গদ্যে চলিতরীতির প্রবর্তক
আহমেদ জহুর
প্রমথ চৌধুরীর লেখা আমাদের স্কুল-পাঠ্য ছিল। লেখার শিরোনাম মনে নেই। তবে এটা স্পষ্ট মনে আছে যে, ব্যাখ্যা লিখতে গিয়ে তাঁর নাম ভুলক্রমে প্রথম চৌধুরী লিখেছিলাম। বাংলার টিচার মতিউর রহমান এজন্য এক নম্বর কেটে নিয়েছিলেন। এরপর থেকে আর কখনো আমার প্রমথ চৌধুরীর নাম লিখতে ভুল হয়নি। আজ ৭ আগস্ট প্রমথ চৌধুরীর ১৫৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিলো পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্রমথ চৌধুরী ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম কবি, প্রাবন্ধিক ও লেখক। তিনি বাংলা গদ্যে চলিতরীতির প্রবর্তক। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন। ‘সবুজপত্র’ পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে চলিতরীতি প্রবর্তন করেন। গল্পকার ও সনেটকার হিসেবেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এর মধ্যে জগত্তারিণী পদক ছিল উল্লেখযোগ্য।
প্রমথের শিক্ষাজীবন ছিল অসাধারণ কৃতিত্বপূর্ণ। তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রাস ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফএ পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৮৯ সালে দর্শন সাস্ত্রে বিএ(অনার্স) এবং ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। পরে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডন যান। লন্ডন থেকে ফিরে এসে ব্যারিস্টারি পেশায় যোগদান না করে তিনি কিছুকাল ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন এবং পরে সাহিত্য-চর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৪১ সালে তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী পদক’ দেওয়া হয় ।
প্রমথ চৌধুরী কিছুদিন কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে পড়ান । তিনি ঠাকুর এস্টেটের ম্যানেজারও ছিলেন। এছাড়াও মাসিক সবুজপত্র ও বিশ্বভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাইঝি জামাই। লেখক আশুতোষ চৌধুরী প্রমথ চৌধুরীর অগ্রজ।
প্রমথ চৌধুরী অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- #প্রবন্ধগ্রন্থ : তেল-নুন-লকড়ী (১৯০৬), বীরবলের, হালখাতা (১৯১৬), নানাকথা (১৯১৯), আমাদের শিক্ষা (১৯২০), রায়তের কথা (১৯১৯), নানাচর্চা (১৯৩২), প্রবন্ধ সংগ্রহ(১৯৫২-১ম খণ্ড ও ১৯৫৩- ২য় খণ্ড)। #গল্পগ্রন্থ : চার-ইয়ারী কথা (১৯১৬), আহুতি (১৯১৯), নীললোহিত (১৯৪১), অনুকথা সপ্তক, ঘোষালে ত্রিকথা। #কাব্যগ্রন্থ : সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৩), পদচারণ (১৯১৯)।
© আহমেদ জহুর
কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
০১। সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত
বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান। ফেব্রুয়ারি,
১৯৯৭। পৃষ্ঠা- ২২৯।
০২। উইকিপিডিয়া।
Leave a Reply