শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৯ অপরাহ্ন

বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধানে -মুশফিক বরাত

বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধানে -মুশফিক বরাত

বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধানে আমরা ক’জন 

মুশফিক বরাত

আমরা বেনজিন রিং সোসাইটির সদস্যরা অনেকদিন যাবত সংগঠন চালিয়ে আসছি। আমাদের অন্যতম মিশন হলো বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান। কারণ বাসযোগ্য গ্রহ না হলে মানবজাতি হুমকির মুখে পড়বে। এমনকি মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।

সেজন্যে আমরাও উদ্যোগী হয়েছি। আমাদের সাত দফা দাবির মধ্যে প্রথম দাবিটি হলো- “মহাকাশ গবেষণাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবার জন্য সরকারি বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।” এজন্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের বাংলাদেশের সরকারি বাজেটে মহাকাশ বিজ্ঞানের জন্য কমপক্ষে ৫% বরাদ্দ দিতে হবে। তবেই বাসযোগ্য অন্য একটি গ্রহ সন্ধানে সাফল্যের দেখা মিলতে পারে।


এখানে বলে রাখা ভালো যে, এখন পর্যন্ত মানুষের বাসযোগ্য গ্রহ হলো একটি- সেটা পৃথিবী। অন্য গ্রহের সন্ধানে যুগ যুগ ধরে চলছে প্রচেষ্টা। গত ৬ জানুয়ারি (২০২০) সোমবার নাসা বলেছে, পৃথিবীর অদূরেই একটি বাসযোগ্য গ্রহের খোঁজ পাওয়া গেছে।


নতুন গ্রহটি পৃথিবী থেকে মাত্র ১০০ আলোকবর্ষ দূরে। পৃথিবীর আকৃতির এই গ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টিওআই৭০০বি’। ‘টিওআই৭০০’ নামে একটি নক্ষত্রকে যা প্রদক্ষিণ করছে। আলোর গতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার। নাসার কৃত্রিম উপগ্রহ টেস (টিইএসএস) নতুন এই গ্রহ আবিষ্কার করেছে।

সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্বের বিবেচনায় ওই গ্রহটিরও একই অবস্থা তাই সেখানে তরল পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
অন্যদিকে এই প্রথমবার হাবল টেলিস্কোপ জল এবং বায়ুমন্ডলসহ বাসযোগ্য গ্রহ আবিষ্কার করলো।

এখানে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এই নতুন গ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে K2-18B। গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে আকারে বড় এবং এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর চেয়েও বেশি।


এই গ্রহের পরিবেশ পৃথিবীর মতো। আশা করা যায়, এই পাথুরে গ্রহে পানির বড় এবং গভীর উৎস রয়েছে। K2-18B পৃথিবী থেকে ১১০ আলোকবর্ষ দূরে লিও নক্ষত্রমন্ডলে রয়েছে। এটিই প্রথম গ্রহ যেখানে পানি ও বায়ুমন্ডল দুটোই রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, K2-18B গ্রহে উচ্চস্তরের বিকিরণ দেখা দিতে পারে। গ্রহটি পৃথিবী থেকে আট গুণ বেশি বড়। যার বায়ুমন্ডলে হাইড্রোজেন ও বায়ুমন্ডলও পাওয়া গিয়েছে। এর বাইরে গ্রহটিতে নাইট্রোজেন ও মিথেন থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।


এখানে উল্লেখ থাকে যে, এই গ্রহটি সম্বন্ধে প্রথম তথ্য ২০১৫ সালে নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ দিয়েছিল।


নতুন গ্রহ খোঁজার আগে জলবায়ু পরিবর্তন সম্বন্ধে আমরা জানবো। যা থেকে প্রতীয়মান হবে যে, আগামী ১০০০ বছরের মধ্যে ভয়ংকর বিপদ আসতে চলেছে। তাতে পৃথিবী নামক গ্রহটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলো শিল্পায়নে মনোযোগী হওয়ার কারণে শিল্পের প্রসার বাড়ছে। আর তেলের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভূ-গর্ভস্থ গ্যাস ও তেল আজ শেষের পথে। অথচ উষ্ণায়ন থেমে নেই বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর ৫৭ শতাংশ বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একজোট ও একমত হয়েছেন। গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে।

কোপেনহেগেন থেকে মাদ্রিদ সম্মেলন পর্যন্ত জলবায়ু নিয়ে সম্মেলন হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আমাদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে।

জাতিসংঘের সদর দফতরে আয়োজিত এক সম্মেলনে ১৭০টি দেশ প্যারিস সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর প্রদান করেছিল। তবে যা এখনো খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ। কাজে কাজেই, জলবায়ু পরিবর্তনকে আমলে নিলেও নতুন গ্রহ খোঁজা কতোটা জরুরী তা বুঝতে আর কারো বাকি নেই।


বিশেষ কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠী বা জাতি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়েছে সারা বিশ্বের মানুষ। গত ২০ বছরে এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মহাদেশেও।

বিগত ২০ বছরে পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারা যায় ৫ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হন্ডুরাস ও মিয়ানমার।

সহজে বলতে গেলে বলতে হয়, গ্রিনহাউস ইফেক্টের কারণে নয় বরং গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে সাম্প্রতিককালে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন গ্রিনহাউস ইফেক্ট সম্বন্ধে জানি। সূর্যের তাপ স্থল ও জলভাগস্থ সবকিছুসহ বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে।


এই উত্তপ্ত স্থান বা বস্তুগুলো যখন ঠান্ডা হয় তখন শোষিত তাপ বিকিরিত হয়ে প্রধানত অবলোহিত বা ইনফ্রারেড রশ্মি হিসেবে বায়ুমন্ডলে ফিরে আসে।

কিছু গ্যাসীয় উপাদান ও কণা পদার্থ আছে যেগুলো এই বিকিরিত তাপ শুষে নেয় ও ধারণ করে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুস্তর অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ারকে উষ্ণ করে তোলে। এই প্রক্রিয়াটি পৃথিবীকে উষ্ণ রাখে ও জীবজগতকে সুরক্ষিত রাখে। একেই বলে গ্রিনহাউস ইফেক্ট। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো হলো জলীয় বাষ্প, কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন ইত্যাদি। বর্তমানে ভূ-পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। যদি গ্রিনহাউস ইফেক্ট না থাকতো তবে ভূ-পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হতো হিমাঙ্কের ১৮ ডিগ্রি নিচে।


‘রস১২৮বি’ পৃথিবীর মতোই আরো একটি গ্রহ। গ্রহটি পৃথিবীর আকারের কাছাকাছি। এমনকি পৃষ্ঠ তাপমাত্রাও পৃথিবীর সমান হতে পারে। পৃথিবী যেমন ৩৬৫ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তেমনি এটি প্রতি ৯.৯ দিনে এর তারা ‘রস ১২৮’ কে একবার প্রদক্ষিণ করে।

এখানে তরল পানি থাকার সম্ভাবনা সবচে’ বেশি। ফলে প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনা আছে। পৃথিবীর চেয়ে মাত্র ১.৩৮ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়া সহ্য করতে হবে ‘রস ১২৮ বি’ তে। গ্রহটি আবিষ্কার করেছে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি। এটি আবিষ্কার করা হয়েছে হার্পসের (হাই একুরেসি ভেলোসিটি প্ল্যানেট সার্চার) সাহায্যে। এই ইউরোপিয়ান অবজারভেটরির কাজ হলো ‘দ্বিতীয় পৃথিবী’ খোঁজা।

‘রস ১২৮ বি’ পৃথিবী থেকে ১১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এর চেয়ে কাছে আরেকটি বাসযোগ্য গ্রহ রয়েছে ‘প্রক্সিমা বি’। তবে ৪.২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটির একটি সমস্যা রয়েছে।
আসুন আমরা সকলে বেনজিন রিং সোসাইটির এই নতুন গ্রহ খোঁজার কাজকে স্বাগত জানাই এবং আমাদের কার্যক্রমগুলোতে একাত্মতা ঘোষণা করি৷ 

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD