সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
জুড়ীর অজ্ঞাত শহিদ শুয়ে আছেন শিলচরে,মুক্তিযুদ্ধ ৭১।নিউজ শিলচর স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে গবেষক এস এম শাহনূরের জন্মদিন পালন ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ পুলিশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ থেকে ৮ সপ্তাহের সার্জেন্ট নবায়ন সার্টিফিকেট কোর্স শুরু মুয়াজ্জিন হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি অগ্রিম জামিনে এসে ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি বঙ্গবন্ধুকে ট্রাফিক পুলিশের হৃদয়ে ছড়িয়ে দিতে নানা আয়োজন অদ্ভূত প্রেম।।ফেরদাউসী কুঈন জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর জন্মদিনে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা -বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল টিডিএস গ্রান্ড কল্যাণ ও জাতীয় শুদ্ধাচার বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত তারাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নব নির্মিত চারতলা ভবনের উদ্বোধন বেলাবোতে বিএমইউজে’র কমিটি গঠিত। আলি সভাপতি আলমগীর সম্পাদক
গুলশান আরা রুবী।। সাহিত্যে মননশীল স্বপ্নচারিনী -বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল

গুলশান আরা রুবী।। সাহিত্যে মননশীল স্বপ্নচারিনী -বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল

গুলশান আরা রুবী : সাহিত্যে মননশীল স্বপ্নচারিণী
বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল

গুলশান আরা রুবী একজন শক্তিমান কথাশিল্পী। বিশ্বের বাংলাভাষী পাঠকের কাছে তার প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, গান এবং উপন্যাস ইতোমধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার গল্পের প্লট, কাহিনির বুনন, শক্তিশালী চরিত্র, কৌণিক প্রেম, গভীর সামাজিক বিশ্লেষণ, মানসিক আনন্দ উপন্যাসের গভীর চিত্রায়ণ। তিনি গল্প বলে যান পাঠকের হৃদয়ের একান্ত কাছের কথক হয়ে। তার উপন্যাস পাঠ মানেই মনের শুকনো গলিতে রসানন্দের ফোয়ারা বইতে দেওয়া। মানুষের জন্য ভালোবাসাই লেখকের মূলধন। মানুষের ভালোবাসাই লেখককে তার সৃষ্টির আনন্দ পেতে উদ্বেলিত করে। এজন্য তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক। তাঁর নিরলস সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তিনি সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রবাসে থেকেও তিনি শেকড়ের টানে বাংলাভাষায় তার অমর সৃষ্টিকর্ম রচনা করে যাচ্ছেন। তার মেধা, মনন ও কর্মশৈলী শিল্পচিন্তার আপনভুবনকে আলোকিত করছে।

গুলশান আরা রুবী বৃহত্তর সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রয়াত হাজি মো. আব্দুর রহীম ও মা তৈয়বুন্নেছা খানম। তিনি কৈশোরকাল থেকেই লেখালেখি করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাঁর ‘মন যার শাওনের মেঘ’, ‘পারিবারিক জীবনের নৈতিক পরিচর্যা’, ‘মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে ইসলাম’, ‘যুদ্ধদিনের ভালোবাসা’, ‘মাধুরী রাতের বাতায়ন’ এবং ‘বর্ণালি হৃদয়ে স্বর্ণালি প্রেম’ নামক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি গ্রন্থেই তাঁর সৃজনশীলতার স্বকীয় নির্মাণের উজ্জ্বল চিদাভাস লক্ষ করা যায়। কবি, ঔপ্যাসিক গুলশান আরা রুবীর সাহিত্যমানস তাঁর সৃজনশীলতায় নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর শিল্পচিন্তার আপনভুবনকে জানতে হলে তাঁর সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে পরিচিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ব্যক্তিমানস এবং সাহিত্যমানস-দুটি আলাদা সত্তা হলেও ব্যক্তিমানসই সাহিত্যের মধ্যে প্রতিভাত হয়। গুলশান আর রুবী তার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তাঁর সাহিত্যমানসকে উপলব্ধি করতে আলাদাভাবে প্রতিটি সৃষ্টির সাথে নিবিষ্টতা প্রয়োজনীয়। এই অভিপ্রায় থেকে নিম্নে তার গ্রন্থগুলো সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হল :

মন যার শাওনের মেঘ
‘মন যার শাওনের মেঘ’ গুলশান আর রুবী’র উপন্যাস। এখানেও তিনি তাঁর সৃষ্টির সফল স্বাক্ষর রেখেছেন। উপন্যাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ সফিক। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পরিচয় ঘটে শিউলি আর রোকশানার। শিউলি সফিককে ভালোবাসে। একই সময়ে রোকশানাও জানায় তার মনের কথা। সফিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে মায়ের শরণাপন্ন হয়। একদিন মায়ের চিঠিও আসে। স্বাধীন দেশের সদ্য রাজাকার শিউলিকে তার ছেলের বউ করতে চায়। শিউলির পথ আগলে দাঁড়ায় রাজাকার পুত্র জুলহাস। সে শিউলিকে বিয়ে করতে চায়। শিউলির চাচা শরাফত আলী তা মেনে নিতে পারেন না। তিনি হুংকার দিয়ে উঠেন। তার ভাতিজিকে কিছুতেই রাজাকারের পুত্রবধূ হতে দেবেন না।

এক চরম ঘটনাক্রমে সফিককে ঢাকা ফিরতে হয়। তারপর কেটে যায় সাতবছর। এই সাতবছরে সফিকের সঙ্গে পরিচয় হয় শিরিনের। কিন্তু কে এই শিরিন? শিরিনকে জানতে হলে পাঠককে একনিঃশ্বাসে পড়ে নিতে হবে ‘মন যার শাওনের মেঘ’। ঔপন্যাসিক গুলশান আরা রুবী অকৃত্রিম মুনশিয়ানায় এঁকেছেন চরিত্রগুলো। সরস গল্প নির্মাণে তিনি এগিয়ে নিয়েছেন কাহিনিচিত্র। তাঁর ভাষা ও বর্ণনা প্রাঞ্জল। শিরিন ও সফিকের গল্প ধরেই এগিয়ে যায় উপন্যাসের কাহিনি।

‘পারিবারিক জীবনের নৈতিক পরিচর্যা’
‘পারিবারিক জীবনের নৈতিক পরিচর্যা’ গ্রন্থটি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে রচিত একটি গবেষণা গ্রন্থ। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আদর্শ জীবন গঠনে পরিক্ষিত ধর্ম ইসলাম। যুগে যুগে তা প্রমাণিত। আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রাসুল মানুষকে ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন। মানুষকে ঐশিক আলোর দিকে আহ্বান করেছেন। ইসলাম সাধারণ মানুষের পছন্দে আসেনি। স্বয়ং আল্লাহ ইসলামকে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আমরা ইসলামের আলোকে আমাদের জীবন গঠনের জন্য চাই প্রতিনিয়ত আত্মপরিচর্যা। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা নিজেরাই নিজেদের কল্যাণ করতে পারি। মননশীল লেখক গুলশান আরা রুবীর সৃষ্টিশীলতা সকলধারায় বিস্তৃত। বক্ষমান গ্রন্থটি তার যথার্থ প্রমাণ। গ্রন্থের মাধ্যমে তার গভীর অধ্যয়ন, অনুশীলন ও ইসলামকে জানার অদম্য আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। এটা তাঁর অসাধ্য পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফসল। এছাড়া একজন সত্যসন্ধানী লেখক হিসেবে এই গ্রন্থ তাঁকে অনবদ্য পরিচয় প্রদান করেছে। ধর্মীয় গবেষণা ভিত্তিক ক্ষেত্রে তার অনন্যতা প্রতিষ্ঠিত করেছে। লেখক গুলশান আরা রুবী এই গ্রন্থের বিষয়বস্তুকে দশটি অধ্যায়ে সুবিন্যস্ত করেছেন। এর মধ্যে দশম অধ্যায়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। লেখক তার ধীশক্তি কাজে লাগিয়ে মানবজীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ হাদিসগুলো নির্বাচিত করেছেন। হাদিসগুলোর চর্চা পাঠককে অবশ্যই কামিয়াব করবে।

প্রথম চার অধ্যায়ে লেখক নারীজীবনের আদর্শিক বিধান আলোচনা করেছেন। এখানে যথাক্রমে ওঠে এসেছে, পর্দার বিধান, শরীর ও ত্বকে রঙের ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ ও পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রথা। এছাড়া প্রথম অধ্যায়ে লেখক প্রাক ইসলামে নারীর অবস্থান ও ইসলামে নারীর মর্যাদা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। যা পাঠককে অনেক অজানা বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।

দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় আমরা প্রত্যেকেই স্বধর্ম তরীকায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। ইসলামেও আল্লাহ তাঁর নবীর মাধ্যমে চমৎকার ভাষায় তাঁকে স্মরণ ও সাহায্য প্রার্থনার নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছেন। লেখক তার গ্রন্থে সম্পূর্ণ একটি অধ্যায়ে মানুষের সাহায্যকারী এসব দোয়া নিয়ে বিশদ আলোচনা তুলে ধরেছেন। এ থেকে আমরা অবশ্যই উপকৃত হবো। আমাদের সন্তানদের জন্যও এই দোয়াগুলো নিত্যশিক্ষণীয়। যা তাদের পরবর্তী জীবনে কাজে সহায়ক হবে।

ইসলামে মেহমানদারি, রোগীর সঙ্গে সৌজন্যসাক্ষাৎ, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভ্রাতৃত্বপ্রতিষ্ঠায় সালামের ভূমিকা সবই ওঠে এসেছে এ গ্রন্থে। আমরা ভুল করি। পাপ করি। পরিণামের ভয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি। তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। তিনি পরম করুণাময়। তাঁর করুণাধারায় আমরা সিক্ত হই। ক্ষমাপ্রাপ্ত হই। লেখক তার গ্রন্থের পুরো একটি অধ্যায়েই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। খালিস-মুখলিস এবং নিবিষ্ট হৃদয় নিয়ে এ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করলে পারিবারিক জীবনে নৈতিকতার গুরুত্ব এবং এর পরিচর্যা সম্পর্কে গভীর অনুধ্যান এবং উপলব্ধি সৃষ্টি হবে। এর শিক্ষাগুলো জীবনে বাস্তবায়িত করতে পারলে পারিবারিক জীবনে শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরে আসবে–ইনশাআল্লাহ।

‘মাধুরী রাতের বাতায়ন’
গুলশান আরা রুবী’র প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মাধুরী রাতের বাতায়ন’। কাব্যগ্রন্থে কবি গুলশান আরা রুবী তাঁর অতীতদিনের স্মৃতি খোঁজে বেড়িয়েছেন। কবিতায় তিনি খোঁজে পেয়েছেন তার শৈশব, কৈশোর, প্রেমময় সংসার জীবন। মানবিক সম্পর্কের মধুর বন্ধন তার কবিতায় গভীর দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া তার কবিতায় গভীর জীবনবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

কবি গুলশান আরা রুবীর কবিতাকণ্ঠ রোমান্টিক ও আধ্যাত্মিক। তিনি প্রতীকি রোমান্টিসিজম ব্যবহার করে তার কবিতায় সুফি ঘরানার স্বরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মানবতাবাদী এই কবি একেশ্বরবাদকে তার কবিতার বিষয় হিসেবে সাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছেন। উপমা ও ছন্দের মধুর অলংকার তাঁর কবিতাকে নান্দনিক করে তুলেছে। কবিতার পাঠকমাত্রই তার কবিতার রস আস্বাদনে গভীর অনুরাগ অনুভব করবেন। তাঁর কবিতার ভাষা সরল ও মাধুর্যলহরী বিন্যাসিত। পাঠক হৃদয়ে ভালোলাগার মধুর অণুরণন সহজেই ছড়িয়ে দেবে।

কবি গুলশান আরা রুবী’র সামগ্রিক কাব্যমানস তাঁর ব্যক্তিপ্রতিভার স্বকীয়তাকে ভাস্বর করে তুলেছে। কবিতায় তিনি প্রোজ্বল, স্বচ্ছন্দ, প্রাণবন্ত এবং উদ্যমী। তাঁর কাব্যগ্রন্থাধ্যয়নে পাঠক গভীর জীবনবোধ, মানবতাবোধ, সার্বজনীন বিশ্বাস এবং রোমান্টিসিজমের রসে সিক্ত হবেন। কবিতার পরতে পরতে মিশ্রিত আধ্যাত্মিকতা পাঠককে বিশ্বাসে উদ্বেলিত করবে নিঃসন্দেহে।

‘মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে ইসলাম’
এটি গুলশান আরা রুবীর দ্বিতীয় ধর্মীয় গ্রন্থ। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে রচিত এই গ্রন্থে মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা লিপিবদ্ধ হয়েছে। একজন মানুষের নৈতিক চরিত্র বিকাশে ইসলাম কতটুকু গুরুত্ব প্রদান করে তারই স্বচ্ছ রূপ এই গ্রন্থে আলোকপাত করা হয়েছে। গ্রন্থটি লেখক গুলশান আরা রুবীর পুঙ্খানুপুঙ্খ একটি গবেষণাকর্ম। কুরআন ও হাদিসের মূল্যবান তথ্য, তত্ত্ব ও উপাত্ত নিয়ে অত্যন্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে গ্রন্থটি রচনা করেছেন। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এর জন্য মৌলিক নীতিমালাও বলে দিয়েছে। লেখক গুলশান আরা রুবী মানুষের মধ্যকার মূল্যবোধের বিকাশে ইসলামের গুরুত্ব অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। গভীর অধ্যয়ন, নিষ্ঠা এবং অজানাকে জানার অদম্য আগ্রহ প্রবণতা লক্ষ্যণীয় গ্রন্থের পরতে পরতে।

‘মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে ইসলাম’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়। লেখক এই অধ্যায়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে মানবসেবা ও সমাজ কল্যাণের দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইসলামী এনজিওগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা নিজেদের কর্মকাণ্ড শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপন, কুরআন শিক্ষা ইত্যাদির মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে এতিমদের পুনর্বাসন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বিধবাদের সহায়তা প্রদান, যৌতুক প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য নির্মূল, বৃক্ষরোপণ, স্যানিটেশন প্রকল্প, ইসলামভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প, বেকারদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সেবাকর্মের মাধ্যমে মানুষের আরও কাছে ঘেঁষতে চেষ্টা করুন। আর্তমানবতার সেবায় ইসলামের প্রকৃতচিত্র তুলে ধরুন।’

