মাংকি ট্রায়াল,সমাজ বাস্তবতা ও একজন বিজ্ঞান সমালোচক আবু সাঈদ তুলু

রিপোর্টারের নাম / ৮০৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২
মাংকি ট্রায়াল


হাসনাইন সাজ্জাদী
।।
বিজ্ঞান নিয়ে বাঙালের ধারণা খুব সাদামাটা। বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান।তাহলে যেকোনো বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী মাত্রেই বিজ্ঞানী।ফলে বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় বক্তাই বিজ্ঞানী।তারা তাদের বক্তৃতায় তা বলেনও।পরীক্ষাগারে নিরূপিত সত্য যে বিজ্ঞান এবং পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা ও সৌরজগতের বাইরে যে বিজ্ঞানের কোনো উপাদান নিয়ে কথা বলা বা গবেষণা করা যে বিজ্ঞান নয় তা বিশেষ জ্ঞানের বিজ্ঞানীরা বুঝেন না।তাই ধর্মগ্রন্থ গুলোকে তারা বিজ্ঞান বলেন।যেখানে গণিত বিজ্ঞান কি না এর মিমাংসা এখনো শেষ হয়নি এবং আমার তৈরি কবিতাবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসাবে গ্রহণ করা হবে কি না তাও আলোচনা কেবল শুরু হয়েছে সেখানে ধর্মের বাড়াবাড়ি সব সময়ই ছিল।মাংকি ট্রায়াল নাটকের সমালোচনা লিখতে গিয়ে তাই মনে করিয়ে দিয়েছেন আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক সমালোচক আবু সাঈদ তুলু ভাই।বলেছেন-‘খ্রিষ্টান ধর্মযাজকরা প্রায় ষষ্ঠ থেকে ষোড়শ শতাব্দি পর্যন্ত ইউরোপীয় মানবজীবনকে নারকীয় করে তুলেছিল। স্বর্গের লোভ দেখিয়ে জীবনকে করেছিল অতিষ্ঠ অসহনীয়। নানা প্রেক্ষিতে সপ্তদশ শতকে দর্শন-জ্ঞান-বিজ্ঞান আলোকপ্রাপ্তির পরিক্রমায় রেনেসাঁ-সভ্যতা-বিপ্লবে পাল্টে যেতে থাকে সব। কিন্তু ধর্মযাজক খ্রিষ্টান আধ্যাত্মিক জঙ্গিগোষ্ঠী সর্বদাই মানুষের মৌলিক চিন্তার বিকাশকে করেছে রুদ্ধ।… তেমনি ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার এক প্রদেশের স্কুলের এক শিক্ষককে কাঠগড়ায় দাঁড় হতে হয়েছিল। ক্লাসে ডারউইনের বিবর্তনবাদ শেখানো ছিল তার অপরাধ। খ্রিষ্টানধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্বের বিপরীতে অনেকাংশে যার অবস্থান। শিক্ষকের বিচারের নামে চলে ধর্মীয় প্রহসন। তৎকালে প্রবর্তিত বাটলার এ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে কারাদণ্ড বা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করে। ইতিহাসে যা Scopes Monkey Trial নামে পরিচিত। বিবর্তনবাদের পক্ষে যা সাম্প্রতিক ডিসকোর্সও।… ষাট-সত্তরের দশকে যার খ্যাতি মার্কিন মুল্লুক থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল।

সম্প্রতি বাংলাদেশে মুক্তনীলের নির্দেশনায় বাতিঘর নাট্যদল সে বিতর্কনির্ভর আখ্যান ‘মাংকি ট্রায়াল’ শিরোনামে মঞ্চে এনেছে। ধর্মীয় অন্ধ গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে কীভাবে যুক্তিবাদ-মানবতাবাদের জয় হয় তা নাটকীয় আলেখ্যে দৃশ্য ও সংলাপের অনুপম গাঁথুনিতে তুলে ধরেছেন। টানটান উত্তেজনায় স্পিনোজা, লাইবনিস থেকে শুরু করে অতিসাম্প্রতিক দর্শন-বিজ্ঞান-আধুনিকতা, মানবতা ও যুক্তিবাদের প্রেক্ষিতে মানবজীবনের জয়লাভকেই প্রধান করে তুলেছেন। স্কুল শিক্ষকের একটি ছোট্ট বিচারকে কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সাম্যবাদী দার্শনিক মঞ্চসংলাপ। বুদ্ধিবাদ ও যুক্তিবাদের বিনোদননির্ভর আবহে দু’ঘন্টা সময় অত্যন্ত আনন্দে কাটলো আজ। অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মেধাদীপ্ত পরিবেশনা। ধন্যবাদ মুক্তনীল।’…
আমাদের বিজ্ঞান লেখক নাই।বিজ্ঞান পাঠক নাই,বিজ্ঞান সমালোচক নাই এমনকি ক্লাসে বিজ্ঞান পড়ালে শিক্ষককে জেলে যেতে হয় এমন দেশে মাংকি ট্রায়াল এবং মুক্তনীল নাট্যদল সমাজ বাস্ততায় ব্যতিক্রম ও আশীর্বাদ।আর শিক্ষাবিদ,লেখক, সমালোচক ও কবি আবু সাঈদ তুলু ভাই একজন বিজ্ঞান যোদ্ধা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD