মা মেয়ে ভিন্ন জাত
(আমার একমাত্র ছেলে, মেয়ে নেই তাই মা ছেলের ছবি দিলাম)
মা মেয়ে দুই জাত ফুফু ভাতিজি এক জাত। ছোটবেলায় কথাটার অর্থ বুঝতাম না। ভাবতাম কিরে মা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কাছের মানুষ যার সঙ্গে ভালোবাসার অন্য কোন মানুষের তুলনা হয়না সে কিনা আবার ভিন্ন জাতের ? আর ফুফু তার চেয়ে আপন একজাত এটা কিভাবে?
যখন বড় হলাম তখন বুঝলাম মা পরের মেয়ে অন্য ঘর থেকে আসে আর ফুফু যে ঘরে জন্ম নেয় সে আমার দাদার সন্তান আর আমি তার ভাইয়ের সন্তান ।এজন্য রক্তের সবটুকু বাবার মাধ্যমে ঢেলে দেয়া হয় যে কারণে রক্তের সম্পর্ক বা অধিকার বাবার ক্ষেত্রে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
মা আলাদা অন্য জায়গা থেকে এসেছে ভালো কথা বাস্তবে প্রমাণ পাওয়া যায় এরকম অনেক ঘটনা দেখি। এক এলাকায় খুবই বিলাস বহুল পরিবারে মা-মেয়ের বসবাস । মা-মেয়ে দুজনেই বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত।
ধনি বা কোটিপতি ঘরের কন্যা আধুনিকতার বদৌলতে মায়ের চেয়েও বেশী আধুনিক। বাবা অবশ্য খুব বেশি আলোচনায় আসে না ।
অন্তরালে থাকে যদিও বাবার যোগ্যতা দক্ষতা অভিজ্ঞতা নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন নেই ।তবুও কেমন করে যেন মেয়েটার বাবার চেয়ে মায়ের পরিচিতি সমাজে বেশি জনপ্রিয়তা বেশি প্রতিষ্ঠিত ।
সাধারণত আমরা এরকমই দেখি বর্তমান সময়ে মায়েরা আধুনিক বোরখা হিজাব পরে গাড়ি থেকে নামল সাথে জিন্স টি-শার্ট পরা মেয়ে ।
মায়ের জন্য পর্দা প্রযোজ্য মা মারা যাবে আখিরাতের ব্যাপার আছে হিসাব আছে মেয়ের জন্য হয়তো নেই। যদি এরকম হত মা মেয়ে একই রকম চলছে তাহলে হয়তো এই প্রসঙ্গ উঠত না । এখন আমি তো আর জানি না কেন তারা এরকম জীবন যাপন করে?
মায়ের জীবনযাপন একরকম মেয়েরা আরেকরকম মায়ের পরকালের জন্য পর্দা করতে হয় মেয়ের করতে হয় না । যাকগে সেটা ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ , তবে প্রতিবেশীদের সাধারণত একজন ভালো থাকলে আরেকজনের সহ্য হয় না, হিংসা হয় ।
তাই কিছু প্রতিপক্ষ লোক দাঁড়িয়ে যায় মা মেয়ের শত্রু হিসেবে, ঘাপটি মেরে থাকে ঝেপ বুঝে কোপ মারার। অপেক্ষা ভীষণ রকম কঠিন কাজ এত সহজ না এর জন্য অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়।
সবচেয়ে বড় কথা প্রতিবেশীদের কাছে ওই পরিমাণ দলিল-দস্তাবেজ প্রমাণাদি নেই যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে তাদেরকে হেনস্থা করবে কারণ প্রতিবেশীরাও যে দুধে ধোয়া তুলসী পাতা না।
প্রতিবেশীরা তাদের অন্যায়ের বিচার চায় ব্যাপারটা এমন না। তারা যদি অপরাধ করে থাকে তাদের সেই অপরাধের বিচার চাওয়ার মুখ প্রতিবেশীদের নেই। কারণ কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়ার একটা আশঙ্কা তাদের মধ্যে সবসময় কাজ করে।
তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছে কারণ এই প্রতিবেশীদের চাইতে দ্রুতগতিতে মা-মেয়ের উন্নতির দৃশ্যমান ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না। তারা মূলত স্বার্থের দ্বন্দ্বে শত্রু হয়ে যায়।
একসময় তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে যা হয় হবে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হবে এই চিন্তা করে চুপ করে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা যায় না, সুতরাং এর একটা বিহিত করতে হবে ।
নানান রকম জল্পনা কল্পনা শেষে প্রতিবেশীরা খুব কৌশলে প্রথমেই দেখা গেল যে কিছু অপরাধীকে নিয়ে একটা উদাহরণ তৈরি করার জন্য মা মেয়ের সামনে হাজির করল, সাবধান সতর্ক করে দেওয়ার জন্য ।
তারা সতর্ক হলো কি হলো না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার আগেই ভেতরে বলতেছে যে ,এই মা-মেয়ে আমাদের চোখের সামনে আমাদেরকে তর্জনী দেখাবে আমাদের চেয়ে উন্নত জীবন যাপন করবে তা কি করে হয়?
তখন তাদের মনে পড়ে অতীতের কথা যে আমরাই তো তাদেরকে তুলে ধরলাম মেলে ধরলাম তাহলে আমাদেরকে কর দিবে না পাত্তা দিবে না তাই কি হয়?
এই প্রতিযোগিতা অন্যায়ের প্রতিযোগিতা অসমতার প্রতিযোগিতা ।যে কোন কারনেই হোক তারা পরে আর সাত-পাচ না ভেবে মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ।এখন মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল যখন মেয়ের তো ভীষণ বিপদ ।একেবারে ঘোর অন্ধকার নেমে আসলো তার জীবনে ।
এই মা তখন বিপদে পড়ে গেল না পারছে মেয়েকে ছাড়তে না পারছে তার সঙ্গে থাকতে। আর মেয়ের বাবা তো খুবই চতুর কৌশুলী সে তো ধরি মাছ না ছুঁই পানি। অন্তরালের নায়ক বাবা ,পুরুষরা সাধারণত যা হয় জন্মগতভাবে কিছু সুবিধা আছে তাদের ,সেই সুবিধা ভোগ করতে চায় বাবা।
সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না মা ,ওই যে বললাম না ধরতে পারে না ছাড়তে পারে পরে মেয়েকে।কিছু একটা যদি বলা হয় কি করবেন আপনি ?
মেয়ের তো বিপদ তখন ওই যে শুরুতে বললাম ফুফু ভাতিজি এক জাত মা মেয়ে ভিন্ন জাত। এই তরিকা মাথায় নিয়ে মা উত্তর দিতে লাগলো আমি কি করবো আমি তো শুধু মা ,পেটে ধরেছি মেয়ের সাথে তো রক্তের সম্পর্ক নেই ।
এই কথাটা আবার প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা সইতে পারল না ,তারা একটা পক্ষ ভাবল মা-মেয়ে দুজনেরই শাস্তি পাওয়া উচিত মেয়ের বিপদের দিনে একজন মা এরকম করে কথা বলেন কিভাবে?
তারপর মাকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রতিবেশীদের মধ্যে আরেক পক্ষ উঠে-পড়ে লাগলো। কিন্তু মা তখন ওই যে তরিকা মা-মেয়ে ভিন্ন জাত বিপদের সময় তার আর কি করার আছে, সে তখন ঐ তরিকার উপর ভিত্তি করে নিজের চিন্তা করে ঘরে ফিরল।
মেয়েকে নির্বাসনে দিয়ে আর প্রকৃতির কাছে বিচার চাইলো সত্যিই যদি আমি ভালোবেসে থাকি আমার সন্তান আমার কাছে একদিন ফিরে আসবে ।এছাড়া তেমন কিছু করার নাই । কারণ মা তে নারী এর চেয়ে বেশি কি করতে পারে সে ?
তারপর যেটা হলো মেয়ের ফিরে আসার অপেক্ষা কিন্তু দূর থেকে আড়াল থেকে । আসলে আসবে, না আসলে না আসবে, কি করা যাবে !
প্রকৃতি তো স্বাধীনতা শক্তি-সামর্থ্য নারীকে দেয়নি। তাই যখন তখন নারী তার মত করে চলতে পারে না ।
নারীকে পুরুষের শক্তি সামর্থ্য ক্ষমতার দম্ভ এগুলোর উপর নির্ভর করে চলতে হয়। তাই নারীর স্বপ্ন সংসার যেকোনো সময় যেকোনো কারণে ভেঙে যেতে পারে।অর্থাৎ পুরুষ সবসময়ই চালকের আসনে ।
আর নারী তার নির্দেশনায় পরিচালনায় শুধু পারফর্ম করে। এই যে বিভাজন এর জন্য পুরুষকে দায়ী করবো কেন? কারণ প্রকৃতি পুরুষকেই শক্তি-সামর্থ্য দিয়েছে। নিজের ভালো পাগলেও বোঝে সুতরাং পুরুষ তার এই প্রাপ্তির অংশ নারীকে কেন দিবে?
নিজের ক্ষমতা হাতছাড়া করতে পুরুষ বলতে বুঝাতে চেয়েছি অন্যায়কারী অত্যাচারী শাসক যারা আর কিছু ভালো মানুষ যারা আছেন যারা নারীদের পাশে থেকেছেন ,নারীদেরকে সবসময়ই মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন তারা তো ব্যতিক্রম । তাদের প্রতি তো অবশ্যই সবসময় শুভকামনা থাকবে শ্রদ্ধা থাকবে।
প্রকৃতির কাছ থেকে পরাজয় গ্লানি ঘৃণা নিন্দা সবকিছু গ্রহণ করেই পৃথিবীতে এসেছে নারী । তাইতো শুনতে হয় মা মেয়ে দুই জাত এই তরিকা হিসেব করলে কেবলই আর্তনাদ আর আহাজারি হায় নারী!
(ছোট গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক যদি কারো সঙ্গে মিলে যায় আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। যদিও বাক্যটি মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন আজাইরা সিরিয়াল গুলোর মাধ্যমে থেকে শিখেছি।)
Leave a Reply