বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন

প্রসঙ্গঃ হাসনাইন সাজ্জাদী’র কবিতা বিজ্ঞান -বদরুল হায়দার

প্রসঙ্গঃ হাসনাইন সাজ্জাদী’র কবিতা বিজ্ঞান -বদরুল হায়দার

হাসনাইন

প্রসঙ্গঃ হাসনাইন সাজ্জাদী’র কবিতাবিজ্ঞান
-বদরুল হায়দার
।।
বিজ্ঞানকাব্য ও রাষ্ট্র তত্ত্বের উপস্থাপক ও সাবলীল ছন্দের আবিস্কারক। বিজ্ঞানমনস্ক কাব্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কবিতাবিজ্ঞানের আবিস্কার ঘটেছে তার হাতে।সোজা কথায় তার নিজস্ব কবিতাভাবনা থেকেই তার কবিতাবিজ্ঞান।বিজ্ঞানের চারটি প্রধান শাখা হচ্ছে।জীববিজ্ঞান,রসায়ন,পদার্থবিজ্ঞান ও
জ্যোতির্বিজ্ঞান।
হিসাববিজ্ঞানকে বিজ্ঞান ধরা হবে কি না এ নিয়ে অনেক আলোচনা ও মতানৈক্য নিয়ে আমাদের পথ চলা।তবে শেষকথা হলো হিসাববিজ্ঞান বিজ্ঞানের উপপ্রধান শাখা।কবিতাবিজ্ঞানকেও তিনি সেরকম করেই তৈরি করেছেন।তবে বিজ্ঞানের ফলিত শাখার সংখ্যা অনেক।তার কিছু বিজ্ঞানমনস্ক আবার কিছু ঊনবিজ্ঞান।যেমন কৃষিবিজ্ঞানের কিছু আছে প্রাকৃতিক এবং কিছু মৌলিকবিজ্ঞান।চিকিৎসাবিজ্ঞানে যেমন রসায়নবিজ্ঞান রয়েছে তেমনি রয়েছে পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের সমন্বয়।ঔষধ আবিস্কার করতে রসায়নের সঙ্গে পদার্থের ধর্ম জানতে হয়।আবার পরীক্ষা করতে গিনিপিগ লাগে।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা তত্ত্ব ও তথ্য নির্ভর।দর্শন ছিল প্রাচীন যুক্তি ও বুদ্ধি নির্ভর।বিজ্ঞান আসার পর যুক্তি বুদ্ধিকে বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে উতরে আসতে হয়।ব্যর্থ হলে তা ঊনবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে।তাই এখন দর্শন ফিকে হয়ে এসেছে।আর -হাসনাইন সাজ্জাদী’র মতে, কথিত স্পিরিচুয়াল সাইন্স ভাববাদের অংশ।তাকে বিজ্ঞানবাদে গ্রহণ করা হয় না।
এই লেখা “কবিতাবিজ্ঞান”কবিদের জন্য।তাই কবিতার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না গিয়ে সরাসরি বিজ্ঞান কবিতার আলোচনায় চলে এসেছেন তিনি।তার মতে,মানুষের কল্যাণে মনের ভাবনাগুলোকে মুখের ভাষায় সুন্দরতম শব্দে সাবলীল উপস্থাপনকে আমি কবিতা ধরে আলোচনা করতে হবে।এ ক্ষেত্রে কলাকৈবল্যবাদ নয় মূলত তত্ত্বগত ফানুস।কবিকে ক্রান্তদর্শী ও সত্যদ্রষ্টা ধরে কবির কাজকে কবিতা বলবো এই আলোচনায়।তাহলে মানুষের জন্য কবিতার ধারনা পরিষ্কার হবে।শিল্পের জন্য মানুষ নয়।আর্ট ফর আর্টও নয়।মানুষ থেকে শিল্প,তাই মানুষই শিল্প।মানুষ যা কবিতা তাই হবে।তবে সুন্দর ও কল্যাণ চিন্তার কবিতার চর্চাকারীদেরকে ক্লাসিক ধারার কবি বলতে হবে।কবিতায় তাই মানুষের সমস্যার কথা যেমন থাকবে তেমনি কবি তার সমাধানও দিবেন কবিতায়। মনে করতে হবে-মানুষের চিন্তার মানসকে বিকশিত করতে আমাদের কাব্যচর্চা। সত্যসাধনার জন্য কাব্যচর্চা। দূরাগত বিপদআপদ থেকে রক্ষাকবচ এই কবিতা।তাই মানব সৃষ্ট এবং প্রকৃতির বিরূপতা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করাই কবিতাবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য।মানুষ জাতির ত্রাতা হবে কবিতা।কবিতায় কবি তার জাতিকে বিজ্ঞান চেতনা দিবে এবং অকল্যাণকর কাজ করা থেকে বিরত রাখবে।কবিতা যেমন সময়কে ধরার নাম তেমনি কবিতা সৌন্দর্য চর্চাক্ষেত্র। তাই কবিতাবিজ্ঞান আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

কবিতাবিজ্ঞান কি ও কেন?
কবিতার উপমা,উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পের বিজ্ঞানকেই হাসনাইন সাজ্জাদী কবিতাবিজ্ঞান বলে থাকেন।কবিতার বিজ্ঞান অন্য বিষয়।হাতের আঙ্গুলে যারা ছন্দ মিলান তারা সেই ছন্দের খেলকে কবিতার বিজ্ঞান বলেন।-হাসনাইন সাজ্জাদী সাবলীল ছন্দের উপস্থাপন করেছেন।যাকে টানা গদ্য বা রিপোর্টিং স্টাইল বলা হয়।আবার বিজ্ঞান কবিতা এই স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্ত’র খেল নয়।তিনি বলেন,বিজ্ঞান চেতনায় থাকার অপর নাম বিজ্ঞান মনস্কতা।বিজ্ঞান মনস্ক কবিতাই বিজ্ঞান কবিতা।’পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’বিজ্ঞান বিরোধী বাণী।সূর্য উঠে না।আমরা পূর্ব দিগন্তে সকাল বেলা যাই।বিজ্ঞান বলছে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণরত।তাই আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির পর্যাবৃত্তি। এখানে প্রাচীন বিশ্বাস হল- সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।কেউ কবিতায় যদি প্রাচীন বিশ্বাসকে অনুসরণ করেন তবে তাকে আমরা বিজ্ঞানকবি বলবো না।আর তিনি যদি কবিতায় বিজ্ঞানের পরীক্ষিত সত্যকে অনুসরণ করে কবিতা লেখেন তবেই তিনি বিজ্ঞানকবি হবেন।কবিদের সচরাচর ভাববাদী হতে দেখা যায়। তারা নতুন নতুন বানানো তত্ত্ব দিতে থাকেন।নিরীক্ষা করেন।তাদের ভক্তরা বাহবা দেন এই বলেযে,কবিতায় ফিলসফি আছে।তার কথা হল ফিলসফি নয়,বিজ্ঞানতত্ত্ব থাকতে হবে।যেন কবিতার বাণী বিজ্ঞানের পরীক্ষিত সত্যের বিরুদ্ধে না যায়।

গীতিকবিতার ‘মাটির দেহ খাইলো ঘুনে প্রতি দমে দমেরে’ বাণীকে তিনি বিজ্ঞান বিরোধী বলেন।তার কথায়-দেহের মধ্যে মাটি ত নেই।আছে ইলেক্ট্রন নিউট্রন,পোটন,প্রোটিন,কিছু গলিত পদার্থ ও কিছু জল।মানব শরীরটা নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম।মাটি নয় মানব শরীরে।তাই তার কথা কবিতা বিজ্ঞানের মধ্যে যেন থাকে।তাহলে কবিতা সমাজেবিজ্ঞান মানস গঠনে কাজে আসবে।এভাবে আত্মা বললে আত্মহত্যা বললে তা বিজ্ঞান বিরোধী হবে।সত্তা বা স্বহত্যা বলতে হবে।কারণ আত্মা বলে কিছুন নেই।মানুষের মাথা কিংবা শরীর কোষের তৈরি।মইয়ের মতো এ কোষ।তাই কোষ মরে মরে মানুষ মরে।মানুষ একবারে মরে না।এই কবিতাভাবনায় কবিতাবিজ্ঞান।

তিনি বলেন-
সব কবিতা কবিতাবিজ্ঞান নয়,
সব কবি বিজ্ঞানকবি নন
সব বিশেষ জ্ঞান বিজ্ঞান নয়
সব যুগ বিজ্ঞান যুগ নয়
আবার বিজ্ঞান কি?
………………………..
হাসনাইন সাজ্জাদীর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন,কিভসবে সব কবিতা বিজ্ঞান কবিতা নয়।বিজ্ঞান বিরোধী অনেক অনেক কবিতা এবং অনেক কবি আছেন।এমন কি বিজ্ঞান বিরোধী অনেক কবির কবিতায় বিজ্ঞানও দেখতে পাওয়া যায়। কবি হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলা যায়,তিনি ছিলেন ভাববাদী গীতি কবি।তবুও তার কিছু কিছু কবিতায় বিজ্ঞান ও আধুনিকতা রয়েছে ।তাই রবীন্দ্র যুগকে আধুনিক ২য় পর্ব ধরা যায়।প্রথম পর্বে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে ধরতে হয়। যুগের হিসাবে ত্রিশের পঞ্চ কবিকে আধুনিকতাবাদী কবি ধরলেও আধুনিক কবিতায় তারা তৃতীয় পর্ব।চতুর্থ ও শেষপর্ব হল আবুল হোসেন,সৈয়দ আলী আহসান, শামসুর রাহমান, সুনীল, সৈয়দ হকদের পর্ব।তারপর উত্তর আধুনিক বা আধুনিক উত্তর কাব্য চর্চা হয়েছে।আশির দশকে হাসনাইন সাজ্জাদী বিজ্ঞান যুগে বিজ্ঞান কবিতার চর্চার আন্দোলন শুরু করেন এবং এ বিষয়ে তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।বই পুস্তক রচনা করেন।তখনই প্রশ্ন ওঠে বিজ্ঞান যুগ হতে পারে কি না? কিংবা সকল যুগই বিজ্ঞান যুগ।তার জবাবও হাসনাইন সাজ্জাদী দিয়েছেন।বর্তমান যুগ কেন বিজ্ঞান যুগ এবং প্রাচীন যুগ,মধ্য যুগ ও আধুনিক যুগে বিজ্ঞান কবিতা লিখে কেন তারা বিজ্ঞান কবি হবেন না,তার সবই জবাব তার লেখা বই পুস্তকে আছে।এখানে ক্ষুদ্র পরিষরে তার উল্লেখ করার সময় আপাতত নেই।পরে সুযোগ সময় আসলে তার ব্যাখা দেব।তবে তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞান কবি হতে হলে বিজ্ঞান যুগের বিশ্বাসকে মনে ধারণ করতে হবে।সংস্কারমুক্ত হতে হবে।ধর্ম নিরপেক্ষ হতে হবে।এককথায় হানড্রেড পার্সেন্ট বিজ্ঞানমনস্ক না হয়ে বিজ্ঞান কবি হ্ব্যা যাবে না।
তাই সকল যুগ বিজ্ঞান যুগ নয়।বিজ্ঞান কবিতা লিখেও সবাই বিজ্ঞান কবি নয় আবার বর্তমান যুগেও কেউ কেউ বিজ্ঞান বিরোধী কবিতা লিখছেন। তাই কবিতা মানেই বিজ্ঞান নয় বা সকল কবিতায় বিজ্ঞান থাকার কথাও সত্যি নয়।
এখন মূল প্রশ্ন বিজ্ঞান কি বা বিজ্ঞান কবিতা কি?
তাকে একজন নামধারী ডক্টর কিছুদিন আগে প্রশ্ন করেন – বিজ্ঞান বলতে আপনি কি বুঝেন?তার প্রশ্নের ধরণে ঠাট্টার আভাষ ছিল।এরকম অনেক ঠাট্টার মুখোমুখি অতীতেও তিনি হয়েছেন। ব্যস্ততায় তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে না পারলেও দেখেছি তিনি তার জবাব ঠিকই দিতেন।তার উত্তর তার লেখা বই পুস্তকে আছে।’বিজ্ঞান কবিতার রূপরেখা’, ‘জাপানে বঙ্গবিদ্যা ও বাংলাদেশের বিজ্ঞান কবিতা’,‘হে স্বপ হে বিজ্ঞান কবিতা’ এবং বিজ্ঞানবাদের কাব্যতত্ত্ব, -এ ক্ষেত্রে ভাল গ্রন্থ।যার পাঠ সহজবোধ্য। এমনকি গবেষক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল’র লেখা’ বাংলাসাহিত্যে সিলেটিদের গৌরবগাথা’ গ্রন্থটিও তাকে ব্যাখা করে বুঝার মত- সহজবোধ্য করেছে।সেগুলো একটু ঝালাই করে নিয়ে উত্তর দেয়ার এখনো সুযোগ তার মতে এখনো হয়নি।তবুও বলছি;
অনেকে বলেন সব বিশেষ জ্ঞানই বিজ্ঞান।তিনি বলেন, বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এবং যা পরীক্ষিত সত্য তার বিশেষ জ্ঞানই বিজ্ঞান।এ পরীক্ষা হবে সেই বিজ্ঞানের আলোকে এবং তা চিকিৎসা বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন বিদ্যা ও বিবর্তনবাদের আলোকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা উত্তীর্ণ। ভাব ও বিশ্বাস নিয়ে চেতনা হয়।আর এর সমন্বয়ে হয় মনস্কতা।বিজ্ঞানের আরো ভাগ আছে।তবে সমাজবিজ্ঞান,ধর্মবিজ্ঞান,মানববিজ্ঞান,কৃষি বিজ্ঞান,রাষ্ট্র বিজ্ঞান,গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান ও কবিতার ছন্দ বিজ্ঞান দিয়ে বিজ্ঞান চেতনা ও বিজ্ঞান মনস্কতা হয় না।কারণ এগুলোর সবকিছু বিজ্ঞানাগারে পরীক্ষা-নীরিক্ষা উত্তীর্ণ নয় এবং কৃষি বিজ্ঞান ছাড়া তার প্রায় সবই দর্শন ও মতবাদ নির্ভর।
কোন কোন দর্শন ও মতবাদ সরাসরি বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক হতেও দেখা যায়।মার্কবাদ অনেকাংশেই বিজ্ঞানমনস্ক তবে কোন কোন ক্ষত্রে তা মানবতার সীমানাকে আঘাত করেছে।এ ক্ষেত্রে সাম্যবাদ অনেকটাই ভাল এবং বিজ্ঞানবাদ নামে হাসনাইন সাজ্জাদী যে তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন-তাতে সমিতিভিত্তিক অর্থব্যবস্থা রাখা হয়েছে।চলমান সম্পদকে তিনি বর্তমান মালিক,শ্রমিক ও সরকারের মধ্যে সমান তিন ভাগ করেছেন।যা গরীবের পুঁজিবাদ ও ধনীর ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র বলা যাবে।তার লেখা ‘ছোটদের বিজ্ঞানবাদ এবং ‘বিজ্ঞানবাদের কাব্যতত্ত্ব ‘দুটি অপুর্ব । বিজ্ঞানবাদ, বিজ্ঞানকাব্যতত্ত্ব ও সাবলীল ছন্দ প্রভৃতি তার জীবন দর্শন।এই দর্শনের আলোকে সমাজ প্রতিষ্ঠা ও কাব্যচর্চা কে না চায়।এটাকেই তিনি বলেন, বিজ্ঞানস্বপ্ন।আমরা কমবেশি সবাই জানি,
হাসনাইন সাজ্জাদী একাধারে বিজ্ঞানকাব্যতত্ত্ব,বিজ্ঞানশিল্পতত্ত্ব, বিজ্ঞানবাদ রাষ্ট্রতত্ত্ব ও সাবলীল ছন্দের উপস্থাপক।
এর আলোকের কবিতাবিজ্ঞান বাংলাসাহিত্যে এক অনবদ্য সংযোজন…

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD