষাক্ত হতে পারে,-যা সণায়ুকে অবশ করে দিতে পারে। তাই মূল খাওয়ার ক্ষেত্রে এটা বর্জন করাই শ্রেয়।
রোপন পদ্ধতি : ডাল এবং বীজ উভয় পদ্ধতিতে সজনে চাষ করা যায়। গ্রামগঞ্জে ডাল মাটিতে পুতে গাছ তৈরী করে। ডাল উল্টোভাবে লাগালে সেটা হয় নাজনে। সজনে থেকে নাজনে আকারে ছোট হয় এবং সুস্বাদু। সজনে শেষ হলে শুরু হয় নাজনে। চৈত্র-বৈশাখ বা এপ্রিল মাসে চাষ করতে হয়। বীজ দিয়ে বিজতলা তৈরী করে সেখান থেকে তুলেও সারিবদ্ধভাবে এর চাষ করা যায়। সজনে বীজ ডাল হিসাবেও খাওয়া যায়। দোয়াঁশ মাটি এবং যেখানে জল জমে না সেখানেই এর চাষ করা যায়। লাগানোর সময় পরিমাণ মতো জৈব ও কৃত্রিম সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এতে গাছ ও ফল সন্তোষজনক হবে।
কৃষিবিদ মো: মোশাররফ হোসেনের তথ্য থেকে জানা যায় বারোমাসি সজনের চাষ যশোর হর্টিকালচারে উদভাবিত হয়েছে। এখন এর প্রয়োজন এটি বাস্তবায়ন। যদিও ঝোঁপ জঙ্গলে বাড়ির আনাচে কানাচে এই গাছ হয়, তার পরেও আধুনিক পদ্ধতিতে সড়ক ও মহাসড়কের দ’ুধারে সারিবদ্ধ ভাবে এর ব্যাপক চাষ করা যেতে পারে। কচি অবস্থায় প্রতি কেজি ৪০০টাকা এবং বতি বা পুষ্ট হলে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বারোমাসি সজনে এক বিঘা জমিতে বছরে চার লাখ টাকা আয় হয়। এর চাষ বৃদ্ধি পেলে একদিকে যেমন অপুষ্টি – অন্ধত্ব সহ তিনশ ধরনের রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনীতিতে এক স্বর্ণালি আলোকবর্তিকা বয়ে আনতে পারে। এখন প্রয়োজন সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করে জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করা।

পরেশ কান্তি সাহা
বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি ও গবেষক।
ক্ষণিকা ১৪ / ১ সাহাপাড়া,মাগুরা।
মোবাইল নং : ০১৭১৬৮৫৩০৫৪

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD