বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

ডিপ্রেশন – আনিকা তাবাসসুম মুনা

ডিপ্রেশন – আনিকা তাবাসসুম মুনা

ডিপ্রেশন
আনিকা তাবাসসুম মুনা

ছোটবেলা থেকেই মনতাত্ত্বিক বিষয়গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি, পড়াশোনা করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। এই পড়াশোনাটা যদিও প্রাতিষ্ঠানিক নয় তবে নিজের এবং অন্যের অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষের মন এবং চিন্তাচেতনা নিয়ে গবেষণা করার প্রবল আগ্রহ রয়েছে।

এসব পর্যবেক্ষণের একটি হলো ডিপ্রেশন। প্রায় সববয়সী মানুষেরাই ডিপ্রশনের স্বীকার হন। সেটা তাদের বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়, ভিন্ন ভিন্ন ধরণে দেখা যায়। তবে আমার বয়সী অর্থাৎ কৈশোরে যারা রয়েছে বা আমার থেকে জুনিয়র, সিনিয়রদের মধ্যে ডিপ্রশন জিনিসটা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়। হবে নাই বা কেন?

তাদেরকে আজকের এই জটিল, প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যে যেতে হয়।
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের প্রবল আশার সীমাহীন চাপে যখন তরুণ মনগুলো আশানুরূপ ফল পায় না, সমাজ এবং পরিবারের থেকে তিরস্কৃত হয় তখন ডিপ্রেশন নামক জালে নিজেদের জীবনের বৃহৎ সম্ভাবনাগুলোকে বদ্ধ করে ফেলে।

কারো কারো ক্ষেত্রে ডিপ্রশনের কারণ হয় তাদের আবেগ। তারা প্রবল আবেগীয় হয় কিন্তু বাস্তবতায় আবেগের কোনো জায়গা নেই। কিন্তু ঐ হতচ্ছাড়াগুলো তো আবার আবেগের ভান্ডার।


তারা ঐ বাস্তবতা আর আবেগের যুদ্ধে নিজেদের পিষ্ঠ করে ফেলে। এদের মুখে সবসময় চওড়া হাসি লেগে থাকে। আপনি এর সাথে বসে, খেয়ে, পড়েও বুঝতে পারবেন না এর ভেতরে কী পরিমাণ ঝড় বয়ে চলছে। এটা কেবল ঐ গন্ডমূর্খই জানে।

ডিপ্রেশন এর  কারণের লিস্টে ১ নং এ থাকবে নিজের মনের কথাগুলো কাউকে বলতে না পারাটা। যেগুলো বুকে শক্ত পাথর হয়ে চাপ দিতে থাকে। ডিপ্রেশনে ভুগা ব্যক্তি যদি কারো সাথে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারতো তাহলে ডিপ্রশন হয়তো ৯০ ভাগই কমে যেত। নিরবে শুনাটাই যেখানে অনেক কিছু সেখানে অনুভূতিগুলো ‘পাত্তা’ পায় না, বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক বলে।

আমার দৃষ্টিতে একজন বিষণ্নতায় ভুগা ব্যক্তি কিছু করতে পারেন নিজেকে এর থেকে বের করে আনতে। যেমনঃ
-যদি আপনার আপনজনদের মধ্যে এমন কেউ থাকে যে আপনার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবে তাহলে আপনি খুবই ভাগ্যবান। তার সাথে কথা বলে নিজের মনকে হালকা করতে পারেন।

  • যাকে মনের কথা খুলে বলছেন সে মানুষটা যদি এর সুযোগ গ্রহণ করে বা ভবিষ্যতে আপনাকে এ নিয়ে কথা শুনায় তাহলে তার কাছে কথাগুলো বলার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।
  • কারো কাছে বিষয়গুলো বলতে না পারলে ডায়রি লিখতে পারেন। মন কিছুটা হালকা হবে।
  • নিজেকে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। যাতে কাজের মাধ্যমে আপনার সময়গুলো কেটে যায়।
  • নিজের বিষণ্নতাকে দূর্বলতা হিসেবে না দেখে নিজের শক্তি বানাতে পারেন। নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা বানাতে পারেন।
  • সামাজিক কাজগুলোতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলুন। আপনি যত সাধারণ মানুষের কাছে যাবেন, তাদের কষ্ট-সংগ্রাম দেখবেন তত নিজের কষ্টগুলোকে ঠুনকো মনে হবে। বুঝতে পারবেন, তাদের তুলনায় আপনি কত ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
  • ডিপ্রশন দূর করতে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে আমি মনে করি তা হলো ধর্মীয় কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা। সে আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। যত নিজেকে স্রষ্টার কাছাকাছি নিয়ে আসবেন, তত বেশি প্রশান্তি অনুভব করবেন।

আপনার মনে হবে, কেউ আপনাকে না বুঝলেও এমন একজন আছেন যিনি আপনাকে সবসময় বুঝেন। আপনি তার প্রতি যতই অকৃতজ্ঞ হন, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন।

আপনার আশেপাশের মানুষগুলো যখন আপনাকে সাহায্য করছে না তখন নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে হবে। দিনশেষে নিজের জন্য নিজেকেই লড়তে হবে। এটাই বাস্তবতা।

বিঃদ্রঃ ছোট মানুষ হিসেবে অনেক কিছু বলে ফেললাম। সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। শুধুমাত্র নিজের চিন্তাভাবনাগুলো তুলে ধরাই আমার লক্ষ্য।

প্রতীকী ছবি- নারী নেত্রী ইসমত আরা আঁচল

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD