লিয়াকত হোসেন খোকন
অসময়ের সঙ্গী বই – আমি ছিলাম লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ার যুগের মানুষ – আমার শৈশব ও নব যৌবনে প্রায় প্রতিদিন বিকেলবেলা পিরোজপুরের লাইব্রেরিতে নানান ধরনের বই পড়ে সময় কাটত –
তখন পিরোজপুরের লাইব্রেরি ছিল রাজনীতিবিদ আফজাল মিঞার বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে রাস্তার দক্ষিণ পাশে।
পিরোজপুর কলেজে পড়ার সময়ে এবং পরবর্তীতে – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্স ও এমএ পড়াকালীন সময়েও লাইব্রেরির ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।
বই পড়ার উপকারিকা যে কত গভীর – কোনও পাঠক বই পড়া থেকে দূরে সরে থাকলে আবার নতুন করে বই পড়ার অভ্যাসে ফিরতে বাধ্য। করোনা আবহে ঘরবন্দি মানুষকে বইমুখী করার এই প্রয়াস খুবই সময়োপযোগী।
প্রমথ চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘ আমার মনে হয়, এদেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল – কলেজের চাইতে কিছু বেশি। ‘
প্রমথ চৌধুরী যে – সময়ে এই কথা বলেছিলেন তখন আজকের দিনের মতো ঘরে ঘরে কম্পিউটার ছিল না, বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের সাহায্যে বই পড়ার বিপুল সুযোগ তখন ছিল না, তাই বই পড়ার মূল জায়গা হিসেবে লাইব্রেরির কথা তিনি বলেছেন। আমাদের যুগেও স্কুল – কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে লাইব্রেরি ছিল বই পড়ার প্রধান মাধ্যম। তবে কম্পিউটারের এই যুগেও লাইব্রেরির গুরুত্ব কিন্তু কমেনি। প্রয়োজন লাইব্রেরির আরও সংস্কার করা, পরিষেবার মান আরও বাড়ানো।
লাইব্রেরি মানে একটি বই জমা নিয়ে অন্য একটি বই দেওয়া নয়, পাঠকদের চাহিদা মতো বইয়ের সন্ধান দেওয়া, পাঠকের রুচি, শিক্ষার মান জেনে ভাল লাগার বইয়ের সন্ধান দেওয়া, কোনও একটি বিষয় কোন বইয়ে পাওয়া যাবে তার সন্ধান দেওয়া।
এর জন্য প্রশিক্ষিত লাইব্রেরিয়ান রাখা দরকার। আমেরিকার মতো দেশে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার বাংলাদেশের থেকে কয়েক গুণ বেশি, সেখানেও লাইব্রেরির গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরিষেবা – যুক্ত উন্নত মানের লাইব্রেরি তৈরিও করা হয়েছে। ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী
সাড়া জাগানো একটি লাইব্রেরি তৈরি হয়েছে, যেখানে নিঃশব্দে বই পড়ার ঘর যেমন আছে, তেমনই আলোচনা করা, গল্প করার ঘর আছে, আছে ভিডিও দেখার, ভিডিও গেম খেলার ঘর, আছে লেসার প্রিন্টার, ৩ডি প্রিন্টার, যে কোনও তথ্য জানানোর জন্য আছেন প্রশিক্ষিত লাইব্রেরিয়ান।
Leave a Reply