শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন

শহীদ শেখ কামালের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

শহীদ শেখ কামালের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

শহীদ শেখ কামালের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের
৭২তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
মো: আব্দুল মালিক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা যুবনেতা শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতির পিতার হত্যাকারী, মানবতার ঘৃণ্য শত্রুদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদত বরণ করেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্য রকম একটা জোয়ার আনার চেষ্টা করেছিলেন শেখ কামাল। বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতির গুণগত মানের পরিবর্তনের চেষ্টা ছিল তাঁর। সরকারের প্রধান নির্বাহী ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির ছেলে হয়েও দলের উঁচু পদের দিকে তাঁর কোন মোহ ছিল না। সাধারণ কর্মী হিসেবেই কাজ করতেন তিনি। ছিলেন উদ্যমী পুরুষ। সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে খেলার মাঠ সর্বত্র ছিল সমান দাপট। এই প্রাণবন্ত তরুণ প্রতিভাকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি। মূল্যায়ন দূরের কথা, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ শেখ কামালের সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা খুবই প্রসংশনীয়। শেখ কামাল চমৎকার সেতার বাজাতেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে সেই সময় গড়ে তুলেছিলেন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী – যে দলটি দেশের সঙ্গীত জগতে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছিল সেই সত্তরের দশকের প্রথমার্ধে।

দেশের নাট্য আন্দোলনের ক্ষেত্রে শেখ কামাল ছিলেন প্রথম সারির সংগঠক। ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। অভিনেতা হিসেবেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় উৎসাহী শেখ কামাল স্বাধীনতার পর আবির্ভূত হন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠন ও আধুনিক ফুটবলের অগ্রদূত আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা। রাজনীতিতেও তাঁর অবদান কম নয়। ছাত্রলীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী তিনি। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। শাহাদাত বরণের সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কমিশন লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।

শুভ জন্মদিনঃ শেখ কামালের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। বাবা তখন জেলে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন পরিণত হয়েছেন বাঙালি জাতির মুক্তিরদূত হিসেবে। রাজনীতির কারণে প্রায়ই তাঁকে কারাগারে অন্তরীণ রাখে পাকশাসকেরা। খুব ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে এই ছেলেটি পিতার আদর-স্নেহ তেমন পাননি। আজ বেঁচে থাকলে ৭২ বছরে পা দিতেন তিনি। বলা যেত- শেখ কামালের ৭২ তম জন্মদিনে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। কিন্তু হৃদয়ে রক্তক্ষরণের বেদনা নিয়ে আজ জন্মদিনে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করতে হচ্ছে। এই আগস্ট তাঁর মৃত্যুরও মাস।

স্মৃতি অম্লানঃ পিঠাপিঠি বোন-ভাই ছিলেন। শেখ হাসিনা ও শেখ কামাল। ″স্মৃতির দখিন দুয়ার‶ নামের এক লেখায় ছোট ভাই সম্পর্কে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা লিখেছেন- ″কামালের তো জন্মই হয়েছে বাবা যখন ঢাকায় জেলে। ও বাবাকে খুব কাছ থেকে তখনো দেখেনি। আমার কাছেই বাবার গল্প শুনত মুগ্ধ হয়ে। গোপালগঞ্জ জেলখানার কাছে পুকুরপাড়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, বাবাকে নিয়ে যাবে কোর্টে, তখনই আমরা দেখব। আমার শৈশবের হৃদয়ের গভীরে কামালের এই অনুভূতিটুকু আজও অম্লান হয়ে আছে।‶

হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলিঃ বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ″একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নীচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাসিনাকে বলছে, হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি। আমি আর রেণু দুজনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা। কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়।‶

কালরাতের প্রথম শহীদ হন শেখ কামালঃ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রধান লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও এ দিনের ঘটনায় প্রথম শহীদ হন শেখ কামাল। বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে শেখ কামালকে হত্যা করে। আদালতে দেয়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অন্যতম পাহারাদার হাবিলদার কুদ্দুস সিকদারের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, বাড়িতে প্রথম ঢোকে মেজর বজলুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী। সঙ্গে আরও কয়েকজন। বাড়িতে ঢুকেই তারা শেখ কামালকে দেখতে পায়। সাথে সাথে বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে তাঁকে গুলি করে। শেখ কামাল বারান্দা থেকে ছিটকে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষের মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তাঁকে আবার গুলি করে হত্যা করা হয়।

এক বহুমাত্রিক প্রতিভাঃ এক বহুমাত্রিক প্রতিভা, অতুলনীয় তারুণ্য দীপ্ত ব্যক্তিত্ব শেখ কামালের পরিচয় এক কথায় তুলে ধরা অসম্ভব। তিনি তরুণ ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র, ক্রীড়াঙ্গণের সফল ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক আবার মঞ্চের নাট্যকর্মী। তিনিই আবার আধুনিক সংগীত চর্চা করছেন, শিখছেন সেতার বাদন। বয়সটা তাঁর মাত্র ২৬ বছর। এমন এক তরুণকে কি করে এক কথায় পরিচয় দেওয়া যায়! ক্রীড়ানুরাগী, শিল্পরসিক, সাহিত্যামোদি- আবার দারুণ এক প্রতিবাদী সত্ত্বা ধারণ করতেন শেখ কামাল। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি জান্তা সরকার রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করল ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে। তাঁর প্রতিবাদের ভাষা হল রবীন্দ্র সংগীত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যখনই যেখানে সুযোগ পেলেন, তখনই বিশ্বকবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রাখলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতির অঙ্গনেঃ বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী আদর্শবাদী কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন । ১৯৭০ সালে দেশে বন্যা হলে বন্ধুদের নিয়ে ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেন শেখ কামাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, শুরু করে গণহত্যা। সেই রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শেখ মুজিব তখন পাকিস্তানি কারাগারে। শেখ কামাল বাংলা মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এই যোদ্ধা।

শেখ কামাল ও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনঃ শেখ কামালকে অনায়াসেই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অগ্রদূত হিসেবে অভিহিত করা যায়। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড ক্রীড়ানুরাগী। শাহীন স্কুলে পড়ার সময় স্কুল একাদশে নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল খেলতেন। এরমধ্যে ক্রিকেট তাঁকে টানত সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার ছিলেন। নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর প্রচণ্ড গতি দিয়ে খুব সহজেই টালমাটাল করে দিতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে। অবিভক্ত পাকিস্তানের অন্যতম উদীয়মান পেসার ছিলেন, কিন্তু একমাত্র বাঙালি হবার কারণে এবং মুজিবের পুত্র হবার অপরাধে জুয়েল, রকিবুলদের মত এই প্রতিভাও অবহেলিত, উপেক্ষিত হয়েছেন নিদারুণভাবে। আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে শেখ কামাল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র শেখ কামাল বাস্কেটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন। বাস্কেটবলে অসামান্য দক্ষতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর হল শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিল তাঁর পুরোটা সময়। শুধু ক্রীড়াবিদ হিসেবেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের আগেই শেখ কামাল তরুণ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশও করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি প্রথম ধানমন্ডি ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আবাহনী ও আধুনিক ফুটবলঃ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ কামাল শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নয়, ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। বন্ধুদের নিয়ে ধানমন্ডির সাতমসজিদ এলাকায় গড়ে তোলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্র। আবাহনী ক্রীড়াচক্র আজ দেশে-বিদেশে একটি খ্যাতিমান ক্লাব। ক্লাব ভবন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই শেখ কামাল আধুনিকতার নিদর্শন নিয়ে এসেছিলেন। বিশেষ করে ফুটবল খেলায় তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশেই পশ্চিমা রীতির বিপ্লব এনেছিলেন। ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশি কোচ বিল হার্টকে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তখন উপমহাদেশে জাতীয় দলেরই কোনো বিদেশি কোচ ছিল না। ১৯৭৪ সালে আবাহনী যখন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শিল্ড টুর্নামেন্ট খেলতে যায়, তখন আবাহনীর বিদেশি কোচ আর পশ্চিমা বেশভূষা দেখে সেখানকার কর্মকর্তা আর সমর্থকদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল। শেখ কামাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন পুরো উপমহাদেশের ফুটবলে।

ক্রিকেটঃ স্বাধীনতার পর ক্রিকেটকে ঢেলে সাজাবার মাস্টারপ্ল্যান করেছিলেন কামাল। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে তৈরি করছিলেন নতুন দিনের জন্য, আপাত লক্ষ্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। স্বপ্ন কিন্তু এখানেই শেষ নয়, সেটা বহুদূরে বিস্তৃত। হকিতে নতুন দিনের সূচনা করেছিলেন কামাল। তিনি দেশের সমগ্র ক্রীড়াঙ্গণেরই খোল-নলচে বদলে দিয়েছিলেন আধুনিকায়নের ভেতর দিয়ে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে আমরা আরও আগেই আত্মপ্রকাশ করতাম ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে। শেখ কামাল আজ বেঁচে থাকলে আমাদের ফুটবলে এ দুরবস্থা থাকতো না। সব সময় আধুনিকতা আর পেশাদারিত্বের অনন্য সমন্বয়কারী কোনোদিনই আমাদের ফুটবলের এই জীর্ণদশা হতে দিতেন না। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর অভাব পূরণ হবার নয়।

সংস্কৃতির আলোয়ঃ শহীদ শেখ কামাল নাটকে, সংগীতে সক্রিয় থেকেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গণে। শেখ কামাল অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে একটি নাটক কলকাতায় মঞ্চস্থ হয়েছে। এদিকে নাট্যাভিনয় ছাড়া তিনি ভালো সেতারবাদক ছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে সমাজচেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে, মঞ্চনাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি একেবারেই প্রথম সারির সংগঠক ও উদ্যোক্তা ছিলেন। শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

মেহেদির রং না মুছতেইঃ মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে শেখ কামাল সামরিক বাহিনীর চাকুরি ছেড়ে অধ্যয়নে ফিরে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি এখান থেকে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। প্রেমে পড়েন একই বিভাগের ছাত্রী ক্রীড়াবিদ সুলতানার। যাকে সবাই পূর্ব পাকিস্তানের গোল্ডেন গার্ল বলে ডাকতো। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। অথচ নববধূর হাতের মেহেদির রং না মুছতেই নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই কালোরাতে।

ইতিহাসের সেই সূর্য সন্তানঃ মাতৃভূমির ইতিহাসের অন্যতম সূর্য সন্তান শেখ কামাল তাঁর অতি সংক্ষিপ্ত জীবনকে সাজিয়েছিলেন কতই না অসামান্য সব কর্ম দিয়ে। অথচ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে তাঁকে নিয়ে অনেক কুৎসা ছড়ানো হয়। কিন্তু আজ নিরপেক্ষ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সেগুলো সবই ছিল সর্বেব মিথ্যা। শেখ কামাল শহীদ হওয়ার পর অবৈধ সেনাশাসক জিয়া শত চেষ্টা করেও তাঁর নামে কোন বাড়ি, গাড়ী, ব্যাংক ব্যালান্স বা ইন্ডাস্ট্রি পায়নি। শেখ কামালের জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধায় তাঁর স্মৃতিকে স্মরণ করছি। একই সঙ্গে ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করছি।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD