আমার দেখা আমার লেখা- ১৭।।
-হাসনাইন সাজ্জাদী
কৈশোরে আমার পাখি শিকার ও গ্রামে ভুতের সমাহার
।।
কৈশোরে আমি দ্বহপাড়ায় লজিং এ গিয়ে পাখি শিকারে জড়িয়ে পড়ি।আমার লজিং মাস্টার মাহমুদ আলী (মাখই ভাই)ছিলেন পাখি শিখারি দলের নেতা।বিকেলে হাকালুকি হাওর থেকে পাখি রানিমুরা,সমাই কিংবা ভজিরটিলার কোনো না কোনো ঝুপঝাড়ে এসে বসা শুরু করতো।একজন গিয়ে দেখে নিতেন পাখি আজ কোথায় বসছে।
তারপর রাত ১০ টার পর ৮/৯ কিলোমিটার হেটে গিয়ে ঝুপঝাড়ে আমরা লাইন কেটে নিতাম।দুই লাইন দিয়ে দুই দল রশি টেনে আনতো।সামনে জাল টাঙানো থাকতো।পাখিরা উড়ে উড়ে জালে গিয়ে পড়লে জাল বন্দ করে পাখি ধরে জবাই দিয়ে খাচায় রাখা হতো।সময়টা ১৯৮১/৮২ খ্রিষ্টাব্দের কথা।তখন পাখি শিকার নিষিদ্ধ ছিল না।তবে প্রশাসনের কেউ জেনে গেলে ভাগ দিতে হতো।তাই গোপনীয়তা রক্ষা করে পাখি শিকার করতাম।
একবার শিকার করা পাখি পাহারার দায়িত্বে আমি।হাতে লম্বা(বাঁশের মাথায় সরু চোকা করেলোহা বসানো)জুলফি।দেশীয় অস্ত্র।লক্ষভেদী অস্ত্র।
রাত আনুমানিক ২/৩ টা বাজে।এমন সময় হটাৎ সামনে দেখি বিশাল বাঘ বসে আছে।হউউউ বলে জিহবা দিয়ে গাল চাটছে।জুলফি হাতে আমি অসাড় ও নির্বিকার।এমন সময় ত্রানকর্তা হিসেবে এগিয়ে এলেন মাখই ভাই।তিনি হাত ডুকিয়ে খাচা থেকে পাখি তুলে বাঘের মুখে ছুঁড়তে থাকলেন।একসময় সে মুখ বন্দ করে চলে গেলো।মাখই ভাই বললেন এটা জঙ্গলের রাজা।খাবার দেয়াতে নিরবে চলে গেছে।
উপস্থাপিত ছবিতে কিছু পাখির আকাশে উড়ার চিত্র ধারণ করা করা হয়েছে।কিন্তু ছবিতা পরিস্কার হয়নি।
এ পাখিগুলো বসে ভোকতেরা গ্রামের সমছু ভ্রাতৃদের বাড়িতে।সমছুরা আগে পাখি শিকার করতেন ইয়ারগান ও দু’নলা বন্দুক দিয়ে।এখন আর তারা আর পাখি শিকার করেন না।রাতে হাজার হাজার পাখির আবাস তাদের পুকুরপাড় সংলগ্ন গাছগাছালি ও লিচু বাগানে।
বাড়িতে আছি।এক সন্ধ্যায় হাজার হাজার পাখির ছন্দায়িত উড়ে এসে বসার দৃশ্য যখন অভিভূত হয়ে দেখছি তখন আমাদের এক চাচী জানালেন তাদের পুকুরে মাল (দেও)আছে।তাই পাখি বসে।কেউ শিকারের সাহস পায় না।পাশে থাকা ময়না মিয়া যোগ করলো তাদের পুকুর পাড়ে রাত দুপুরে কল্পনার মতো একজনকে চলাচল করতে দেখা যায়।কল্পনা সমছুদের ছোটো বোন।
সমছুকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে বলে-মানুষতো কত কথাই বলে।আসলে তা ঠিক নয়।
গ্রামে এভাবে আজগুবি গল্প এখনো অনেক শোনা যায়।বিশেষ করে ভুতের গল্প।ঘরে ভুত,বাইরে ভুত,চারদিকে ভুত আর ভুত।বোঝানোর উপায় নেই, ভুত নয় এটা মনের ভ্রান্তি এবং কুসংস্কার।উল্টো তারা প্রমাণ দিয়ে বসবে।তাই তর্ক না করে নিরবতা পালন করি…
Leave a Reply