বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

গণসাহিত্য ভাবনা – হাসনাইন সাজ্জাদী

গণসাহিত্য ভাবনা – হাসনাইন সাজ্জাদী

গণসাহিত্য ভাবনা - হাসনাইন সাজ্জাদী

গণসাহিত্য ভাবনা
হাসনাইন সাজ্জাদী


সাহিত্য একটি মননশীল অনুষঙ্গ।সাহিত্য শিল্পের নির্যাস।তা যে ভাষাতে লিখিত কিংবা মুখে মুখে রচিত হোক না কেন?
কবিতা,গল্প,উপন্যাস,প্রবন্ধ,কথিকা,নাটীকা,গীতিকা সব মিলিয়েই সাহিত্য।সাহিত্য কার জন্যে?এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চই সহজ।সবাই বলবে-সাহিত্য জনগণের জন্য।জনগণের জন্য সাহিত্য এবং জনগণ নিয়ে যে সাহিত্য তাকে গণসাহিত্য বলে।


জনগণ মানবমণ্ডলীকে বুঝায়।জনগণ ভূখণ্ডের অধিবাসী হতে পারে,ছিটমহলের অধিবাসী হতে পারে আবার উদ্বাস্তুও হতে পারে।কিন্তু তাদের মৌলিক কিছু কিছু অধিকার এবং বিজ্ঞানের অবদানকে ব্যবহারের অধিকার প্রায় সবার সমান।


ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে ছিটমহলে অঞ্চল ভেদে ভিন্ন নিয়ম এবং উদ্বাস্তুদের ভোটাধিকার থাকে না।সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।এটাও সাহিত্যের ভিন্ন অনুষঙ্গ যদিও।


মৌলিক ক্ষত্রে বিজ্ঞানের সুবিধা সম্বলিত অধিকার যখন সাহিত্যকে অবলম্বন করবে তখন তা গণসাহিত্য হবে।


মানুষের জীবনযাপন প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞান হবে মুখ্য।মানবসমাজে বিজ্ঞানমনস্কতা বাস্তব সত্য।জীবন থেকে সাহিত্য নয়,সাহিত্য থেকে জীবন গঠিত হবে।সাহিত্যকে তখন বিজ্ঞান স্নাত হবে।সাহিত্য একটি শিল্প।

কলাকৈবল্যবাদ নির্ভর জীবন আদর্শ জীবন।বিজ্ঞানই সাহিত্যের কলাকৈবল্যবাদ।বিজ্ঞানের ব্যাপক অনুসরণকে তখনই শিল্প বলে আমরা ধরে নেই।তখন বিজ্ঞান শিল্প এবং বিজ্ঞান জীবন [science is art & science is life] হয়ে উঠে।


জীবন বিজ্ঞানকে অনুসরণ করে,তাই শিল্প[ art]মানে বিজ্ঞানের অনুকরণের আরেক নাম।


বিজ্ঞান জীবনাচারকে শুধু প্রভাবিতই নয়,নিয়ন্ত্রণ করবে।বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে গ্রহণ করা ছাড়া জীবন এখন অচল।অরণ্য জনপদে বিজ্ঞানহীন যে জীবন তাকে জীবন না বলে প্রাণ বলবো।তাদেরকে আমরা অন্যান্য প্রাণীর সাথে তুলনা করবো কিন্তু সভ্য প্রাণী নিশ্চয়ই বলবো না।


বিজ্ঞানের দান গ্রহণ ব্যতীত সভ্য হওয়া যায় না।তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, শিল্প কেন জীবন থেকে হবে।অনেকেই বলেন; জীবন থেকে শিল্প থেকে।আমি বলতে চাই; পরিকল্পিতভাবে মানুষকে তার অধিকার দেয়াই বিজ্ঞানসম্মত জীবনাচার প্রদান করা।

এটা থেকে বঞ্চিত করতেই বলা হয় জীবন থেকে শিল্প।আর্ট ফ্রম লাইফ বা লাইফ ফর আর্ট [art from life or life for art কিংবা art for art] ও আর্ট ফর আর্ট একটি ভাঁওতাবাজি। মানুষকে ঠকানোর জন্য তা বলা হয়ে থাকে।এ জন্য লেনিন বলেছেন-‘যারা জীবন থেকে শিল্প বলে তারা ভণ্ড।পুঁজিবাদের দালাল।’


তলস্তয় বলেছেন; মানুষের আবেগই আর্ট।এবার আসুন জেনে নেই মানুষের আবেহ কী? জঙ্গণের মনের আকাঙ্ক্ষাই মানুষের আবেগ।মানুষ অসুখে ওষুধ চায়,বাঁচার মত বাঁচতে চায়, সুখী জীবন গড়তে চায়।তাই মানুষ বিজ্ঞানের সকল সুবিধা ভোগ করতে চায়।তাহলে আর বিজ্ঞানের বাইরে শিল্প থাকে?থাকে না।


বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখন বিজ্ঞান আশ্রিত এবং বিজ্ঞান শাসিত।বিজ্ঞান সর্বজনীন।ধর্ম,বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে বিজ্ঞানের সুবিধা যেমন মানুষ গ্রহণ করে,ধর্মও সবাইকে সমান শাসন করে।করোনাভাইরাসে যেমন ধর্ম,বর্ণ ও গোত্র বাচবিচার করে নাই,চিকিৎসা বিজ্ঞানও কাউকে ছাড় দেয় নাই।

কোভিড নাইনটিনে সবাইকে কোয়ারেন্টিন মানতে হয়েছে।অসুস্থদের আইসোলেশনে থাকতে হয়েছে।মাস্ক ও সেনিটাইজার সবাইকেই ব্যবহার করতে হয়েছে।মসজিদ,মন্দির,গীর্জা,প্যাগোডা কিংবা গোয়া,কাশি,মক্ষা,মদিনা,ভ্যাটিকান সিটি কাউকেই করনাভাইরাস ছাড় দেয়নি।


জন আকাঙ্ক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত উপায় খুঁজে নিয়ে সবাই কোয়ারেন্টিন ওআইসোলেশনে শ্রেণিভেদে গেছে।

স্কুল,কলে্জ,বিশ্ববিদ্যালয়,অফিস,আদালত,কল-কারখানা সব স্থানের দলবদ্ধতাকে সংঘবিহীন করে বিজ্ঞান তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।প্রমাণ হয়েছে বিজ্ঞানই সর্বসেবা।বাঁচতে হলে বিজ্ঞান মানতে হবে।বিজ্ঞানই মানবজাতির কল্যাণে কজ করে চলেছে।

বিজ্ঞানের এই উপকারিতাই শিল্প।শিল্প অনুসৃত হবে সাহিত্যে এবং সাহিয়ত্য পড়ে মানুষ হবে উপকৃত।তাই জীবন থেকে সাহিত্য নয়,সাহিত্য থেকে জীবন হবে।এমন সাহিত্য লিখতে হবে যা মানবসভ্যতাকে সুরক্ষা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ঢাকা-১০/০৬/২০২০১

 

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD