যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে
কিছুটা স্বপ্নের মেলায় গিয়েছিলাম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব তার সময় নির্ধারণ করা ছিলো আগে থেকেই।সন্ধ্যে পৌণে ছয়টা থেকে ছয়টার মধ্যে গান্ধী ভবনের সামনে।তার সামনেই প্রফেসর এমিরেটাস দীপক ঘোষের কার্যালয়।পৌঁছি নয় মিনিট বিলম্বে।গবেষক,সংস্কৃতিকর্মী ও চলচ্চিত্রকার অমলেশ দাসগুপ্ত দাদা আমাদের ১০/২৫ মিনিট আগেই পৌঁছে যাওয়াতে নির্বিঘ্ন ছিলাম।ভাবখানা সিডিউল দাদা সামলাবেন।তাই হলো।
যখন স্যারের নিকট পৌঁছি তখন ৬টা১৫ মিনিট বাজে।নমস্কার জানিয়ে বসে পড়ি।কত প্রতীক্ষিত আমরা একে অন্যের কাছে।আমরা স্যারের কথা শোনবো।বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে যাদবপুরে কী কী হতে পারে তা আলোচনা করবো।আর স্যার অপেক্ষা করছেন -এক মধ্যবয়সী সাহিত্যকর্মীর স্বপ্নের সঙ্গে আরো বেশি পরিচিত হতে।বিজ্ঞান কবিতার ভাবনায় বিস্মিত তিনি।হাল্কা পাতলা মানুষ দীপক ঘোষ।বয়স ৮০ উপরে হবে।মাথায় লম্বা চুল।গলায় মাফলার জড়ানো। অভিজ্ঞ বিজ্ঞান সাধক এবং একই সঙ্গে জনপ্রিয় সাহিত্য কর্মী। বিজ্ঞ মানুষের প্রশ্নের মুখে আমার জবাবগুলো ছিল জড়তাহীন।অন্যদিনের মত তোতলামি বা উত্তর খোঁজে না পাওয়ার কোনো জড়তা ছিলো না।বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিলো স্যারের।উত্তরগুলো মন মত হয়েছে বোঝা গেল।
সংজ্ঞা দিতে গিয়ে যখন আমি বলি- কবিতার উপমা,উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পে বিজ্ঞান থাকতে হবে।বিজ্ঞানের রসায়ন,জীববিদ্যা,পদার্থ বিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা,এ ৪টি বিষয়ের কোনো একটির পরীক্ষাগারে নিরূপিত সত্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু কবিতায় লেখা যাবে না তখন তিনি সাবধান করে দেন যেনো ধর্মের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়াই।তিনি বলেন-ভারত বর্ষের ডাক্তাররা সকাল বেলা পূজো দেয় আর বিজ্ঞানীরা গলে মাধুলী ঝোলায়।এদেশের বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানমনস্ক নয়,সাধারণ মানুষকে বোঝানো সহজ নয়।তবে চেষ্টা ছাড়া যাবে না।যুগে যুগে হাতে গোনা কয়েকজনই বিজ্ঞানমনস্ক থেকে সাধনা করবে। নিবেদিত থাকবে অল্প সংখ্যকই।তবে মানুষ হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় যে জ্ঞান পেয়েছে তাকে লোকবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞান যে নামেই ভাবা হোক,তা ছাড়া যাবে না।’ বিজ্ঞান আসার পর দর্শন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে -আমার এমন ভাবনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন-দর্শন যেকোনো কিছুর ভিতরকার আলো,এমন ভাবলে বিজ্ঞানেরও দর্শন খোঁজে পাওয়া যাবে।’ এত দিনের দর্শন বুদ্ধি ও যুক্তির আলোকে ছিলো।বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে যা পায় তাতে বুদ্ধি ও যুক্তির বাইরে প্রমাণিত তথ্যে চলে যায়।তাই আমি বলেছিলাম দর্শন এখন অপ্রয়োজনীয়।
এত সাদামাটাভাবে জীবন চালান দীপক ঘোষ স্যার।সুন্দর করে অনেক উপদেশ দিলেন আমাদেরকে তিনি।বিজ্ঞান কবিতা আন্দোলনের বাস্তবতা ও উপযোগিতা সম্পর্কে আমার বক্তব্যের সঙ্গে একমত হলেন।যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ সেমিনার,পাঠ্যক্রম এবং পরবর্তী গবেষণার কাজে এ বিষয়টি কীভাবে যুক্ত করা যায় তা নিয়ে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে স্যারের সঙ্গে সেদিনের মিটিংয়ে।
আমার সঙ্গে ছিলেন বিজ্ঞান কবিতার বিষয়ে গবেষক ও আমাকে নিয়ে একটি গ্রন্থ ও আমার ষাট বছর জন্মোৎসব স্মারক সম্পাদক লোকমান হোসেন পলা এবং রবিউল ইসলাম খান।
সুকর্ণ রায় সেখানে স্যারের সঙ্গে আগে থেকেই ছিলেন।তিনি সাহিত্যের যে দিকটা নিয়ে পিএইচডি করছেন সেখানে বিজ্ঞান কবিতা একটি বড়ো অধ্যায় পাবে।এ নিয়ে অনিমেষ দার সঙ্গে আগে থেকেই কথা হয়ে আছে।সুকর্ণ রায়কে দিলাম ‘ঐতিহ্য পরম্পরায় বাংলা কবিতা’ গ্রন্থখানি।দীপক ঘোষ স্যারকে বেশ কিছু গ্রন্থ উপহার দেই।
যাদবপুরে বিজ্ঞান কবিতার দ্বার উন্মোচিত হোক এ প্রত্যাশায়…
Leave a Reply