এস এম শাহনূরঃ বিদায় বা প্রস্থানের আরবি হলো ‘আল বিদা’;জুমাতুল বিদা আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সমাপনী সম্মিলন।সিয়াম সাধনার মাস রমজানের শেষ শুক্রবারকে ‘জুমাতুল বিদা’ বলা হয়ে থাকে।
জুমাতুল বিদার মাহাত্ম্য অত্যধিক। রমজান মাসের সর্বোত্তম দিবস হল জুমাতুল বিদা’।প্রতি সপ্তাহের জুমা দিবসে মুসলিম মনে এক নয়া জাগরণ সৃষ্টি হয়।এ দিবসকে কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে জুমা নামে স্বতন্ত্র একটি সূরা রয়েছে।
এক হাদিসে জুমা দিবসকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে। জুমাতুল বিদাকে সব জুমার শ্রেষ্ঠ জুমা বলা হয়।পবিত্র কোরআনে জুমার নামাজ জামাতে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে,
‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সূরা আল-জুমুআ, আয়াত-৯)
জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার দিন সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃত্বস্থানীয় দিন। এ পুণ্যময় দিনে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়। এদিন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন এবং এদিন তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন। এদিন তাঁর ইন্তেকাল হয়। এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।’ (মিশকাত শরিফ)।
রমজানের জুমাগুলো অন্যান্য জুমার দিবস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। রমজানের প্রতিটি দিন তার আগের দিন অপেক্ষা শ্রেয়তর এবং অধিক ফজিলতপূর্ণ। তাই রমজানের শেষ জুমা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত।
রমজানের শেষ দশকে নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির সময়ে শেষ শুক্রবারে মুক্তিকামী ধর্মপ্রাণ জনসাধারণ আশা ও উৎসাহের সঙ্গে মসজিদে আসেন।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহখাতা মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই।’
জুমাতুল বিদা স্মরণ করিয়ে দেয় যে রোজার শেষ প্রান্তে এর চেয়ে ভালো দিবস আর পাওয়া যাবে না। রোজার শুরু থেকে যেসব ইবাদত ব্যস্ততাবশত ফেলে রাখা হয়েছে, যে গুনাহখাতা মাফের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে ভুল হয়েছে, জুমাতুল বিদার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময়ে এর বরকত হাসিল করে নিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন উজাড় করে আল্লাহর এবাদতে মনোনিবেশ করেন।
ধর্মে জুমাতুল বিদার সরাসরি গুরুত্ব বহনকারী কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও এমনও বর্ণনা পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমাতুল বিদার খুতবায় ‘আল-বিদা-আল বিদা’ শব্দ উচ্চারণ করতেন। এ শব্দ শোনার পর সাহাবায়ে কিরাম বিলাপ করে কান্না শুরু করতেন।
তারা সবাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তাবাহী রমজানকে জুমাতুল বিদায় বিদায় জানাতেন। পরবর্তী রমজান ভাগ্যে জুটে কিনা ক্ষমাপ্রাপ্তির মাস ভাগ্যে জুটে কিনা- এসব ভেবে সাহাবায়ে কিরাম কান্না করতেন।
তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনা মতে, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, তখন যে দোয়াই করা হয়, তাই কবুল করা হয়। সহিহ হাদিসে এ কথা প্রমাণিত রয়েছে।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, কোনো ধর্মীয় মজলিসে যদি অন্তত চল্লিশজন লোক একত্রিত হয়ে কোনো দোয়া করে, তা হলে আল্লাহতায়ালা তাদের মধ্যে যে কোনো একজনকে অলির মর্যাদা দিয়ে তার সঙ্গে সবার দোয়া কবুল করে নেন।
জুমাতুল বিদার বিশাল জামাতে আমাদের দেশের বিভিন্ন মসজিদে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই ওই দিনের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার খুবই সম্ভাবনা থাকে।
এ দিনের জুমায় সারা দেশের সব জামে মসজিদে বছরের সবচেয়ে বেশি মুসল্লির সমাগম হয়।গ্রাম,মফস্বল কিংবা শহর এলাকার বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ বড় বড় জামে মসজিদে জুমাতুল বিদার জামাতে শরিক হন।
আতর-গোলাপের সুঘ্রাণ, সাদা পোশাক, মাথায় টুপি- এসব মিলে যেন এক বেহেশতি দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ঈদের আগে এ যেন এক ভিন্ন রকমের ঈদ।সবাই নামাজ শেষে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে সকরুণ মোনাজাত করে, আমিন! আমিন!
ধ্বনির সঙ্গে মুহুর্মুহু উচ্চারিত হয়: ‘আল বিদা ইয়া মাহে রমাদান! আল বিদা;’ ‘আল বিদা আয় মাহে রহমাত! আল বিদা;’ ‘আল বিদা হে মাহে মাগফিরাত! আল বিদা;’ ‘আল বিদা ওহঃ মাহে নাজাত! আল বিদা।’
“ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্যে এলো ধৈর্যের রমাযান
মুসলিম জাতির প্রতি এ যেন খোদার সেরা দান।
সিয়াম সাধনার এটি হলো প্রশিক্ষণের মাস
নিশ্চিত করে অাখেরাতে জান্নাতে বসবাস।
রহমতের প্রথম দশক চলে গেলো হায়!
জানি না রাহমান রাহীম কি দিলেন অামায়।
পাপে ভরা জীবন অামার ভরসা গাফির,
গফুর গাফ্ফার নামের গুণে অাশা করি মুক্তির।
ধনের গৌরবে,যৌবনের মিছে তাপে ভুলেছি অাপণ জাত
অাত তাউত্তয়াবু নামের কারণে দান কর নাজাত।
যদি নাহি পাই তব রহমত মাগফিরাত নাজাত
বৃথা এ জীবন বৃথা দুনিয়াবি হায়াত।
নসীব কর হে প্রভু লাইলাতুল ক্বদর,খুশীর ঈদ,খুশবু অাতর,
কবুল কর সাহরী ইফতার তারাবীন সাদাকাতুল ফিতর।”(রমযানুল সাবরী)
★এবার জেনে নিই আল কুদস দিবস কি ও কেন পালন করা হয়?
আল-কুদস দিবস বা আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস (ফার্সি ভাষায়- ﺭﻭﺯ ﺟﻬﺎﻧﯽ ﻗﺪﺱ ) প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার পালিত হয়ে থাকে, যা ১৯৭৯ সালে ইরানে শুরু হয়েছিল।এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনী জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ, জায়নবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং ইসরাইল কর্তৃক জেরুযালেম দখলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ। জেরুযালেম শহরের অপর নাম ‘কুদস’ বা ‘আল-কুদস’ (আরবী ভাষায়)।
কুদস অর্থ পবিত্র। ‘আল কুদস’ বলতে বোঝায় ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত পবিত্র মসজিদ, যার তাঁর ছেলে হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
এরপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)-এর সন্তান হজরত সুলায়মান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন।
Leave a Reply