দুই ভুবন বিখ্যাত সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্টের এক অশুভ প্রতিযোগিতার ফসল আজকের এই ‘’ইয়েলো সাংবাদিকতা’’।
আমাদের সাংবাদিকরা যখন নীতিকথা বলেন তখন হাসি চেপে রাখতে হয়। যুগ যুগ ধরে সাংবাদিকতাকে কলুষিত করেছেন যারা, তারাই এ জগতকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। দেশে ফেয়ার জার্নালিজম বা স্বচ্ছ সাংবাদিকতার নজির খুঁজতে গেলে আপনাকে খুব বেশি অতীত হাতড়াতে হবেনা।
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা একবারই তুমুলভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিলেন শহীদ সাংবাদিক নাজিমুদ্দিনের ছোটকন্যা শারমিন রীমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
ডাক্তার দম্পতি মেহেরুন্নেসা আবুল কাসেমের খুনি পুত্র মুনির। খুকু নামের এক মধ্যবয়সী নারীর সাথে নোংরা প্রেম উপাখ্যান ছিল দুশ্চরিত্র মুনিরের। শারমিন রীমার সাথে বিয়ে হয়েছিল মুনির হোসেনের।
বিয়ের পরপরই রীমা মুনির খুকুর নোংরা সম্পর্কের টের পান। তিনি কাঁটা হয়ে দাঁড়ান মুনির খুকুর অবৈধ সম্পর্কের মাঝে।
বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৮৯ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামে বেড়ানো শেষে সড়কপথে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকার অদুরে নারায়ণগঞ্জের মিজমিজি গ্রামে স্ত্রী রীমাকে ধারালো ছুরি ও ভাঙা হুইস্কির বোতল দিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যা করে ফেলে আসে পাষণ্ড মুনির। সেই ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে হিলিয়ে দিয়েছিল।
শহীদ সাংবাদিকের কন্যা হত্যায় ভূকম্প হয়েছিল দেশে। সাংবাদিকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে রীমা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়। মুনিরের ফাঁসি কার্যকর হয় হত্যাকান্ডের চার বছর তিন মাস পর ১৯৯৩ সালের ২৭ জুলাই। ডাক্তার মেহেরুন্নেসা ছেলেকে বাঁচানোর জন্য কোটি কোটি টাকা নিয়ে ঘুরেছেন।
কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সেদিন সততার কাছে হেরে যায় কোটি কোটি টাকার বান্ডিল। এটাই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একমাত্র ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী আন্দোলন।
আর কোনো উদাহরণ নেই। এরপর আমরা দেখেছি সাংবাদিকরা কিভাবে টাকার কাছে ক্ষমতার কাছে তাঁদের সততা নিষ্ঠা বিবেককে পাইকারি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। দেশে বহু প্রথিতযশা সাংবাদিক আছেন কিন্তু তাদেরকে সৎ বলবার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাইনা। এতই সস্তা হয়ে গেছে সাংবাদিকতা।
আরো পড়ুনঃ কোভিড ও পুঁজিবাদ – দেবব্রত দেবরায়
আমি তাদেরকে জাতির বিবেক বলতে রাজি নই। দেশে কোনো ঘটনা ঘটলে তারা বিভক্ত হয়ে যান। সাংবাদিকরা যখন সহকর্মী হত্যার বিচার চান না, তাদেরকে আমি পাষণ্ড বলি।
সহকর্মী খুনের ঘটনায় ইনারা অটিজমে আক্রান্ত হন। অসৎ কোটিপতিদের তোয়াজ করে চলেন। মুনিয়া হত্যার বিষয়ে মাথাওয়ালা সাংবাদিকরা নিশ্চুপ থেকেছেন। বসুন্ধরার কুলাঙ্গার রাজপূত্রের বিরুদ্ধে টুঁশব্দ করার ক্ষমতা এসব অটিস্টিক সাংবাদিকদের নেই। এদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের পালিত চাকর আছেন কয়েকজন।
নীতি বিবর্জিত সাংবাদিক কূলের আদম সুরত দেখলে ঘেন্না হয়। সাংবাদিকতা করে লাখপতি কোটিপতি হওয়া অসম্ভব। খুশির বিষয় হল দেশের অনেক সাংবাদিক “পেইড এজেন্ট” হবার সুবাদে গাড়ি বাড়ি ফ্ল্যাটের মালিক বনে গেছেন। সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ ব্যক্তি বিশেষের পকেটে ঢুকে গেছেন।
এককালের জাতির বিবেক বর্তমানে ইনকিউবেটরে আছেন।
(নিউইয়র্ক থেকেঃ Mili Sultana)
Leave a Reply