বিখ্যাত ছবি কিসমত – এর পরিচালক
জ্ঞান মুখোপাধ্যায়
দূর হটো দুনিয়া ও ওয়ালোঁ হিন্দুস্তান হামারা হ্যায়….
লিয়াকত হোসেন খোকন
তিনি ছিলেন এক বাঙালি – তবে বোম্বের হিন্দি ছবি পরিচালনা করে চল্লিশের দশকে অসম্ভব খ্যাতি পেয়েছিলেন ভারতজুড়ে।
তাঁর খ্যাতি ছিল পেশোয়ার হয়ে দিল্লি – বোম্বে – কলকাতা – চট্টগ্রাম হয়ে রেঙ্গুন পর্যন্ত।
জ্ঞান মুখোপাধ্যায় পরিচালিত প্রথমদিককার উল্লেখযোগ্য ছবি হলো — গীতা এবং ঝুলা।
গীতা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪০ সালে।
ঝুলা মুক্তি পায় ১৯৪১ সালে —
এই ছবির নায়ক – নায়িকা ছিলেন যথাক্রমে — অশোক কুমার ও লীলা চিৎনিশ।
জ্ঞান মুখোপাধ্যায় প্রথমে কলকাতায় নিউ থিয়েটার্সের স্টুডিওতে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পরে তিনি বোম্বেতে গিয়ে বোম্বে টকিজের তত্বাবধায়ক প্রযুক্তিবিদ হিসেবে যোগদান করেন।
তাঁর পরিচালিত বিখ্যাত ছবি হ’ল – কিসমত।
কিসমত মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪৩ সালে।
জ্ঞান মুখোপাধ্যায় পরিচালিত কিসমত ছবিতে
কবি প্রদীপের লেখা প্রখ্যাত দেশাত্মবোধক –” দূর হটো ও দুনিয়া ওয়ালোঁ, হিন্দুস্তান হামারা হ্যায় ” গানটি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল।
কিসমত ছবিটি কলকাতার রক্সি প্রেক্ষাগৃহে ৩ বছর ৮ মাস ধরে চলেছিল।
১৯৪০ সালে বোম্বে টকিজের কর্ণধার হিমাংশু রায় মারা গেলে কয়েকজনকে নিয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় — এঁদের মধ্যে জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ও একজন ছিলেন।
কিন্তু কয়েক বছর পরে তিনি ওখান থেকে বেরিয়ে এসে ফিল্মিস্তান স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।
জানা যায়, গুরু দত্ত তাঁর অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৯ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের বারানসীতে
আর তাঁর মৃত্যু ১৯৫৬ সালের ১৩ ই নভেম্বর কলকাতায়।
পরিচালনার পাশাপাশি তিনি চিত্রনাট্যকারও ছিলেন।
তিনি যে সব ছবির চিত্রনাট্য লেখেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবি হলো — কংগন, বন্ধন, পুনর্মিলন, নয়া সংসার।
ফিল্মস্তানে গিয়ে তিনি প্রথম পরিচালনা করেন চল চল রে নওজোয়ান — ছবির নায়ক – নায়িকা ছিলেন যথাক্রমে অশোক কুমার ও নাসিম বানু।
চল চল রে নওজোয়ান ছবির চিত্রনাট্য জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ই লিখেছিলেন। এরপর শিকারী, সফর ছবির চিত্রনাট্য লেখেন।
তাঁর নিজস্ব ছবি হিসেবে নাম করতে হয় সংগ্রাম। এই অপরাধমূলক চিত্র শুধু যে বক্স অফিস গরম করে তুলেছিল তাই নয় — বহু কারণে আজও সংগ্রাম ছবিটি বৈশিষ্ট্যের দাবী রাখে। সংগ্রাম ছবির নায়ক – নায়িকা ছিলেন অশোক কুমার ও নলিনী জয়ন্ত। ছবিটি দুটি পুরস্কারও পেয়েছিল —-
মাত্র ৪৬ বছর বয়সে জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরদিন
পত্রিকার পাতায় লেখা হয়েছিল —
রয়ে গেল জ্ঞান নাম আর তাঁর স্মৃতি – যে স্মৃতি মুখর হয়ে বলবে অগণিত প্রিয় জনের অন্তরে —
কোনও দিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে
বসন্ত বাতাসে —
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কানুন রাখিবে আকাশ,
সেই ক্ষণে খুঁজে দেখো, কিছু যেন পিছে রহিল
তোমার প্রাণের প্রান্তে ; বিস্মিত প্রদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নাম হারা স্বপ্নের মূরতি
তবে সে তো স্বপ্ন নয়,
সব চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়
সে আমার প্রেম। “
Leave a Reply