বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন

‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন মেলাঘর ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শনে আমরা…

‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন মেলাঘর ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শনে আমরা…

মহান মুক্তিযুদ্ধে মেলাঘর শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প এলাকায় আমাদের ফিল্ড ওয়ার্ক…
-হাসনাইন সাজ্জাদী
।।

ত্রিপুরা মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত মাঠ।পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত ভারতের ১৩৫০ মাইল সীমান্তের মধ্যে ত্রিপুরা এক বিশেষ অধ্যায়।পুরো ত্রিপুরার
জুড়েই ছিল শরণার্থী ক্যাম্প।পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়ে বিপুল সংখ্যক ভীতসন্ত্রস্ত বাঙালি শরণার্থী ভারতের নানা সীমান্তে আশ্রয় নেয়। শরণার্থীদের সংখ্যা সারা ভারতে ছিল ১ কোটি।আর ১৭ লাখ ছাড়িয়ে গেয়েছিল ত্রিপুরায়।তখন ত্রিপুরার লোক সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ।যা ছিল তৎকালীন ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।
আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরে আবার প্রথম দিকে খোলা আকাশের নিছে ছিল তাদের আশ্রয়।আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল,কলেজ মাঠ,সীমান্তবর্তী সমতল,পাহাড় চূড়া এবং ঢালে। ছাত্রাবাস বন্ধ করে সেখানে শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।অন্যরা তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন কিংবা স্বল্প পরিচিত জনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে কেউ কেউ।
এরই মধ্যে বর্ষা এসেছে,গেছে।শধু নয় শরণার্থী,খোদ ত্রিপুরাবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে কাটাতে হয়েছে দীর্ঘ ৯ মাস।সে স্মৃতির মানুষেরা এখন প্রায় গত হয়েছেন।যারা আছেন তাদের স্মৃতিও ঝাপসা।আমার পূর্বাপর প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিতব্য এবং গবেষক, কবি ও সাংবাদিক লোকমান হোসেন পলার মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার অংশীদার হয়ে ৭আগস্ট আমরা যাত্রা করি মেলাঘরের পথে।আমি,পণ্ডিত কার্ত্তিক কর্মকার,রবিউল ইসলাম খান এবং পলা তো ছিলেনই।
আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে আমরা একজন ব্যাক্তিকে পাই।তিনি কবি,সাংবাদিক,প্রকাশক ও গবেষক বিল্লাল হোসেন ভাই।ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিযায়ী ঠেকে নিয়মিত লেখক আড্ডায় আমন্ত্রণ জানালেন কবি অনিকেত মৃণালকান্তি।যেখানে গিয়ে যাদের যাদের পেলাম তারা ছিলেন প্রাতঃস্মরণীয় কবি রাতুল দেববর্মন দাদা,সিনিয়র সাংবাদিক সমীর ধর দাদা,কবি অপাংশু দেবনাথ দাদা,প্রকাশক নীলোৎপল সরকার দাদা,দাদা অভিজিৎ দেববর্মন,সঞ্জীব দে দাদা প্রমুখ।৭ আগস্ট আমাদের প্রদর্শকের দায়িত্ব বিল্লাল ভাইয়ের হাতে তুলে দেন সমীর দা।গাড়ির রিজার্ভের দায়িত্ব পালন করেন কবি আকবর আহমেদ ভাই।