প্রত্যেক মানুষের রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। কুরআন ও হাদিসের যথেষ্ট প্রামাণ্য বক্তব্য রয়েছে। রিজিক ও তার অনুমোদিত উপকরণ অধ্যায়ে লেখক মানুষকে হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে উৎসাহিত করেছেন। আমাদের দৈনন্দিন প্রতিটি কাজ যেন আল্লাহকে রাজি ও নিজেকে সমর্পণের উদ্দেশ্যে হয়, কোনো কাজ করতে গিয়ে যেন আমরা পার্থিব কোনো শক্তি বা উপকরণের উপর নির্ভরশীল না হই। এতে আমরা অজান্তেই শিরক-এর মতো মারাত্মক গুনাহের সাথে জড়িয়ে পড়ি। প্রতিবেশীর হক নিয়েও আজকাল আমরা উদাসীন। অথচ মানুষ প্রতিদিনই সমাজ সচেতন হয়ে উঠছে। আমাদের এই সচেতনতার পাশাপাশি প্রতিবেশীর অধিকার নিয়েও আমাদের সচেতন হতে হবে। সামাজিক বৈষম্য নির্মূল করার লক্ষ্যে ইসলাম প্রতিবেশীর হক সুদৃঢ়ভাবে কুরআন ও হাদিসে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমাদের অজ্ঞতার কারণে প্রতিবেশীকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও কষ্ট দিতে দ্বিধা করি না। একজন অমুসলিমেরও হক রয়েছে তার মুসলিম প্রতিবেশীর উপর। প্রতিবেশীর হক অধ্যায়ে লেখক এরকম বহুবিষয়ে গভীর আলোকপাত করেছেন। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কিত অধ্যায়ে লেখক মূর্খতা, আল্লাহভীরুতায় দুর্বলতা, অহংকার, অ্যাপ্যায়নে বেশি বাড়াবাড়ি, অত্যধিক কার্পণ্য, মিরাস বণ্টনে অতিবিলম্ব, তালাক, অলসতা, হিংসা, পরচর্চা-পরনিন্দা, অত্যধিক ঠাট্টা-তামাশা ইত্যাদি নিয়ে কুরআন ও হাদিস থেকে তার জোরালো বক্তব্য পেশ করেছেন। যে বিষয়গুলো একজন মুসলিমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গঠনে অত্যন্ত সহায়ক ও জরুরি। সাধারণ দান-সাদাকাহ, জাকাত প্রদানের উপর লেখক অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। আর্তমানবতার সেবায় মানবজীবন উৎসর্গ করার মাঝেই আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর প্রতিটি দানই আল্লাহর দরবারে বান্দার জন্য বিরাট মূল্যায়ন। সম্পদ ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দানের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়াও লেখক এই গ্রন্থে যেসব আমল করলে রিজিক বাড়ে সে বিষয়ে একটি অধ্যায় গ্রন্থিত করেছেন। নিয়মিত তাওবা ও ইস্তেগফার করা, দরুদ পড়া, আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, হজ্ব করা, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, বিয়ে করা, আল্লাহর উপর ভরসা করা ইত্যাদি আমল মানুষের রিজিককে প্রশস্ত করে। এসো জান্নাতের পথে অধ্যায়ে লেখক আটষট্টিটি ছোট ছোট অনুচ্ছেদে সহজে একজন মুসলিম কিভাবে জান্নাতের অধিকারী হতে পারেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন : লা-হাওলা ওয়ালা কু’ওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ বেশি করে পাঠ করা, অজুর পর কালেমা শাহাদাত পাঠ, সালাম বিনিময়, রাগকে নিয়ন্ত্রণ, অহংকার, খেয়ানত, ঋণ থেকে মুক্ত হওয়া, এতিমের প্রতি সদয় হওয়া, বেশি বেশি সুরা ইখলাস পাঠ, পিতামাতার কল্যাণকামী হওয়া, এরকম অত্যন্ত জরুরি ইবাদত যা অতি কম সময়ে বেশি পুণ্য লাভ করা যায়। আর এই আমলের মাধ্যমে একজন মুসলিম খুব সহজেই কাঙ্ক্ষিত জান্নাত অর্জন করতে পারেন। তার এই গ্রন্থটি লিখে বিশ্বের বাংলাভাষাভাষী মুসলিম ভাইবোনদের কল্যাণ সাধনে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কামিয়াবী হাসিল হবে।

‘যুদ্ধদিনের ভালোবাসা’
এটি গুলশান আরা রুবী’র দ্বিতীয় উপন্যাস। এর আগে তার আরেকটি উপন্যাস ‘মন যার শাওনের মেঘ’ বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সেই অনুপ্রেরণা ও পাঠকের প্রতি ভালোবাসার টান থেকেই লেখক লিখেছেন তার নতুন উপন্যাস ‘যুদ্ধদিনের ভালোবাসা’। পূর্বেকার উপন্যাসের মতই তিনি নিজেকে একজন সার্থক কথাশিল্পী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসের আনুষাঙ্গিক উপাদানের সার্থক সংমিশ্রণ তার সৃষ্টিকে অতুলনীয় রসে সিক্ত করেছে।

একাত্তরের ভয়াল সময় ‘যুদ্ধদিনের ভালোবাসা’ গ্রন্থের পটভূমি। অগ্নিগর্ভ পূর্ববাংলার প্রেক্ষাপট। যে প্রেক্ষাপটে শুধু এই উপন্যাসের নায়ক নায়িকাই নয়, বদলে গেছে অথবা তছনছ হয়ে গেছে অগণিত মানুষের ভাগ্য। যুদ্ধ মানুষকে, তার সমাজ ও দেশকে কতোটুকু প্রভাবিত করতে পারে তা আমরা এখন বেশ অবগত। যুদ্ধে যুদ্ধে আমরা আমাদের উদ্ধত মানচিত্রের অধিকার পেয়েছি। সেই অধিকার অর্জনের জন্য কতোটুকু মূল্য দিতে হয়েছিল একাত্তরের তরুণ ফায়সালকে ও দীপ্তিকে। তাদের কাহিনিই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। ভালোবাসা পাবার জন্য কতোটা হারাতে হয় এ উপন্যাস না পড়লে বুঝা যাবে না। লেখক সুনিপুণ তুলি দিয়ে তার চরিত্রের জীবনচিত্র এঁকেছেন। যা পাঠককে মুগ্ধ করবে।

যুদ্ধের পর হঠাৎ একদিন ফায়সালের সাথে দেখা হয়ে যায় দীপ্তির। প্রায় পঁচিশবছর পর দুজনের দেখা। দুজনের মনে অনেক প্রশ্ন, অনেক সন্দেহ, অনেক অভিযোগ। দুই বরফ হৃদয়ের দানা যখন গলতে থাকে, তারা খোঁজে পায় তাদের পুরোনো দিনের প্রেম। তাহলে ভালোবাসা কি পূর্ণতা দেয় ফায়সালের জীবনে, দীপ্তি কি তার ভালোবাসার স্বাধীনতার ফসল রক্ষা করতে পেরেছিল? জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে ‘যুদ্ধদিনের ভালোবাসা’ গ্রন্থটি। তাঁর অসাধারণ রচনাভঙ্গি তাঁর সফল নির্মাণের পরিচয় দেয়। সত্যিই তাঁর উপন্যাসমানসই কারিগরের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছে। এ উপন্যাসাধ্যয়নে পাঠক দেশমাতৃকার প্রতি অপরিসীম প্রেম এবং ভালোবাসা অনুভব করবে। দেশপ্রেমের অনুভূতি প্রিয় মানুষগুলোকেও সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে তাড়িত করবে। এটাই হবে লেখকের প্রকৃত সফলতা।

‘বর্ণালি হৃদয়ে স্বর্ণালি প্রেম’
‘বর্ণালি হৃদয়ে স্বর্ণালি প্রেম’ গুলশান আরা রুবীর অনবদ্য রোমান্টিক উপন্যাস। সমাজের উঁচুতলার মানুষ কিভাবে তার সমস্তরের সাধারণ মানুষকে নিষ্পেষিত করে নিজেদের কথিত প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত করে, তাই এ উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় সরলরেখাচিত্রে অঙ্কিত হয়েছে।

গুলশান আরা রুবী বাংলাসাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমের মতো উপন্যাসেও বেশ শক্তিমান লেখক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন। উপন্যাস রচনায়ও তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নীতি দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত। তাঁর ভাষা সাবলীল। সময়ের স্রোতে প্রবহমান চরিত্রগাঁথা সুকল্পনীয়।

‘বর্ণালি হৃদয়ে স্বর্ণালি প্রেম’ একটি রোমান্টিক ঘরানার উপন্যাস। গ্রামের এক সাধারণ তরুণী বিলকিস, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিহাবের প্রেমে পড়ে কিভাবে বিশ্বাসের ইমারত নির্মাণ করে, তাই এই উপন্যাসের কাহিনিলেখ্য। বাংলাবিভাগের অধ্যাপিকা শায়লার মধুর কণ্ঠে সঙ্গীত জোসনারাতকে মোহময়ী করে তোলে কোন জাদুকরী মায়ায়, জানতে হলে ‘বর্ণালি হৃদয়ে স্বর্ণালি প্রেম’ পুরো উপন্যাস একনিশ্বাসে পড়ে নিতে হবে। একটি দারুণ রোমান্টিক আবহে এগিয়ে যায় বিলকিস ও শিহাবেব মিলন উপাখ্যান।

গুলশান আরা রুবী তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার দ্বারা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছেন। সাহিত্যে তাঁর মননশীল অগ্রযাত্রা সুদূরের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সাহিত্য এবং প্রবাস- দুটি প্রান্তিক বিষয়কে একীভূত করে তিনি সাহিত্যাকাশে নিরন্তর ছুটে চলেছেন। তাঁর কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং গান মূলধারার সাহিত্যচেতনার প্রতিনিধিত্ব করবে। তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যই সময়ের আবর্তনে অন্বিষ্ট প্রতিভার জানান দেবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, প্রকাশক ও সংগঠক।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD