শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেশে দেশে

ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেশে দেশে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত বছরের ৭ অক্টোবর ২০২৩ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর সম্প্রতি ইউরোপজুড়ে গাজাবাসী তথা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বাড়তে শুরু করে।

সংঘাতের প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর অধিকাংশই ইসরায়েলকে সমর্থন করলেও ব্যাতিক্রম ছিল কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। তাদের মধ্যে  ২১ মে ২০২৪ স্পেন ও আয়ারল্যান্ড অন্যতম। এবার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো দেশ দুটি। তাদের সঙ্গে আরেক পশ্চিমা দেশ নরওয়েও এই স্বীকৃতি ঘোষণা করেছে।

কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের ১৪৩টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে ২০২৪ সালে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাহামা, ত্রিনিনাদ অ্যান্ড টোবাগো, জামাইকা অ্যান্ড বারবাডোজ, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে।

গত মাসেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব তোলা হয়। সেখানে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৩টি দেশই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।

ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যতার জন্য প্রচারণা চালানোর পরে জাতিসংঘে যোগদানে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হয়। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটিকে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়।

২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনের ‘সদস্যপদহীন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ পরিস্থিতি পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেয় ও ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দেশটিকে একটি পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আইসল্যান্ড, চিলি, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, লাইবেরিয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস, বেলিজ, ডোমিনিকা, অ্যান্টিগুয়ে এবং বারবুডা, গ্রেনাডা।

২০১২ সালে থাইল্যান্ড, ২০১৩ সালে গুয়েতামালা, হাইতি, ভেটিক্যান সিটি, ২০১৪ সালে পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে সুউডেন, ২০১৫ সালে সেইন্ট লুসিয়া, ২০১৮ সালে কলম্বিয়া, ২০১৯ সালে সেইন্ট কিটিস এবং নেভিস ও ২০২৩ সালে মেক্সিকো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

২০০০ থেকে ২০১০ সাল

অসলো চুক্তির অধীনে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে আর তা হয়ে ওঠেনি। তবে ২০০৪ সালে পূর্ব তিমুর, ২০০৫ সালে প্যারাগুয়ে, ২০০৬ সালে মন্টিনিগ্রো, ২০০৮ সালে কোস্টারিকা, লেবানন, আইভরি কোস্ট, ২০০৯ সালে ভেনিজুয়েলা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও ২০১০ সালে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও ইকুয়েডর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সাল

১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম অসলো চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উভয় পক্ষই কয়েক দশক ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করে। ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো চুক্তি সই হয়। সেখানে ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকেও রাষ্ট্র হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলা হয়।

তারও আগে ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম ইন্তিফাদার শুরুতে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন, যার রাজধানী ছিল জেরুজালেম।

আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স থেকে ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন ইয়াসির আরাফাত। আর প্রথম দেশ হিসেবে আলজেরিয়া-ই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।

আলজেরিয়া স্বীকৃতি দেওয়ার পর ওই বছরেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, কিউবা, জর্ডান, মাদাগাস্কার, মাল্টা, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, সার্বিয়া, জাম্বিয়া, আলবেনিয়া, ব্রুনাই, জিবুতি, মরিশাস, সুদান, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, মিশর, গাম্বিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, সেশেলস, শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়া, রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, চীন, বুরকিনা ফাসো, কোমোরোস, গিনি, গিনি-বিসাউ, কম্বোডিয়া, মালি, মঙ্গোলিয়া, সেনেগাল, হাঙ্গেরি, কেপ ভার্দে, উত্তর কোরিয়া, নাইজার, রোমানিয়া, তানজানিয়া, বুলগেরিয়া, মালদ্বীপ, ঘানা, টোগো, জিম্বাবুয়ে, চাদ, লাওস, সিয়েরা লিওন, উগান্ডা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, সাও টোমে এবং প্রিন্সেপ, গ্যাবন, ওমান, পোল্যান্ড, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বতসোয়ানা, নেপাল, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ভুটান, পশ্চিম সাহারা।

তাছাড়া ১৯৮৯ সালে রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া, ইরান, বেনিন, কেনিয়া, নিরক্ষীয় গিনি, ভানুয়াতু, ফিলিপাইন, ১৯৯১ সালে ইসোয়াতিনি, ১৯৯২ সালে কাজাখস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, জর্জিয়া, বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা, ১৯৯৪ সালে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিজস্তান ও ১৯৯৮ সালে মালাউই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এদিকে,  ২১ মে ২০২৪ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই আয়ারল্যান্ড ও নরওয়েতে থাকা ইসরায়েলি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জরুরি আলোচনার জন্য দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেয় নেতানিয়াহু প্রশাসন। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আয়ারল্যান্ড ও নরওয়েকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমরা নিশ্চয় চুপ থাকবো না।

এমনকি, স্পেন থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করারও হুমকি দেন তিনি। এছাড়া ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) পশ্চিম তীর থেকে সংগৃহীত ট্যাক্স তহবিল স্থানান্তর বন্ধ করে দেবেন তিনি।

অন্যদিকে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ের পর স্লোভেনিয়া, মাল্টা ও বেলজিয়ামও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD