১৯৮৮ সাল। আমরা তিন বন্ধু- হানিফ সংকেত, আমি এবং আব্দুল মান্নান রানা বিটিভির ৩১৬ নং রুমের সামনের স্পেসে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ সেখানে হাজির হলেন হুমায়ুন ফরীদি। কথার মাঝে ঢুকে তিনি আবেগবশত আমাকে বলে ফেললেন, ‘তুমি কোন পত্রিকার যেন?’ তার ‘তুমি’ সম্বোধন শুনে আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম।
অবস্থা বুঝে রানা বললো, ‘উনি আনন্দবিচিত্রায়।’ ‘ও আচ্ছা’ বলে ফরীদি হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত এগিয়ে দিলেন। জবাবে আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, ‘আপনিতো আমাকে চিনেনই না, অথচ তুমি করে বললেন। এটা আপনার কেমন শিক্ষা?’ আমি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু অবস্থা বুঝে হানিফ সংকেত আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, ‘দোস্ত থাক, ফরীদি ভাই আবেগবশত বলে ফেলেছে। কিন্তু ওর মনটা খুব ভালো।’
এর পরের সপ্তাহে একদিন হুমায়ুন ফরীদি এলেন আনন্দবিচিত্রা’র অফিসে। চিন্ময়দা তখন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক। তার সামনে আমি এবং আমার আরেক বন্ধু কাউসার খান বসা। ফরীদি রুমে ঢুকে আমাকে দেখে একটু সাই ফিল করলেন। কিন্তু চিন্ময়দাকে তিনি বললেন, ‘জহুর সাহেবকে আপনি কোত্থেকে কালেক্ট করেছেন?’ চিন্ময়দা জানতে চাইলেন, ‘কেন, কী হয়েছে?’ জবাবে ফরীদি বললেন, ‘কিছুই হয়নি দাদা। তবে উনার কাছ থেকে আমি একটা জিনিস শিখেছি, তা হলো- অপরিচিত কাউকে তুমি করে বলতে নেই। এটা উন্নত শিক্ষা নয়।’
শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককেই আমার অশিক্ষিত মনে হয়েছে। তবে এরপর ফরীদির সাথে আমি যতই মিশেছি ততই মনে হয়েছে তিনি সব সময় সবার কাছ থেকে শিখতে চাইতেন। আজ ২৯ মে সেই জ্ঞানপিপাসু ফরীদির ৬৯তম জন্মবার্ষিকী। তাকে শুভেচ্ছাঞ্জলি।
আহমেদ জহুর
কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
azohur2002@gmail.com
Leave a Reply