মেলাঘর,সোনামোড়া,বটতলীর বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আলোচিত ক্যাম্প ছিল।মেলাঘরের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পকে ঘিরে ছিলো শরনার্থীদের বসবাস।মেলাঘর পাহাড়, সমতল,নিম্নাঞ্চল নিয়ে এক বিশাল এলাকা।দু-একটি বাড়িঘর ও টিলার উপর ছিল একটি ছোটো স্কুল।যা এখন আবাসিক এলাকা ও একাধিক পাকা ভবনের স্কুল ও মসজিদ নিয়ে ব্যস্ত জনপদ।
৭ টায় গাড়ি আমাদেরকে তুলে নিল হকার্স কর্নারের হোটেল মীনাক্ষী থেকে।বিল্লাল ভাইকে বটতলা ফলপট্টি থেকে তুলে নিয়ে রওয়ানা দিলাম।
দু’পাশের সবুজ গাছগাছালি,সমতল,ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলাশয় আবার কখনো রাবার বাগান।
পার হয়ে দক্ষিণ মুখে আমরা ছুটে চলি। ত্রিপুরায় তিনটি আঞ্চলিক ভাষার গন্ধ পাওয়া যায়।ধর্মনগর-কৈলাসহর অঞ্চলে সিলেটি ভাষা,মেলাগড় -সোনামোড়া অঞ্চলে কসবা-কুমিল্লার ভাষা এবং বিলোনীয়া অঞ্চলে ফেনী ও নোয়াখালীর ভাষার গন্ধ বিদ্যমান।
বিল্লাল ভাই আক্ষেপ করে জানান,আগরতলায় কে কার খবর রাখে!আমরা কিছু মানুষ জড়ো হই।
কথা বলতে বলতে আমরা সিপাহিজলা জেলায় প্রবেশ করি।পাশেই বাংলাদেশের কসবা উপজেলা।
ছোটো ছোটো বাড়িঘর,মন্দির ছূড়ো জানান দিচ্ছে আমরা আগরতলায় আছি।অধিকাংশই ১ তলা বাড়ি।ঘন বসতি নয়।চরকবন পাড়ি দিলাম।এখানেই সিপাহিজলা জাতীয় উদ্যান।বিশ্বের একমাত্র মেঘলাচিতার অভয়ারণ্য।এখানে নেমে ফটোগ্রাফি করি।পশ্চিম ত্রিপুরা ভেঙে সিপাহিজলা জেলা করা হয়েছে।জেলা সদর বিশ্রামগঞ্জ।
নাস্তা খেতে নামলাম বিশ্রামগঞ্জ বাজারে।পরোটাভাজি ও রসগোল্লা খেয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসি।পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট,সবুজাভ প্রকৃতি।সুন্দরের গ্রাম।নেচারেল বিউটি।বাঁ দিকের আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।মাথার উপর ঝলমলে রোদ।ডানে বাংলাদেশের উপর দিয়ে কালো মেঘ উড়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশে এমন সুন্দর সাজানো গ্রাম দেখা যায় না।
এবার পৌঁছে গেলাম নলছড়াতে।এবার মানুষের দল বেধে হাঁটাচলা ও মাটির ঘর চোখে পড়লো।দারিদ্র্যতার ছাপ এবং ভাঙা রাস্তা এবার চোখে পড়ছে।বাঘাইয়া মোড়া পার হয়ে চণ্ডিগড়।জলের মধ্যে রাজবাড়ী।নির্মলায় নিরমহল।
রাজবাড়ির চারপাশে মৎস্যজীবিদের হাহাকারের কথা আলোচনায় উঠে এলো।ত্রিপুরার প্রথম চলচ্চিত্র “নোঙর ” তৈরির কথাও জানা গেল।মৎস্যজীবিদের শোক দুঃখ নিয়ে নির্মিত এ ছবির নায়ক আমাদের উল্লেখিত সিনিয়র সাংবাদিক সমীর ধর দাদা।রাজাদের সাধ আহ্লাদের অভিশপ্ত নিরমহল পার হয়ে এবার
পৌঁছে গেলাম মেলাঘর।
মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের কিশোর বর্তমানের স্কুল মাস্টার শংকর চন্দ্র দাস দাদাকে আগে থেকেই বিল্লাল ভাই ও অপাংশু দা উপস্থিত থাকার ব্যবস্থা করেন।তার মাধ্যমে আরেক জন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল মাস্টার আব্দুস ছত্তার মহোদয়কে পেলাম।তারা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এবং বিশ্লেষণ করে অনেক তথ্য দিলেন।আমরা নানা মাধ্যমে তা সংগ্রহ করে নেই।তারপর সাব্রুমের পথে আমাদের যাত্রা শুরু।

( ছবি গুলো মেলাঘর, বিশালগড়, বটতলা. সোনামোড়া,প্রভৃতি এলাকা থেকে তোলা।যেখানে ছিল মুক্তিযোদ্ধো ও শরণার্থী ক্যাম্প।এখন স্কুল ও বসতবাড়ি)

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD