শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

ইমাম মেহেদী – সরওয়ার ফারুকী

ইমাম মেহেদী – সরওয়ার ফারুকী

ইমাম মেহেদী

ঈমাম মেহেদী

ঈমাম মেহেদী বা ঈসা (আ.) হয়তো আসবেন। কিন্তু কাজী ইবরাহীম আর পিচ্চি আদনানের দেয়া তারিখ অনুযায়ী না। কাজী ইবরাহীমের সাথে এখন জুটি বেঁধেছেন পিচ্চি আদনান, দুজন সমস্বরে দিন-ক্ষণ নির্ধারণে ব্যস্ত, কেউ ইমাম মেহদিকে সিরিয়ার গুহায় লুকিয়ে রেখেছেন, কেউ বা তাদের জন্য ঘোড়ার অর্ডার দিয়ে দিচ্ছেন— এসব বাচালতা ইসলামের শিক্ষার সাথে যায় না।

রাসুল এভাবে ইন্তেজারের শিক্ষা দিয়ে যান নি। কুরআনের কোথাও ঈসা-মেহেদির জন্য অপেক্ষা করা বা তাদের নিয়ে মাতামাতি অতি পূন্যের কাজ— এমন ঘোষণাও নেই। কাজী ও আদনান-দ্বয় বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন হাদিসের বর্ণনাকে সুনিপুণ গল্পের মতো সাজিয়ে তা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবির মতো উপস্থাপন করছেন— যা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করছে।

আরো পড়ুনঃ সিনেমার ভাষায় অভিনয়-জামাল উদ্দিন দামাল

আতঙ্কবাদী বা নৈরাশ্যবাদীরা সবসময় উদ্ধারকারীর জন্যে অপেক্ষা করে। অথচ বিপদগ্রস্তের জন্য আল্লাহই সর্বোত্তম উদ্ধারকারী— এটাই ইসলামের শিক্ষা। আল্লাহ যদি কাউকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেন, তাকে নবী মোহাম্মদও উদ্ধার করতে পারেন না, আর আল্লাহ যাকে উদ্ধার করেন, তাকে ফেরাউনের বাহুবলও ডুবিয়ে দিতে পারে না। ইসলাম এ শিক্ষাই মানুষকে দিয়েছে। ইসলাম বলেছে, কেবলমাত্র আল্লাহই বালা-মুসিবত থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। যারা আল্লাহর পথে চলে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, জীবনের বাঁকে বাঁকে তারাই আল্লাহর পক্ষ থেকে মদদপ্রাপ্ত হয়।

আল্লাহর পথে লড়াইরত কোনো মোজাহিদগোষ্ঠীর মধ্যে ইমাম মেহেদী বা ইসা (আ.) নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি বা অপেক্ষার সংবাদ পাবেন না। তারা জানে ঈমাম মেহেদী বা ইসা-র অপেক্ষা করা মুমিনের দায়িত্ব নয়। বরং মুমিনের দায়িত্ব আল্লাহর পথে অবিরাম লড়তে থাকা, আল্লাহর ইচ্ছে হলে জেহাদের যাত্রাপথে হয়তো ঈমাম মেহেদী বা ঈসা-র সাক্ষাৎ লাভের সৌভাগ্য হয়ে যেতে পারে— এটা কেবলই আল্লাহর ইচ্ছা।

ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই কিছু মানুষ মেহেদী, ইসা-র সন্ধান লাভে ব্যাকুল ছিল। এ ব্যাকুলতা আজও অনেকের মধ্যে প্রবাহমান। ইমাম গাজ্জালীর সময়ে তো ঈমাম মেহেদী ‘এই চলে আসলেন’ অবস্থা! চেঙ্গিস-তাণ্ডবেও তো ঈমাম মেহেদি প্রায় এসেই গিয়েছিলেন! সব যুগেই বিপর্যস্ত মানুষেরা এভাবে মেহেদির অপেক্ষায় দিন গুজরায়। কিন্তু, সংগ্রামমুখর পৃথিবীর ইতিহাসে, যুগে যুগে, জাতিতে-জাতিতে রক্তক্ষরণের যে জ্বলজ্যান্ত তসবির গাঁথা— তা মানুষকে ইমাম মেহেদি বা ঈসা-র অপেক্ষা করবার শিক্ষা দেয় না— বরং লড়াই করে ঠিকে থাকার শিক্ষাই দেয়।

