হাসনাইন সাজ্জাদী: সিলেট বিভাগের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ী চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রাচীন। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল দিঘীরপার এলাকায় চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল। এখানে প্রত্ননিদর্শন অনুসন্ধান করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদল। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) ড. মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে করোনার নিকট অতীতে দলটি দুই দিনের মতো অনুসন্ধানে চালায়।
অনুসন্ধানকালে স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্যদের সঙ্গে কথা বলে দলটি। কথা বলার পর দলটি সাংবাদিকদের জানিয়েছিল, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্ননিদর্শনের কোনো নিদর্শন প্রাথমিকভাবে খুঁজে পায়নি। তবে এ সময় জগদিশ চন্দ্র শর্মা নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে সংগ্রহে থাকা ২০ বছরের পুরনো কিছু পুঁতির পাথর পাওয়া গেলে দলটি আশাবাদী হয়েছিল।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তদানিন্তন ফিল্ড অফিসার মো. শাহিন আলম, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, গবেষণা সহকারী ওমর ফারুক, সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা। এ সময় জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
এলাকা পরিদর্শন, অনুসন্ধান ও মাঠ জরিপ করে পুরাকীর্তির কিছু আলামত সে সময় তারা সংগ্রহ করেন। তবে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দল ধারণা প্রকাশ করেন, এই এলাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও প্রাচীন কোনো সভ্যতা ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রের নিদর্শন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জগদিশ চন্দ্র শর্মার স্ত্রী সাগরনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাশিনী মোহান্ত প্রতিনিধি দল ও গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘২০ বছর আগে আমাদের বাড়ির একটি পুরাতন পুকুর সংস্কারকালে একটা ছোট পাতিলের মধ্যে বেশ কিছু পুঁতির পাথর পাওয়া যায়। এটা দেখতে অনেক সুন্দর হওয়াতে আমরা তা সংরক্ষণ করি। এখন যদি এটা পরীক্ষা করার পর নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয় বা কোনো কাজে আসে তাহলে সেটা হবে আমাদের আনন্দের বিষয় ও সফলতা।’
এদিকে অনুসন্ধানের তৃতীয় দিন মৌলভীবাজারের রাজনগর পাঁচগাও ইউনিয়নের পশ্চিম ভাগ গ্রাম ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ইন্দ্রেশ্বর এলাকায় পাহাড়ী অঞ্চল পরিদর্শন ও সার্ভে করে প্রতিনিধি দলটি। এর আগে অনুসন্ধানের প্রথম দিনে দলটি কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ভাটেরা তাম্রফলক পরিদর্শন করে। এ সময় তারা পুরাতন মাটির পাতিল ও ইটের টুকরো আলামত হিসেবে সংগ্রহ করে। ভাটেরা টিলায় বড় যে দীঘিটি রয়েছে। সে বিষয়ে পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকে স্থানীয়রা শুনেছেন, এই রাজবাড়িতে সাত ভাই ছিলেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ রাজা ছিলেন ঈসান দেব।
প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. মো. আতাউর রহমান বলেছিলেন, তাদের জরিপ ও অনুসন্ধান আরও কয়েকটি জায়গায় চলবে। চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সঠিক স্থান বলার তখনো সময় হয়নি। তবে মৌলভীবাজারের ভাটেরা টিলা, রাজনগর পশ্চিমভাগ ও জুড়ীর সাগরনাল- এ তিনটি এলাকাতেই প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ সভ্যতার যে নিদর্শন বিদ্যমান- সেটা তারা তাদের জরিপকালে বুঝেছেন। এর সঠিকতা প্রমাণের লক্ষ্যে অধিকতর গবেষণা করতে হবে।’
এর আগে গত ১৫ জুলাই ২০২০ ‘চন্দ্র বংশীয় রাজা শ্রীচন্দ্র কর্তৃক স্থাপিত কথিত শ্রীহট্টের ‘জুড়ী চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রত্ননিদর্শন সম্পর্কে সরেজমিন জরিপ ও পরিদর্শন ‘ করে প্রতিবেদন পাঠাতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালককে চিঠি দেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক মো. আমিরুজ্জামান। কিন্তু করোনা শুরু হয়ে গেলে সেই অনুসন্ধানে বাধা পড়ে। তারপর এখন পর্যন্ত আর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি! অচিরে তার অনুসন্ধানের জোর দাবি এলাকাবাসীর।
# আকাশ
Leave a Reply