আজ বিশ্ব বাবা দিবস
🖋️এস এম শাহনূর
ভাল হোক,মন্দ হোক বাবা আমার বাবা
পৃথিবীতে বাবার মত আর আছে কেবা।’
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্ভরতার জায়গা বাবা।
পবিত্র কোরআনে পিতা-মাতার সম্মান প্রসঙ্গে বলা আছে, তাদের সঙ্গে উহ! শব্দ পর্যন্ত করো না।হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে,”মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি।” পিতা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়ার মতো যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধু ঝরতেই থাকে। “পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহী পরমং তপঃ পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা।” পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতা পরম তপস্যার। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে স্বর্গজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন।
বাবা- প্রতিটি সন্তানের চোখে প্রথম আদর্শের নাম।
আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার নাম বাবা।
বাবা – চির আপন, চিরন্তন এক সম্পর্কের নাম।
মাথার উপর বটবৃক্ষের মতো ছায়ার নাম বাবা।
হাসি মুখে সন্তানের আবদার পূর্ণকারীর নাম।
যার ব্যক্তিত্ব, সরলতা আকৃষ্ট করে প্রতিটি সন্তানকে।
তবে পিতার বুকফাটা আর্তনাদ না শোনার মতো সন্তানও এই সমাজে আছে।
‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার।
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি
সবচেয়ে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি
ছেলে আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’-নচিকেতার এই গানের বাস্তবতা মিলবে গাজীপুরের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
অথচ,একদিন অসুস্থ শরীরের ক্লান্তিকে পাত্তা না দিয়ে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য,অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সব মৌলিক চাহিদা ও নিরাপত্তার জন্য ছুটে চলেছেন দিন রাত।
বছর ঘুরে আজ এসেছে সেই দিন, যেদিন বাবার পা ছুঁয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরে বলা যায়- ‘বাবা, তোমায় অনেক ভালোবাসি’।
বাবার চোখে সব সন্তানই সমান।তবে
সব মেয়েই প্রথম যে পুরুষের ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়,তার নাম বাবা।
কন্যা সন্তানরা যার কাছে একটু বেশিই আদর পান তার নাম বাবা।
মেয়ের বিয়ের সময় যিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান তার নামও বাবা।
কন্যা সন্তানের যার প্রতি গভীর অনুভূতি থাকে তার নামও বাবা।
হিন্দুরীতির বিয়েতে যখন বাবা ‘কন্যাদান’ করেন, কিংবা মুসলিম পিতার কন্যাও যখন স্বাম২র হাত ধরে পিতৃগৃহ ত্যাগ করে তখন তার কান্নায় আর্দ্র হয়ে ওঠেন উপস্থিত সবাই।আর সে জন্যই বিদায় বেলায় নিঃশব্দ অশ্রু গেয়ে ওঠে- ‘আমি যাচ্ছি বাবা, আমি যাচ্ছি/চোখ মুছে মুখ তোলো/স্নেহের বাঁধন খোলো/এবার তোমায় দিতেই যে হয়/যাবার অনুমতি,/বাবা খেয়াল রেখো/ তুমি তোমার প্রতি’।
এনসাইক্লোপিডিয়া জানাচ্ছে, জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। তৃতীয় রোববার হিসেবে(২০২২ সাল) এ বছর ১৯ জুন পালিত হচ্ছে বাবা দিবস।
বাবা তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটি বলার জন্য একটি দিন প্রয়োজন- প্রথম তা অনুধাবন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের নিকটবর্তী ছোট্ট শহর ক্রেসটনের বাসিন্দা সোনোরা লইস ডট নামের এক তরুণী। সৎমায়ের কাছে মেয়ের অবহেলা হতে পারে- এ শঙ্কায় সোনোরার বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেননি। সোনোরাকে বড় করতে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দেন। সোনোরা বাবার এই ত্যাগকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। বাবার প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কথা সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন। তাতেই মাথায় আসে ‘বাবা দিবস’ পালনের চিন্তা। উইলিয়াম স্মার্টের মৃত্যুবার্ষিকী ৫ জুন। প্রথম ‘ফাদারস ডে’ পালন করা হয় ১৯ জুন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্যাটেলাইট যুগের সুবাদে বাবা দিবস ঘটা করেই পালিত হচ্ছে।
বাবার জন্য প্রতিটি দিবস, তবু বিশেষ এই দিনটিতে আসুন বলে দিই-
‘বাবা, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তোমার কারণে আজকের এই আমি’।
আর যাদের পিতা এই জগতে বেঁচে নেই দুহাত তুলে তাদের জন্য এই বলে দোয়া করি-
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।
লেখক: এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)
Leave a Reply