শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন

অবন্ধ ডায়েরি – আবিদ ফায়সাল

অবন্ধ ডায়েরি – আবিদ ফায়সাল

অবন্ধ ডায়েরি - আবিদ ফায়সাল

অবন্ধ ডায়েরি
আবিদ ফায়সাল

মোস্তফা সেলিম স্বনামেই খ্যাত, সমাদৃত এবং পরিচিত। জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশনা সংস্থার নেতৃত্বে আছেন তিনি। এককালে ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ছাত্রসংসদের নির্বাচিত সদস্য হিশেবে কলেজবার্ষিকীর সম্পাদক। এরপর কিছুদিন সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেসময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যের ভিত্তিতে একখানা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাধর্মী গ্রন্থও লেখেন।

মোস্তফা সেলিম শুরু থেকেই উৎস সন্ধানী, অক্লান্ত উদ্যমী। নিছক অর্থের পেছনে না-ছুটে, কিংবা চূড়ান্ত ভোগবিলাসে না-ডুবে, সমীপকালীন বন্ধুদের মতো নিরাপদ জীবনযাপনের আশায় বিদেশে পাড়ি না-দিয়ে সময়, বিরাট অঙ্কের অর্থ, উদ্যম ও শিল্পীসত্তার একাগ্রতা দিয়ে গড়ে তুলেছেন উৎসগ্রন্থি প্রকাশনাসংস্থা। আর এর নামও দিয়েছেন উৎস প্রকাশন। তিনি উৎসের মধ্যে উৎস খুঁজেছেন।

আরো পড়ুনঃ মোহাম্মদ নাসিম ভাইয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে।। লায়ন সালাম মাহমুদ

আমরা তখন অনেকে জানতাম না—বাংলা ভাষার রয়েছে দুটি বর্ণমালা। একটি প্রমিত বাংলা, অন্যটি সিলেটি নাগরী। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা নেই, অথচ আমাদের রয়েছে একই ভাষার দু-দুটি বর্ণমালা। চতুর্দশ শতকে আরবি, কাইথি, বাংলা ও দেবনাগরীর অনুসরণে উদ্ভব হয় সিলেটি নাগরী।

এ লিপিতে লিখিত হয় বহু দলিলদস্তাবেজ এবং রচিত হয় শত শত গ্রন্থ। যার একটা বিরাট অংশ কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। মোস্তফা সেলিম সেই হারিয়ে যাওয়া মণিমুক্তা পুনরুদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেন। বের করেন নাগরী বর্ণমালা শিক্ষার বই। সহযোগীর মাধ্যমে বাংলা লিপ্যন্তর করে নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্যের রসোদ্গার করতে প্রকাশ করেন বিরল জাতের লেখকদের কেতাবসম্ভার। নির্মাণ করেন নাগরীবিষয়ে প্রামাণ্যচিত্র।

এ-নিয়ে প্রথম প্রথম তাঁকে নানান তীর্যক কথাবার্তা শুনতে হতো। বন্ধু-পরিজন থেকে শুরু করে সারস্বতমহলের কেউ কেউ তাঁকে প্রশ্নবাণে আক্রান্ত করতো। কিন্তু তাঁর যোগী মন অভিমানাহত হয়নি। বরং বীরবলের সাহস নিয়ে প্রত্যয়িত হতে থাকে। এখন অবশ্য সেই প্রশ্নকর্তারাই তাঁর তারিফ করেন। বলেন, নাগরী কোনও অঞ্চলের সম্পদ নয়, বাংলারই। আর পুরো জাতির তরফে মোস্তফা সেলিম এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। ভাষাসৈনিকের সাহস আর প্রেম নিয়ে এর বিকাশে কাজ করছেন। শুধু তা-ই নন, অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন।

তাঁর প্রতিষ্ঠান অর্জন করেছে বাংলা একাডেমি পদক ‘সেরা মানের গ্রন্থ সম্মাননা’ (২০০৮)। আরও সম্মাননা ও পদক স্বীকৃতি পেয়েছে। এই কৃতী ও কীর্তি নিয়ে তাঁর কোনও বছরপূর্তিকে সামনে রেখে আমাদের কর্তব্যবোধের তাড়না থেকে সম্পাদিত হতে পারে তথ্যে সজীব, রসে স্বাদু ও বৈঠকি মেজাজে পূর্ণ একটি স্মারকগ্রন্থ।

আজ প্রকাশক, গবেষক, সম্পাদক ও লেখক মোস্তফা সেলিমের জন্মদিন। এই শুভক্ষণে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণতি।

সিলেট
৮ জুন, ২০২১

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD