বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

নয়নাভিরাম হাকালুকি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর

নয়নাভিরাম হাকালুকি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর

নয়নাভিরাম হাকালুকি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর

নয়নাভিরাম হাকালুকি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর।

হাকালুকি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। আর বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ হাওর। হাকালুকি হাওরের ভৌগলিক অবস্থান বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা ও সিলেট জেলায় বিস্তৃত। এই হাওরের মোট আয়তন ১৮১১৫ হেক্টর।এর মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪৪০০ হেক্টর।


হাকালুকির ৫৫ ভাগ অবস্থান মৌলভীবাজার জেলায়। তারমধ্যে বড়লেখায় ৩০ ভাগ, জুড়ীতে ২০ ও কুলাউড়া উপজেলায় ১৫ ভাগ পড়েছে।


সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ২৫ ভাগ গোলাপগঞ্জ ও ২০ ভাগ বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিস্তৃত। সাগর শব্দ থেকে হাওর শব্দের উৎপত্তি বলে ধারন করা হয়। তবে হাকালুকি হাওরের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন প্রচলিত রয়েছে।


জনশ্রুতি আছে বহু বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি সম্প্রদায়ের দলপতি হাঙর শিং জঙ্গলপূর্ন কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ।


এলাকায় এমন ভাবে লুকিয়ে যায় যে কালক্রমে এই এলাকার নাম হয়ে যায় হাঙরলুকি। ধীরে ধীরে তা হাকালুকি তে রূপান্তরিত হয়।


আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’নামে এক রাজা ও তার রাজত্ব মাটির নীচে সম্পুর্ন তলিয়ে যায়।

কালক্রমে তলিয়ে যাওয়া এই নিম্নভূমির নাম হয় আকালুকি বা হাকালুকি। আরো প্রজলিত যে এক সময় বড়লেখার পশ্চিমাংশে ‘হেংকেল’ নামে একটি উপজাতি বাস করতো পরবর্তীতে এই হেংকেললুকি হাকালুকি নাম ধারন করে।


আরো প্রচলিত যে হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি এক সময় বসবাস করতো ‘কুকি নাগা’ নামক উপজাতিরা।তাদের নিজস্ব ভাষায় এই হাওরের নাম করন করা হয় হাকালুকি। যার অর্থ লুকানো সম্পদ।

নাম করন নিয়ে যত কাহিনীই প্রচলিত থাকুক এটা সত্যি যে হাকালুকি সত্যি লুকানো প্রকৃতিক সম্পদের ভান্ডার।


ভূতাত্ত্বিক ভাবে হাকালুকি হাওরের অবস্থান হলো উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। অবস্থান গত বৈশিষ্ট্যের কারনে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকিতে প্রায় প্রতিবছর বন্যা হয়।


২৪০ টি বিল আর ছোট বড় ১০টি নদী নিয়ে গঠিত এই বিশাল হাওর। নদীগুলোর মধ্যে কুশিয়ারা ও জুড়ী নদী প্রধান। যদিও বরমচালে প্রাপ্ত শিলালিপিতে জুড়ী নদীকে জুড়ী গাঙ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু
মাছের অভয়ারণ্য। এর মধ্যে আছে বোয়াল আইড় চিতল রুই পাবদা প্রভৃতি। হাকুালুকির বোয়াল পাবদার খ্যাতি রয়েছে দেশে বিদেশে। বর্ষাকালে হাকালুকি ধারন করে এক অনবদ্য রূপ।


শীতকালেও হাকালুকির দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতিক দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব।চারিদিকে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া বিস্তীর্ণ উঁচু ভূমি বিলের পানিতে প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করে অপূরূপ দৃশ্যের।সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের সময় হাওরের জলরাশির মধ্যে সূর্যের প্রতিচ্ছবি দারুন মনোমুগ্ধকর।

শীতকালে অতিথি পাখিদের কলতানে মুখর হয়ে উঠে হাকুালুকির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। দলবেঁধে আসতে থাকে নানা প্রজাতির পাখি।পাখি দেখতে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে হাকালুকি বিভিন্ন প্রান্তে।


বর্ষায় হাকালুকি ধারন করে এক অসাধারন রূপ।সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের ভীড় বাড়ছে সাম্প্রতিক কালে। ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া প্রান্ত থেকে আধুনিক নৌযনে করে ঘুরে দেখা যায় হাকুালুকির দিগন্ত অপার সৌন্দর্য। যা সত্যি অতুলনীয়। তাই সময় সুযোগ পেলে ঘুরে আসতে পারেন দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। অবশ্যই ভালো লাগবে।

মিলু কাসেম

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD