বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

রোকেয়ার সমাধিতে – মো. আহাদ

রোকেয়ার সমাধিতে – মো. আহাদ

রোকেয়ার সমাধিতে - মো. আহাদ

বাংলার নারী জাগরণের অগ্রপথিক বেগম রোকেয়া।সেই সময়ে উনি যে কাজ শুরু করেছিলেন তৎকালীন পুরুষ শাসিত সমাজ সেটা মেনে নিতে পারেনি কিন্তু উনার অদম্য কর্মশক্তির কাছে কোনো বাধা ই টিকতে পারেনি।স্বামী সাখাওয়াত হোসেন সাহের সমর্থন ছিল উনার কাজে। অনেকেই জানেন না যে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন পানিহাটিতে। তৎকালীন ধর্মীয় সমাজ বেগম রোকেয়াকে কোন কবরস্থানে কবরের অনুমতি দেয় নি।

কলকাতার কোনো কবরখানায় সমাহিত করা সম্ভব হয়নি তাকে, কেননা তিনি নারী হয়ে মুসলিম মেয়েদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন, নারীর অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, এবং রচনা করেছিলেন সাহিত্য। ভদ্রমহিলার নাম বেগম রোকেয়া।
তাহলে তার কবরটা কোথায়?
ঐতিহাসিক অমলেন্দু দে’র আবিষ্কার, সেটি রয়েছে কলকাতার উপকন্ঠে, সোদপুর পানিহাটিতে।

এক শনিবারের দুপুরে সবাই যখন ভাতঘুম দিচ্ছে, আমি আর Gautamদা রওনা দিলাম সোদপুর ফেরিঘাটের দিকে। তার আগে সামান্য পাত্তা লাগিয়ে জেনেছি কবরটা পানিহাটি গার্লস স্কুলের ভেতরে অবস্থিত। বিকেল তিনটেয় পৌঁছে দেখি স্কুল বন্ধ। ইয়া বড় একখান তালা ঝুলছে। মেয়েদের স্কুলের আশেপাশে দুটো চোয়াড়ে চেহারার লোককে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখলে, লোকে সন্দেহ করবেই। দিনকাল ভাল নয়। ওখানে এক ভদ্রলোক ঝালমুড়ির পসরা নিয়ে বসেছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করতে তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমাদের সাথে আসেন। যদি স্কুল প্রেসিডেন্টের অনুমতি নিয়ে তালা খুলে দেওয়া যায়। এক ফার্লঙ দূরে তেনার বাড়ি। গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম। অনুমতি মিলল। ভেতরে ঢুকলাম দুই মূর্তি।

একটা শ্বেতপাথরে বেদী। তার ওপর লেখা-
স্ত্রী শিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ
‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’কে এখানে সমাহিত করা হয়েছিল।
যেভাবে মাইকেল মধুসূদনের মরদেহের ওপর খৃষ্টান বা হিন্দু কারো দায় ছিলনা। তার দেহ কে কোথায় কবরস্থ করবে সে নিয়ে বিতর্ক তো ইতিহাস… সেভাবেই লোকচক্ষুর আড়ালে কোনো এক আবদুর রহমানের দেওয়া জমিতে, পানিহাটিতে গঙ্গার ধারে সমাহিত হলেন রোকেয়া।

আবদুর রহমান কে ছিলেন নিশ্চিত করে জানা যায়না। কেউ বলেন বেগম রোকেয়ার ছোটবোনের বর। কিন্তু তার বোন, হোমায়রা খাতুনের স্বামী তোফাজ্জ্বল হোসেন চৌধুরীর বাড়ি পূর্ববঙ্গে। (তাঁদের পুত্র আমীর হোসেন চৌধুরী নজরুল গবেষক ছিলেন। ইনি রোকেয়ার কাছে মানুষ। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা প্রতিরোধকালে শহীদ হন)
আবদুর রহমান বলে একজন জ্যোতির্ময়ী রোকেয়া নামে জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন, তাঁর সাথে রোকেয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ইনিও হতে পারেন। আবার এও হতে পারে রোকেয়ার কোনো কাজিনের স্বামী ছিলেন উক্ত আবদুর রহমান। মোট কথা তার একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য হয়… যিনি ঐ মহীয়সী নারীর জন্য বরাদ্দ করেছিলেন সাড়ে তিন হাত জমি।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি তাঁর কোন ছাত্রীকে বলেছিলেন “কবরে শুইয়া শুইয়াও যেন আমি মেয়েদের কলকোলাহল শুনতে পাই।”
সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছিল প্রায় এক দশক বাদে। ঠিক ঐ স্থানেই গড়ে উঠেছে একটি বালিকা বিদ্যালয়!! পানিহাটি বালিকা বিদ্যালয়। কি অসাধারণ সমাপতন।

কৃতজ্ঞতা- পিনাক ভট্টাচার্য

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD