শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

জুড়ী’র সাংবাদিকতার প্রাথমিক ইতিহাস।। হাসনাইন সাজ্জাদী

জুড়ী’র সাংবাদিকতার প্রাথমিক ইতিহাস।। হাসনাইন সাজ্জাদী

জুড়ী

আজ জেনে ভাল লাগছে যে,জুড়ী উপজেলা শহরে সংখ্যায় ২৫০ জনের কাছাকাছি সাংবাদিক এবং দু’টি প্রেসক্লাব,একটির আবার তিনটি শাখা সহ একাধিক সাংবাদিক সংগঠন তাতে তৎপর।কর্মাধিকার সংরক্ষণের জন্য সংগঠন ও প্রেসক্লাবের গুরুত্ব অপরিসীম।তবে অনৈক্য থেকে অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠা পেলে তা হবে আত্মঘাতী।

আমি বিশ্বাস করতে চাই, সাংবাদিকেরা যদি পেশাগতভাবে সংগঠিত হন এবং নীতিগতভাবে অন্যায়ের সাথে আপোষহীন থাকতে পারেন,তবে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে জুড়ী উপজেলা মাইলফলক হতে পারবে।

আমি স্মরণ করতে চাই জুড়ীর সাংবাদিকতার উন্মেষকালকে,যখন জুড়ীর প্রথম সাংবাদিক হিসাবে প্রয়াত রফিক আহমদ ছিলেন।তিনি সিলেটের হিমাংসু ধর সম্পাদিত সাপ্তাহিক যুগভেরীর জুড়ী প্রতিনিধি ছিলেন।একই সাথে মৌলভীবাজার থেকে এডভোকেট হারুনূর রশীদ সম্পাদিত সাপ্তাহিক মুক্তকথার জুড়ী প্রতিনিধি।তবে কুলাউড়া উপজেলা ইত্তেফাক প্রতিনিধি বাবু সুশীল সেনগুপ্ত মহাশয় এবং মৌলভীবাজার ইত্তেফাক প্রতিনিধি এবং মুক্তকথা সম্পাদক হারুন ভাই জুড়ীতে এসে রফিক ভাইকে নিয়ে ঘুরতেন এবং আমরা তাকেও ইত্তেফাক প্রতিনিধি হিসাবে মনে করতাম।

জুড়ীর দ্বিতীয় সাংবাদিক কন্দর্প দে।তাকে কেউ সাংবাদিক হিসাবে চিনতো না।তার বাবার পান বিড়ির দোকান ছিল জুড়ী বাস স্ট্যান্ডে এবং সেখানে সিলেট থেকে আব্দুল ওয়াহেদ খান সম্পাদিত ও নতুন প্রকাশিত সিলেট সমাচার বিক্রয় হতো।জূড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী শিশির দে ও তপন দে’র তিনি বড়ো ভাই কন্দর্প দে। আমার সহপাঠী হওয়াতে তাদের দোকানে আমার যাতায়াত ছিল।অবসরে শিশির ও তপন কেউ সে দোকানে বসতো।আমি সিলেট সমাচার কিনে নিতাম।

আমি একসম সিলেট সমাচারের জুড়ী প্রতিনিধি হবার চেষ্টা করি।তখন জানতে পারি কন্দর্প দে এ কাগজের জুড়ী প্রতিনিধি।তিনি জায়ফরনগর উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে সেখানে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং জুড়ীর তৃতীয় সাংবাদিক হিসাবে আমার নাম সিলেট সমাচার প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত হয়।চতুর্থ সাংবাদিক হিসাবে ঢাকার মীর্জা খবির সম্পাদিত সাপ্তাহিক জয়যাত্রা ও মাহবুব আলম চাষী সাপ্তাহিক আমার দেশের কার্ড লাভ করেন বর্তমান বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম শামীম।পঞ্চম সাংবাদিক হলেন সাপ্তাহিক জালালাবাদ এর জুড়ী প্রতিনিধি প্রয়াত অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (নেওয়ার মিয়া)।বেশ কিছু দিন আমরা একসাথে সাংবাদিকতা করি।

তারপর জালালাবাদ, জয়যাত্রা ও আমারদেশ প্রতিনিধি হিসাবে আমি সমাচারের সাথে কাজ করি।আসে সমাচার হাউজ থেকে দৈনিক জালালাবাদী।জালালাবাদীর জুড়ী প্রতিনিধি ছাড়াও এ সময় সাপ্তাহিক মুক্তকথার বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ হই।তখন বিনা বেতনের এ চাকরি করার অন্য কেউ না থাকাতে একজন অনেক কাগজে কাজ করতে অসুবিধা হয়নি।তারপর কার্যকরী সম্পাদক হিসাবে আমি মুক্তকথার মৌলভীবাজার কার্যালয়ে যোগদান করি।


জুড়ী সাংবাদিকতার ইতিহাসের পঞ্চস্তম্ভ বলা যায় আমাদেরকে।সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের ২বছর ছিল আমার জুড়ীতে সাংবাদিকতার কাল।এ সময় আমরা সততা ও এলাকার সুখ দুঃখকে তুলে ধরার জন্যেই সাংবাদিকতা করেছি।


মৌলভীবাজার ছেড়ে একসময় ঢাকায় চলে যাই এবং ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক খোঁজখবর এবং মাসিক পূর্বাপর এর ডিক্লারেশন নিয়ে নিজে পত্রিকার মালিক হই।এর মধ্যে জুড়ীতে আস্তে আস্তে সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

আমার চাচাতো ছোট ভাই এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকায় আমার খোঁজখবর এ কিছু দিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে কাজ করে।তারপর জুড়ী এসে প্রেসক্লাব জুড়ী প্রতিষ্ঠা করে।অনেক দিন এ প্রেসক্লাব এককভাবে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দেয়।জুড়ী উপজেলা হবার পর জুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাব নামে আরেকটি প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

পরে আবার দু’টোকে সমন্বয় করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাইমিন সালহ’র আগ্রহে জুড়ী প্রেসক্লাব নামে এক করা হয়।কিন্তু একসময় এ ঐক্য আর টিকে থাকেনি। এ হলো জুড়ী সাংবাদিকতার প্রাথমিক ইতিহাস।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD