শাহানা জেসমিন
শোকাবহ আগষ্ট
“বঙ্গবন্ধু মনে ও মননে”
তোমরা সবাই শুনো আমার মনটা আজ
এত ভারাক্রান্ত কেন?
সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলায় ঘেরা আমার মাতৃভূমি
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ যার জন্ম হয়েছে
অসীম ত্যাগের বিনিময়ে
বঙ্গবন্ধু তার নাম রেখেছেন বাংলাদেশ ।
এই নামকরণ সম্বলিত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র রচনায় যাঁর অসামান্য অবদান
তিনি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিবুর রহমান ।
যিনি জন্ম না হলে এদেশ হতো না স্বাধীন
পরাধীনতার শিকল পায়ে,
শৃঙ্খল ভাঙার গান গাইতে হতো চিরদিন ।
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভেঙ্গে করে খান খান
পায়ের শিকল বিকল করে নব আনন্দে নবীন সুরে,
নব নব উদ্যমে মুক্ত বিহঙ্গের মতো সারিবদ্ধ ভাবে
তিনি চলতে শিখিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে ।
যাঁর কণ্ঠের উচ্চারিত শব্দে
ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতো নিষ্কন্টক জীবনাচারের বার্তা
আবাল বৃদ্ধ বণিতার সুখে থাকার আশ্বাস ।
সে আশ্বাসকে পদদলিত করে ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল
কতিপয় স্বার্থান্বেষী কুচক্রী হিংস্রসেনা মানুষখেকু হায়না
আমার প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমির জন্মদাতার বুক
বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছিল
আগষ্ট মাসের পনের তারিখ।
তাই প্রতিবার আগষ্ট এলে
হৃদয় গহণে করুণ তরঙ্গ তুলে
অজস্র অশ্রু কপোল গড়িয়ে মাটিতে পড়ে ।
কেননা বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম নেক্কার জনক
পৈশাচিক কাণ্ড যে রচিত হয়েছিল এই মাসেই।
কুখ্যাত কুলাঙ্গাররা এ মাসেই কেড়ে নিয়েছিল
জাতির পিতার প্রিয়তমা পত্নী
শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রাণ ।
জাতি হারালো এক সর্বংসহা রমণী
যিনি শিখিয়ে ছিলেন কিভাবে শত প্রতিকূলতায়
পরম মমতায় আগলে রাখতে হয় সন্তান সন্ত্বতি ।
বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে দিতে,
বংশের প্রদীপ নিভাতে কেড়ে নিয়েছে
বঙ্গবন্ধুর প্রাণ প্রিয় পুত্র শেখ জামাল,শেখ কামাল ও
দশ বছরের শিশু পুত্র শেখ রাসেলের প্রাণ।
কুলাঙ্গারেরা তাতেও ক্ষান্ত নয়
রক্তে লেপন করেছে পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও
পারভিন জামাল রোজীর মেহেদী রাঙা হাত
বর্বরোচিত পাষণ্ডতায় বুলেটের আঘাতে
সযতনে আঁকা ভালোবাসার কাব্য
রক্তের ফোটা হয়ে মাটিতে লুটায়।
এ রক্তের মিছিল এখানেই শেষ নয়
ওরা এক এক করে কেড়ে নিয়েছে
জাতির পিতার প্রিয় জন্মসহোদর ভাই
মা সায়েরা খাতুনের আদুরে দুলাল
শেখ আবু নাসেরের প্রাণ।
রেহাই দেয়নি বাড়ির টুকিটাকি কাজের সাহায্যকারী বকুলকেও।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাতির পিতাকে
বাঁচাতে চেয়েছিলেন কর্ণেল জামিল উদ্দীন আহমেদ
আর নাম না জানা এক তরুণ
তাঁদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছে মাটি।
এ মৃত্যুর মিছিলে সারি সারি লাশের কাতারে
আরো যাঁরা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্বজন
তারা হলেন আব্দুর রফ সেরনিয়াবাদ,
শেখ ফজলুল হক মণি,বেগম আরজুমণি
,বেবিসেরনিয়াবাদ, আরিফ সেরনিয়াবাদ,
সুকান্ত আবদুল্লাহ,শহীদ সেরনিয়াবাদ,
আব্দুল নঈম খান রিন্টু।
এ কেমন মৃত্যু স্তব্ধ করে দিয়েছে
ধানমণ্ডীর ৩২ নম্বর বাড়ির আকাশ বাতাস
,জলকণা পাখির কুজন আর জনারণ্যের কোলাহল।
নিভিয়ে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রাণপ্রিয় তনয়া
হাসুুমণি ও রেহানামণির দ্যুতিময় সমস্ত প্রদীপ,
মাতৃক্রোড়ের উষ্ণতা, সুনির্মল আশ্রয়,ভাইয়ের স্নেহ
আর সেই থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে শুরু হলো পাহাড় সম বেদনা
সমুদ্রসম অন্তহীন কষ্টের বুক ফাঁটা যন্ত্রণা
হাহাকার শোকের মাতম ।
প্রিয় মাতৃভুমির পিতা,মাতা, ভাই
আর স্বজন হারাবার বেদনায়
কোটি কোটি মানুষের অঝর ধারায় অশ্রু
কপোল গড়ায় ।
এ দৃশ্য অবলোকন করছি
শৈশব কৈশোর যৌবন ও প্রৌঢ়েও
আগষ্ট তাই শোকাবহ মাস
আমাদের কাছে নিঃসন্দেহে।
ব্যথা ভরা মন নিয়ে প্রতি আগষ্টেই
মোমবাতি প্রজ্বলিত হয়
পিতার ধানমণ্ডির বত্রিশ নং বাড়িতে
যেখানে আমাদের অস্তিত্বের বীজ নিহিত রয়েছে ।
হে প্রিয় স্বদেেশ তুমি
কখনো ক্ষমা করো না বেঈমান নিমক হারামদের
যারা আপন স্বার্থ চরিতার্থে হত্যাকরে জাতির পিতাকে
রচনা করে বিশ্বের বুকে কলঙ্কিত অধ্যায়
তাদের তুমি, তোমার কঠিন মৃত্তিকার ভয়ঙ্কর প্রকোষ্ঠে স্থান দিও নির্দিধায়।
Leave a Reply