কবিতার সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। কারণ আমি নিজ জ্ঞান চৈতন্যে কবিতাকে আলিঙ্গন করতে শিখেছি। তাই কবিতা আমার কাছে-কারো নির্দিষ্ট একক দৃষ্টিতে সংজ্ঞায়িক হতে দায়বদ্ধ হওযার মতো কিছু নয়। আমার কাছে কবিতা হলো- কারো ভাবনা উপলদ্ধি থেকে কলমের মাধ্যমে লিখিত বা মৌখিক ‘শব্দ-বাক্যের’ স্পস্ট কণ্ঠে কথা বলা। কবির ভাষাতেই কবিতাকে কথা বলতে হয়। যে কবিতা কথা বলে না, স্পষ্ট স্বর তুলে না, সে কবিতা মূক-বধির। বাঁঝা।
কবিতায় শব্দ, আমার কাছে পাশে শুয়ে থাকা প্রেমিকের মতো! যখন তখন ইচ্ছে হলেই খেলতে পারি তার সাথে। কখনো শব্দপ্রেমিকের চুলে বিলি কাটি, কখনো চুল ছিঁড়ে শব্দপ্রেমিককে ভালবাসি, কখনো তাকে যন্ত্রণায় কাতর করি। শব্দ আমার কাছে প্রেমিকের মন ভাঙ্গার মতো, হতাশা পেয়ে বসলেই যাকে ক্ষতবিক্ষত করা যায়, আবার সোনাঝরা রোদ অধর ছুঁয়ে গেলেই যাকে সুনীল আকাশের মতো বুকে ধারণ করা যায। শব্দ আমাকে ভাঙে না, আমি শব্দকে ভাঙি-গড়ি ইচ্ছেমতো। জবরদস্তি নয়, প্রয়োজনে প্রণয়ে লিপ্ত হই, তারপর চৈতন্যের গভীরে ছায়া বিস্তার করে শব্দের বংশবৃদ্ধি করি।
একটি কবিতা, যার শব্দদের আমি কথা বলতে শুনি-
অকবিতা
কাকন রেজা
————
১
জানি লিখতে পারি না, কবিতা দূর কা বাত
লিখা নয়, হয় তার সাথে অপার্থিব সংঘাত
২
জানি লেখাতে থাকে যৌনতা
তবু কি তার ধ্যান ভাঙে কিংবা মৌনতা
৩
হয় না কিছুই, না কবিতা, না প্রেম
তার বুদ্ধিমত্তা কৃত্রিম সম্প্রতি তা জানলেম
৪
কিবোর্ড অচল পড়ে থাকে, সচল আঙুল
বিভ্রান্ত মনিটর লিখে চলে তার অহঙ্কার ও ভুল
৫
কবিতা লিখি না, লিখি যাপিত জীবন, তাকে
যে আমায় শত্রু ভেবে রাখে।
সবাই যে কবিতায় শব্দদের কথা বলতে শুনবেন, তাও নয়। তাই হয়তো উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছেন,
“সূক্ষ্ম উন্মত্ত ঘূর্ণয়নে কবির চোখ, স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে তাকায়, আবার পৃথিবী থেকে স্বর্গে তাকায়। কবির কলম অজানা জিনিসের রূপগুলিকে কল্পনার কাঠামো হিসাবে আকারে পরিণত করে এবং প্রতিটি জিনিসকে একটি অবস্থান এবং নাম দেয়।”
Leave a Reply