রাসুল (স.) কখনো ঈমাম মেহেদী বা ইসা-র অপেক্ষা করে বসেথাকার কথা বলেন নি, কোনো এক সময় কেয়ামতের আগে তারা আসবেন— এ সুসংবাদ দিয়েছেন। আর, কাজী ইবরাহীম ও পিচ্চি আদনান-দ্বয় করতে লাগলেন অপেক্ষা! মানুষের কান ঝালাপালা করে দিচ্ছেন তারা। লক্ষকোটি জোয়ান ছেলের পৌরুষ ধ্বংস করে দিচ্ছেন, হতাশা, আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছেন! আতঙ্ক ছড়িয়ে দিনকে দিন নৈরাশ্যবাদীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছেন!


মেহেদীর আগমন তরান্বিত করতে কাজী ইবরাহীম গুজব ছড়াচ্ছেন, রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা পাতালমুখী একটি পাইপ দিয়ে দোজখীদের চিৎকার রেকর্ড করে ফেলছে! অথচ বেহেশত-দোযখ কোনো চর্মচক্ষু দেখতে পারে না, কোনো কান সেখানের আওয়াজও শুনতে পারে না। আজ যদি রাশিয়ান পাইপ দিয়ে দোজখীদের চেচামেচি রেকর্ড করা যায়, তাহলে আগামীদিন অনেকেই নাসা-র রকেট দিয়ে বেহেশতেও পৌঁছে যাবে, বেশেতের ফলমূল নিয়ে আসবে! তাকে আটকাবেন কীভাবে? এমন বিভ্রান্তিকর আকীদা ও অপপ্রচার তাঁরা না বুঝেই সম্প্রচার করছেন!

সুবিশাল এ নেয়ামতরাজি আল্লাহ উদ্দেশ্যহীন সৃষ্টি করেন নি। নিজেকে প্রকাশের উদ্দেশ্যেই তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, কুরআনে এ খবর জানিয়েও দিয়েছেন। এ সুবিশাল সৃষ্টির কিঞ্চিতাংশ মানুষ ভ্রমণ করেছে মাত্র। সৌরজগতের বাইরে মানুষ তার তৈরি যান এখনও পাঠাতে পারে নি। অথচ বস্তুজগতের সকল জ্ঞান মানুষের জেহেনে পুরে দেয়া হয়েছে। আদম (আ.) এ জ্ঞানের বদৌলতেই ফেরেশতামণ্ডলীর সেজদা পেয়েছিলেন। তিনি তামাম সৃষ্টির নামোল্লেখ করে মানুষকে সৃষ্টিজগত উপভোগের একমাত্র যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন।

তাই, আজ তারই বংশধর গ্রহান্তরে ছুটছে, এ ছুটে চলা সবেমাত্র শুরু। আল্লাহ তার নিপুণ সৃষ্টি মানুষকে দেখাবেন, এবং দেখানোর জন্যই তো তিনি মানুষকে চয়েজ করে, নিজের প্রতিচ্ছায়ায় পয়দা করেছেন। বস্তুজগতের রূপ দেখা ও তার পাঠোদ্ধারের দায়িত্বও তিনি মানুষকে দিয়েছেন। মানুষ ছাড়া অন্য কেউ বস্তু-রহস্য ভেদ করতে পারে না, রহস্যের পাঠোদ্ধার করতে পারে না। মানুষের মধ্য দিয়েই আল্লাহ তা করাচ্ছেন। মানুষ গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সিতে ছুটছে, ছুটবে, আর কাজী ইবরাহীমেরা তা বন্ধ করতে চাচ্ছেন! এটা আল্লাহর সাথে, আল্লাহর ইচ্ছার সাথে, মানুষকে পয়দার লক্ষ্যের সাথে সুস্পষ্ট দ্বন্দ্ব।

ঈমাম মেহেদী বা ইসা (আ.) আসবেন। এটা বিশ্বাস। কিন্তু, তাদেরকে জোর করে নামিয়ে আনা, বা তাদের জন্য অপেক্ষা করা অথবা কুরআন-হাদিসের সুবিশাল জ্ঞান ও আমলের পথে ছেড়ে ঈমাম মেহেদী ও ঈসা-কে নিয়ে কল্পচরিত্র বর্ণনা করা সুস্পষ্ট হারাম— যা কাজী ইবরাহীমেরা করছেন (আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন।)


মস্তফা সরওয়ার।

 

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD