শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন

চিঠিকাব্য ১,-ফেরদাউসী কুঈন

চিঠিকাব্য ১,-ফেরদাউসী কুঈন

চিঠি কাব্য-১

শ্রেষ্ঠ জ্যেতিষ্মান ফেরদাউসী কুইন

ভীষণভাবে বিস্মিত হতে পছন্দ করি। অবাক হতে পছন্দ করি তবে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক সেই সাথে এটাও সত্যি খুব বেশি ভালোবাসা নিতে পারি না আবার আমার সাথে উদাসীনতাও নিতে পারি না দুটোই তেতো এবং অসহ্য বোধ হয়। তবে হ্যাঁ যেটা নেয়া যায়, সেটার মধ্যে কমনীয়তা আছে, ভব্যতা আছে দুর্ভেদ্যতা আছে, উন্মাদনা আছে, বাক্য গঠনে নতুনত্ব আছে, অভাবনীয় শব্দের জাদু আছে। কথার ভেতরে চমৎকার একটা ভ্রমণ আছে অথচ সেই ভ্রমণে ক্লান্তি নেই ক্লেদ নেই। অনুসন্ধিৎসু মন অনাবাদী শুষ্কজমি উর্বর দেখতে চেয়েছে যে খনন করে জল সিঞ্চন করে সবুজের ঢেউ দোলাতে পারবে কিন্তু সব থাকবে অনুচ্চারিত।

অবারিত সবুজে দাঁড়িয়ে তুমি কতটা সচল, কতটা বিমূর্ত ভীষণ জানতে ইচ্ছে করেছে, দেখতে ইচ্ছে করেছে। তবে শব্দ চয়ন ও শরীরের ভাষা হয়ত কখনই বলবে না দুলতে চেয়েছি দোলাতে চেয়েছি। তবে সাইকোলোজিক্যাল ও বাইলোজিক্যাল বিষয়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইনের ছাত্রী হয়েও একাডেমিকভাবে মেলাতে পারিনি, থিউরি বলছিলো গবেষণার ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত এবং অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এই প্রজেক্টটি শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছার সমূহ সম্ভাবনা আছে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা, ভিন্ন সুর বলতে গেলে চরম বৈপরীত্য ।

নির্মল, স্নিগ্ধ মুগ্ধতার ভেতর দিয়ে যখন মানুষ পথ চলে তখন অতি কথনে আবেগের আর্দ্রতায় বিস্ফোরিত হতে পারে দু’একটি শব্দ-না দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দীর্ঘ হ্রস্ব কথনে কোন শব্দ মানবিক অনুভূতির সবচেয়ে গাঢ় স্পর্শকাতর জায়গায় এক ফোঁটাও আঁচড় পড়েনি, কিংবা দমকা বাতাস হয়ে উদ্বেলিত করেনি; আর তাই, কল্পলোকের মানবী হয়ে ভ্রমণ তৃষ্ণার্ত মন অভিনব যাত্রায় পথে বেড়িয়েছে দ্বিধাহীন চিত্তে নিঃসঙ্কোচে সকল কাঁকর উপেক্ষা করে।

ইচ্ছে করেই হোক, অনিচ্ছে করেই হোক, বুঝেই হোক না বুঝেই হোক, ভালোবেসেই হোক আর ভালো না বেসেই হোক, খেলা করেই হোক, খেলা না করেই হোক আঁকাবাঁকা মেঠোপথ,অলি-গলি পথ মাড়িয়ে এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় করে নির্দোষ চুম্বক আকর্ষণে পথের পার্শ্বে দাঁড়ানো। চলতি হাওয়ার পন্থি হয়ে উঠে গেছি হাইওয়ে।

সম্মোহিত অনলে পুড়তে পুড়তে তৃষ্ণার্ত আবেগে পিপাশায় কাতর হয়ে পৌঁছে গেলাম নদীর ধারে। নদীর জল কেটে কেটে সাঁই সাঁই করে ছুটছি। মনে হচ্ছে পড়ে যাচ্ছি, ডুবে যাচ্ছি, তলিয়ে যাচ্ছি। তবে এ পড়ে যাওয়া পতন নয়, এ পড়ে যাওয়া স্বাভাবিকতা থেকে বিচ্যুতি নয়,এ পড়ে যাওয়া উত্থান। জগতের রূঢ়তা থেকে মানুষের ভেতরের ভেঙ্গে পড়া সম্পর্কের কাঠামো থেকে, অনিচ্ছাকৃত বাঁধনকে আগলে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা থেকে নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো বের করে আনার নির্মল আনন্দ উল্লাস।

দূরে সবুজ গাঁ, নদীর বুকে ঢেউ। সত্যি কি নদীর বুকে ঢেউ? নদীও নারী একাকার হয়ে মিশে থাকে। দুটোই, কেঁপে ওঠে দুলে উঠে অনুকূল বাতাসের উন্মাদনায়। যা কাঁপিয়ে দেয়, ভাসিয়ে দেয়, ভাসাতে দেয়।

আমার ডান পাশে জীবন্ত সত্ত্বা হয়ে তুমি, আর আমার বুকের বাম পাশে আমার হৃদপিণ্ড। কম্পিত হৃদপিণ্ডের উচ্চারিত শব্দ কি জানাতে চায়, বোঝাতে চায় বুঝতে পারি না! এ তেমনি ঘুমের ভেতর ঘন কুয়াশায় তীব্র শীত উপেক্ষা করে বাতিঘরের দিকে ছুটে যাওয়া। কি ভয়ংকর বেপরোয়া বিধ্বংসী অনুভবের জগৎ। মানুষ কি সব অনুভূতির অনুবাদ করতে পারে? হয়ত পারে কিংবা পারে না।

মানুষ প্রথমত ব্যক্তিকেন্দ্রিক তারপর সামগ্রিক। সমগ্র করে ভাবার আগে সে নিজের করে ভাবে। সবকিছু আমার,আমার এবং আমার তারপর আমাদের তারপর সকলের। অযাচিতভাবে আমার ভেতর আমার আমার শব্দটি বেশ স্পষ্ট হয়ে বসবাস করছে। আমি কি সঙ্কুচিত চিন্তা করছি? না, তবে এ সঙ্কোচন বন্দিত্বের নয়, মুক্তির নয়, দায়িত্বের নয়, কর্তব্যের নয় শুধুই হৃদিক সুতরাং ভয় নেই হারানোর, ভয় নেই হারাবার। এ এক অন্যরকম আধার।

যাই হোক সামনে মেঘমেদুর জলরাশি। দূরে সবুজের হাতছানি। দু’চোখ দূরের সবুজ পেরিয়ে আরো দূরে আরো দূরে ঘন গাঢ় অরণ্য পথে ঢুকে যাচ্ছে। এত গাঢ় ঘন অরণ্য চোখের আলো ক্ষীণ হতে হতে অন্ধ হয়ে যাই, আচমকা আমার আরেক জোড়া চোখ খুলে যায়। আমি সব দেখতে পাই। ঘন গাঢ় বনের বুনোগন্ধমাখা ফুল যদি ফণাতোলা সাপ হয়ে খোঁপায় গুজে থাকে তবুও বাধা গেলোনা ভেতরকে। মন শুধু ছুটছে ছুটছে অজানিত অদেখা গন্তব্যে, আর তাই রূপান্তর হতে থাকি, নিজেকে ছেড়ে দিতে থাকি, তুলোর মতো হালকা হতে থাকি, সাদা মেঘ হয়ে ভাসতে থাকি।

অতঃপর নিজের বসানো কোর্ট মার্শালের রায় সাব্যস্ত হয়;যাও এগিয়ে যাও,প্রকৃতির কাছে ছেড়ে দাও, মেলে দাও, মিলিয়ে যাও।

এই প্রকৃতি মানুষকে নির্মল করেছে, নির্মম করেছে, সভ্য করেছে, অসভ্য করেছে, বর্বর করেছে, দস্যু করেছে আবার এই প্রকৃতি মানুষকে বড় করেছে, উদার করেছে, মহৎ করেছে, মহান করেছে, সেই সাথে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।

আমি এখন প্রকৃতির কন্যা আর তুমি বিস্ময়ক নাবিক। বাতাস যে দিকে নিয়ে যাবে যাবো;উল্টো বাতাসে, উল্টো স্রোতে যুদ্ধ নয়! তোমার স্রোতে সাঁতার শিখবো বলে, সাঁতার কাটবো বলে, তোমার বাতাসে অভাবিতভাবে এলোচুল ওড়াবো বলে ইচ্ছে করে পথ হারিয়ে পথে নেমেছি। নাইবা থাকলো পথের শেষ থাক না ছড়ানো পাথর। হোক না ক্ষতি, যে ক্ষতি আমি নিয়েছি মেনে। যে বিষ করেছি পান। এতো বিষ নয়, অম্লমধু। বিস্মিত, চমকিত। জ্বলে ওঠে মঙ্গলপ্রদীপ। মঙ্গলের জল, কাদা, মাটি, বায়ু গায়ে মেখে স্নাত হয় শুদ্ধ হয়। মঙ্গলের চাঁদের আলোর দ্যুতিতে পূর্ণ হয় ।

ছোট ছোট দরজা ভেদ করে আলোআঁধারির খেলা আর প্রতি মুহূর্তের মোহনীয় মনোমুগ্ধকর আলোতে ভিজতে থাকে নতুন গ্রহের নতুন প্রাণ। প্রাণ প্রাচুর্যে টইটম্বুর সদ্য যাপিত প্রাণ।

পাখি ডাকে, পৃথিবীর শেকড়ের টানে প্রত্যাবর্তন, অনিচ্ছা নির্বাসন। এ যেন বুক পকেটে জোনাকী পোকা নিয়ে নিত্য বসবাস।
জ্বলছে আর নিভছে, নিভছে আর জ্বলছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নিরন্তর এ জ্বলা এবং জ্বালা!!

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD