শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

ত্রিপুরার বিলোনীয়া (রাজনগর,চোত্তাখোলা) সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান

ত্রিপুরার বিলোনীয়া (রাজনগর,চোত্তাখোলা) সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান

ত্রিপুরার বিলোনীয়া (রাজনগর,চোত্তাখোলা) সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান
।।হাসনাইন সাজ্জাদী।।
বিলোনীয়া ভারত অংশের বানান এমন।আবার তার বিপরীতে বাংলাদেশের ফেনী অংশের বানান বিলোনিয়া।বর্তমান নাম রাজনগর।চোত্তাখোলা প্রাচীন নাম।যারা মুক্তিযুদ্ধে এখানে অংশ নিয়েছেন তাদের নিকট চোত্তাখোলা এ জায়গার নাম।
এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে একটি বিশাল উদ্যান।এর নাম ভারত -বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান।এ উদ্যানটি মোটেও ছোটো কোনো উদ্যান নয়। প্রায় ২০ হেক্টর জায়গা নিয়ে তৈরি এ উদ্যান।এটার পুরোটাই ঘন বন আর পাহাড়ি এলাকা।বনের মাঝে আছে ৭টি টিলা আর একটি প্রাকৃতিক লেক।সত্যিই উদ্যানের গল্প অভিভূত হবার একটি অধ্যায়।বামদিকে সবচেয়ে উঁচু টিলার ওপর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আদলে বঙ্গবন্ধুর ৩২ ফুট দীর্ঘ একটি ভাস্কর্য।ডানদিকে রয়েছে মহাত্মা ইন্দিরা গান্ধীর সমান উচ্চতার ভাস্কর্য।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ইন্দিরা গান্ধী মহাত্মাই।আর ত্রিপুরার প্রতিটি নাগরিকই মহান হৃদয়বান।তাদের উত্তরাধিকারদের দিকে চোখ মেলে তাকালেই আমি ইমোশনাল হয়ে পড়ি।ত্রিপুরার নাগরিকদের মোট জনসংখ্যারও অধিক ৫/৭ লাখ অভিবাসী বা শরনার্থী সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল।ত্রিপুরাবাসী সেদিন আশ্রয় -প্রশ্রয় না দিলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অচিরেই মুখ তুবড়ে পড়তো।আর আমরা চিরদিনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানিদের দাস হয়ে থাকতাম।আমাদের নারীদের তারা নিয়মিত ধর্ষণ করতো।আর জারজ বিএনপি জামাত তাদের দালালী করতো।জামাত মুসলিম লিগ নামে তখন তারা ছিল।এখন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আওয়ামী বিরোধী তারা তাদেরই উত্তরসূরী।
মুক্তিযুদ্ধের সে দিনগুলোর স্মরণে ত্রিপুরায় নির্মিত এ মৈত্রী উদ্যাননে তাই বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরাজীর ভাস্কর মুক্তিযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।জাতীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিসেস গান্ধীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
এছাড়াও রয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে তৈরি স্তম্ভ।তৈরি করা হয়েছে গণহত্যা ও শরনার্থী জীবনের নানা স্তম্ভস্মারক।আছে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত,২৬ মার্চের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। রয়েছে দু’দেশের জাতীয় পতাকা।আছে একটি বৃহদাকারের একটি মহিষের ভাস্কর।শোনা কথা যুদ্ধ চলাকালীন গোলাগুলির শব্দে মহিষটি বাংলাদেশ সীমান্তে পাক হানাদারদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে শিং দিয়ে খুছিয়ে কয়েকজন পাক সোলজারকে আহত ও নিহত করে।আবার এও শোনা গেছে,শক্তির প্রতীক মহিষ মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্যবীর্যের প্রতীক হিসাবে এখানে স্থান পেয়েছে।
ভাস্কর্যের পেছনে টেরাকোটায় চিত্রিত আছে সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নানা বাঁক।বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী র’নবি ও হাসেম খানদের অক্লান্ত পরিশ্রম চিত্রিত হয়ে আছে উদ্যানের প্রতিটি স্থাপত্যকর্মে।রাজ্য সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান,টিলা যেখানে জলাশয়ে মিশেছে,সেখানকার সমতল অংশ এবং টিলার উপর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল ও বাংকার ছিল।তুমুল যুদ্ধ শেষে আহত এবং নিহতদের নিয়ে এসে সৎকার করা হতো আশেপাশেরই।কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে দাফন করা হলেও দু’জন মুক্তিযোদ্ধার কবর বাধাই করা হয়েছে স্মারক হিসাবে।ঢাল অংশে খোঁজ পাওয়া গেছে আরো কিছু কবরের।কিন্তু সবগুলোকে সংরক্ষণের সুযোগ হয়নি।এখানে কিছু ফসিলকে সংরক্ষণ করা হয়েছে ইতিহাসের চালিকাশক্তি হিসাবে।
এ ছাড়া সবচেয়ে উঁচু টিলাসহ কয়েকটি টিলায় খোঁজ মিলেছে চারটি বাংকারের।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানে মৈত্রী উদ্যান নির্মাণ করে বামফ্রন্ট সরকার।যারা মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক নেতৃত্ব দান করে একাত্তরে।বর্তমানে কিছু লাইট খুলে নিয়ে যাওয়া সহ অযত্ন অবহালার ছাপ রয়েছে উদ্যানে।তবে দামী গাছপালায় ঝুপ বাধতে শুরু করেছে পরগাছা।তবে আশার কথা আমরা আমাদের ভ্রমণ কালে সেখানে কিছু সংস্কার কাজ হতে দেখেছি।বিজেপি সরকা এখন পূর্বাঞ্চলে জোর দিয়েছে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া -আগরতলা সীমান্ত দিয়ে মালামাল পরিববহন ও সাব্রুম-রামগড় দিয়ে পোর্ট ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।সে লক্ষ্যে আখাউড়া -আগরতলা রেললাইন নির্মাণ সহ সাব্রুম-রামগড় সীমান্তে দর্শন নন্দন মৈত্রী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।ফলে মৈত্রী উদ্যানের প্রতিও জোর দেয়া হচ্ছে।যদিও প্রথম বিজেপি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে দীপু মনি মৈত্রী উদ্যানের যৌথভাবে উদ্বোধন করেন।
উদ্যানটিতে দর্শনার্থীদের আনাগোনা আছে।টিকেটের জন্য নির্ধারিত কাউন্টার আছে।তবে আমাদের টিকেট নিতে হয় নাই।আমাদের গাইড ছিলেন ত্রিপুরার প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কবি বিল্লাল হোসেন ভাই।তিনি আগেভাগে গিয়ে বাংলাদেশের অতিথি লেখক সাংবাদিক এ পরিচয়ে পাসের ব্যবস্থা করেন।
আমরা দলে ছিলাম মোট ৫ জন।আমি,সমাজকর্মী রবিউল ইসলাম রবি,কবি সাংবাদিক ও গবেষক লোকমান হোসেন পলা,পণ্ডিত কার্ত্তিক কর্মকার।আর কবি ও সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন ভাই’র কথাতো আগেই বলেছি।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD